যমুনা অয়েলে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা শ্রমিকলীগ নেতার!


নিজস্ব প্রতিবেদক ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১:৫৪ : অপরাহ্ণ

রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড ১৯৭৫ সালের ১২ মার্চ কোম্পানি আইন ১৯১৩ এর অধীনে যৌথ মালিকানাধীন প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে যৌথ স্টক কোম্পানি ও ফার্মের রেজিস্ট্রারের কাছে নিবন্ধিত হয়। পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত এই অয়েল কোম্পানির পরিচালন কার্যক্রমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন ২০১৮ সালে কর্পোরেট গভর্ন্যান্স কোড বাস্তবায়ন করে। এতে প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি তৈরি হয়।

কিন্তু—যমুনা অয়েল কোম্পানির কিছু আওয়ামীপন্থি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখনো এই সেক্টরে অরাজকতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানা যায়, স্বৈরাচারের দোসর এক শ্রমিকলীগ নেতা ও তার সাঙ্গুপাঙ্গ নিয়ে তেল সেক্টর নিয়ন্ত্রণ নিতে মারিয়া হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে তিনি নিয়োগ-বদলিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কোম্পানির নতুন এমডির ওপর প্রভাব খাটানোর পাশাপাশি কোম্পানির শ্রমিক সংগঠন ‘সিবিএ’ দখলে নিতে উঠেপড়ে লেগেছে।

অভিযোগ উঠেছে, বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতার নেতৃত্ব দিচ্ছেন কুতুব উদ্দিন হোসেন নামের এক সিবিএ শ্রমিকলীগ নেতা। তিনি রাতারাতি খোলস পাল্টিয়ে হয়ে গেছেন বিএনপি-জামায়াত। বর্তমানে তিনি যমুনার পতেঙ্গা টার্মিনালে গোপনীয় সহকারী হিসাবে কর্মরত আছেন। তার বিরুদ্ধে সরকার পতনের পর রাঙ্গুনিয়া থানায় ২টি ও পাঁচলাইশ থানায় ১টি মামলা দায়ের হয়েছে।

জানা যায়, যমুনা অয়েল কোম্পানির ব্যবসার লভ্যাংশের ৫ শতাংশ টাকা আলাদা করে রাখা হয় শ্রমিক সংগঠন সিবিএ’র জন্য। এ ৫ শতাংশের মোট যে টাকা আসে, এর ১০ শতাংশ শ্রমিক কল্যাণ ফান্ডে জমা দেওয়া হয়। ৮০ শতাংশ টাকা প্রতিবছর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে সমভাবে বণ্টন করা হয়। বাকি ১০ শতাংশ বিনিয়োগ করা হয়। বিনিয়োগের এ টাকা থাকে ট্রাস্টের ফান্ডে। অবসরে যাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী বা শ্রমিকদের এ টাকা হিস্যা অনুযায়ী ফেরত দেওয়া হয়। বিদ্যমান শ্রম আইন অনুযায়ী এটি করা হয়। বর্তমানে প্রায় চারশ শ্রমিক-কর্মচারীর ৬০ কোটি টাকার মতো কোম্পানিতে বিনিয়োগ আছে বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যমুনা অয়েলের এক কর্মচারী জানায়, ১০ শতাংশ বিনিয়োগের যে টাকা তা শ্রমিক-কর্মচারীরা ফেরতের দাবি তুলেছেন। একই সঙ্গে নতুন করে বিনিয়োগ না করার পক্ষে সবাই একমত হয়েছেন। যমুনার ট্রাস্টি বোর্ড তা ফেরত দিতে সম্মত না হওয়ায় শ্রম আদালতে মামলা করেন যমুনা অয়েল কোম্পানির সিবিএ-এর সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ এয়াকুব। আদালত বাদীর পক্ষে রায় দেন। রায় অনুযায়ী বিনিয়োগের টাকা ফেরত দিতে যমুনার ট্রাস্টি বোর্ডের চার সদস্য একমত হন। নিয়ম অনুযায়ী ট্রাস্টি বোর্ডের সুপারিশের পর কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) চূড়ান্ত মতামতের ভিত্তিতে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা। ট্রাস্টি বোর্ডের এ সুপারিশ বর্তমানে এমডির দপ্তরে রয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, কুতুব উদ্দিন হোসেনের নেতৃত্বাধীন শ্রমিকলীগের কয়েকজন বিগত সময়ে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নওফেল ও বন্দর-পতেঙ্গা আসনের সংসদ-সদস্য এম এ লতিফের প্রভাব খাটিয়ে মীমাংসার পর্যায়ে থাকা একটি ইস্যু নিয়ে যমুনার সাবেক এমডিকে নানাভাবে হেনস্তা করার চেষ্টা করেছেন। সরকার পতনের পর নবনিযুক্ত এমডির দপ্তরে গিয়ে তারা কয়েকজন নিজেদের প্রধান অফিসে বদলির দাবিতে চাপ প্রয়োগ করেন।

মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) পতেঙ্গায় যমুনার টার্মিনাল অফিসে পিএমকে ঘেরাও করেন। প্রধান কার্যালয়ে সিবিএ অফিস দখলেরও পাঁয়তারা করছেন তারা। সরকার পতনের আগে তারা নওফেল ও সংসদ-সদস্য এম এ লতিফের কথা বলে দাপট দেখালেও বর্তমানে খোলস পালটে নিজেদের বিএনপির লোক পরিচয় দিচ্ছেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোসাদ্দেক আলী ফালুকে ফুল দেওয়ার ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে নিজেদের বিএনপি প্রমাণের চেষ্টা করছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কুতুব উদ্দিন হোসেনকে চট্টগ্রাম অফিস থেকে ২০১১ সালে খুলনায় বদলি করা হলে তিনি অনুসারী ও সাঙ্গোপাঙ্গদের নিয়ে বিক্ষোভের নামে অরাজকতা করেন। শ্রমিক ইউনিয়নের অফিস ভাঙচুর করেন। এ কারণে তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় তার এক বছরের ইনক্রিমেন্ট বন্ধ করা হয়।

যমুনা অয়েল কোম্পানি সিবিএ-এর সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ এয়াকুব বলেন, জীবন-জীবিকার ব্যয়নির্বাহ কঠিন হয়ে পড়ায় শ্রমিক-কর্মচারীরা তাদের জমানো টাকা ফেরত চান। একই সঙ্গে নতুন করে আর বিনিয়োগ না করার পক্ষে মত দেন। বর্তমানে ফান্ডের ৬০ কোটি টাকা ভাগ করা হলে প্রত্যেকে ১২-১৩ লাখ টাকা করে পাবেন।

এ বিষয়ে কুতুব উদ্দিন হোসেন বলেন, আমি কখনোই শ্রমিকলীগ করিনি। ৮৪ সাল থেকে জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। এমপি লতিফ কিংবা নওফেলের সঙ্গে ছবি আছে ঠিকই, সেগুলো কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচির ছবি নয়। তবে ফালুর সঙ্গে ছবি তুলেছি। এর মানে এ নয় আমি বিএনপি।

যমুনার শ্রমিক সংগঠন সিবিএকে রাজনীতিকীকরণ ও শ্রমিক লীগের অন্তর্ভুক্ত করেছেন সাধারণ সম্পাদক এয়াকুব। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিনিয়োগের ৮০-৯০ কোটি টাকার কোনো হদিস নেই। আদালতের রায় হওয়ার পরও টাকা ফেরতে গড়িমসি করায় আমরা প্রতিবাদ করছি। এখানে তেল সেক্টর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার অভিযোগ সত্য নয়।

এসএস/এমএফ

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ