৮ ঘন্টা ডিউটিসহ সাপ্তাহিক দুদিন ছুটির দাবীতে অনড় রেল কর্মচারীরা!


মোহাম্মদ ফোরকান ৩১ ডিসেম্বর, ২০২০ ১১:৫০ : পূর্বাহ্ণ

পহেলা জানুয়ারি ২০২১ ইংরেজি হইতে কন্টিনিউয়াস ক্যাটাগরির কর্মচারীদের মত সকাল ৯টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ডিউটি ও সাপ্তাহিক শুক্রবার-শনিবার বন্ধ ভোগ করবেন বলে আল্টিমেটাম দিয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ে সংকেত এসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় কমিটি।

তারা জানান, ব্রিটিশ আমলের কিছু ত্রুটিপূর্ণ আইন এখনো রয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ের কয়েকটি বিভাগে। বিদ্যমান এসব নিয়মের কারণে চরম কষ্টে দিনযাপন করছেন রেলওয়ের সংকেত বিভাগের কর্মচারীরা। সুষ্ট ও নিরাপদ ট্রেন চলাচলে সংকেত বিভাগ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখলেও এই বিভাগের মাঠ পর্যায়ের ৩য় ও ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারীরা আছেন বছরের পর বছর চরম বিপাকে।

তারা জানান, প্রতিটি স্টেশনে ট্রেন পরিচালনার জন্য ৩/৪ জন স্টেশন মাস্টার ও পয়েন্টসম্যান থাকলেও সংকেত রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য মাত্র ১ জন মেইনটেইনার সিগন্যাল ও ১ জন সিগন্যাল খালাসি দ্বারা রক্ষণাবেক্ষণ কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে দীর্ঘদিন। মাঝে মধ্য আবার ২/৩ স্টেশনের দায়িত্ব একজন মেইনটেইনার সিগন্যালকে দেওয়া হয়। যার কারণে তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে বলে জানান একাদিক রেল কর্মচারী।

জানা যায়, বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রতিটি বিভাগের কর্মচারীদের ডিউটি ক্যাটাগরি বা ডিউটি আওয়ার নির্ধারিত থাকলেও সংকেত বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মচারীদের কোন ডিউটি আওয়ার নির্ধারন করা নেই। যার কারণে একজন এম এস (মেইনটেইনার সিগন্যাল) ও সিগন্যাল খালাসি ২৪ ঘন্টা চলমান ৩৬৫ দিন ডিউটি করে আসছে। যার মধ্যে শুধুমাত্র ২০ দিন সিএল ও ১০ দিন সিসিএল ছুটি।

কর্মচারীরা জানান, ব্যাপারটা অস্বাভাবিক ও অবিশ্বাসযোগ্য হলেও আমরা সংকেত বিভাগের কর্মচারীরা বছরের পর বছর এমন অমানবিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছি। আমরা এ বিষয়ে বার বার প্রশাসনের দ্বারস্ত হলেও কোন সুরাহা মিলেনি। যার কারণে আমরা বাংলাদেশ সিগন্যাল এসোসিয়েশনের ব্যানারে ৫৫২ জন কর্মচারী মামলা করতে বাধ্য হয়েছি।

তারা আরো জানান, দীর্ঘদিন মামলা চলার পর মহামান্য হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ উক্ত কর্ম ব্যাবস্থাকে অবৈধ ঘোষণা করে এবং কর্মঘন্টা ও কর্ম ক্যাটাগরি নির্ধারণ করে দেওয়ার জন্য রায় প্রদান করেন। যার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ রেলওয়ে সংকেত বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মচারীদের কন্টিনিউয়াস ক্যাটাগরিতে ৮ ঘন্টা ডিউটি নির্ধারণ করে দেন আদালত।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) কর্মচারীদদের দাবী-দাওয়ার হলফনামা জমা দেন আদালতে, তাতে তিননি উল্লেখ করেন গত ১৫ অক্টোবর ২০২০ হইতে সংকেত বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মচারীরা কন্টিনিউয়াস ক্যাটাগরির সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন। তিনি কাগজে কলমে আদালতে হলফনামা জমা দিলেও বাস্তবে তা ভিন্ন বলে জানান একাদিক কর্মচারী। এবং পূর্বের ন্যায় কোন প্রকার কর্মঘন্টা নির্ধারণ ও সাপ্তাহিক কোন বন্ধ দেয়নি। এতে করে সংক্ষেত বিভাগের কর্মচারীদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্ঠি হয়েছে।

এ বিষয়ে কমিটির সাধারণ সম্পাদক এম এম ইলিয়াছের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা কোন আল্টিমেটাম দি নাই, আমরা মহামান্য আদালত ও ডিজি মহোদয় এর ঘোষিত কন্টিনিউয়াস ক্যাটাগরি কর্মচারীর মত ৮ ঘন্টা ডিউটি ও সাপ্তাহিক দুদিন ছুটি ভোগ করবো। এটা বাস্তবায়ন হলে আমরা আল্টিমেটাম দেওয়ার কোন প্রশ্নই উঠে না।

এ বিষয়ে সংকেত এসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় কমিটির চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক ও শ্রমিকলীগ নেতা রাশেদুল ইসলাম মিথুনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা কোন প্রকার আন্দোলন বা আল্টিমেটামের দিকে যাবো না, আমাদের স্যাররা আমাদের শ্রমিকদের দিকে একটু সুনজর দিলেই হবে।

এ বিষয়ে জানার প্রধান সংকেত কর্মকর্তা মিজানুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সংকেত বিভাগের কর্মচারীরা ৮ ঘন্টা ডিউটি ও সাপ্তাহিক দুদিন ছুটি ভোগ করার বিষয়ে আমাদের চিঠি দিয়েছে। তারা ১ তারিখ থেকে তাদের রুলস অনুযায়ী ৮ ঘন্টা ডিউটি ও সাপ্তাহিক দুদিন ছুটি ভোগ করবে। এ বিষয়ে আমার করার কিছু নাই।

সকালের-সময়/এমএফ

আরো সংবাদ