চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) একেএম ফজলুল্লাহকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে পদত্যাগের দাবিতে সংস্থাটি ঘেরাও করেছে সচেতন নাগরিক সমাজ। তারা ওয়াসা ভবনের সিঁড়ি দিয়ে দুই তলায় অবস্থিত এমডির দপ্তরের দিকে উঠতে চাইলে এমডির সমর্থকদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের হাতাহাতি হয়। এ সময় উত্তেজনা দেখা দিলে সেনাবাহিনী এসে দুই পক্ষের মাঝখানে অবস্থান নেন।
মঙ্গলবার (৩ সেপ্টম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এই ঘটনার শুরু হয়। এখন আন্দোলনকারীরা গেটের বাইরে এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভেতরে স্লোগান দিচ্ছেন। মাঝখানে সেনাবাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন।
এর আগে বেঁধে দেওয়া ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ না করায় চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডি এ কে এম ফজলুল্লাহকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে লাগাতার আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়। ‘সচেতন নাগরিক সমাজ’-এর ব্যানারে ডাকা এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ১২টা থেকে ওয়াসা ভবনের সামনে জড়ো হন আন্দোলনকারীরা। তারা সেখানে অবস্থান নিয়ে ফজলুল্লাহকে দ্রুত পদত্যাগ করতে বলেন।
জানা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে টানা ৬ দফায় ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে চট্টগ্রাম ওয়াসার গুরুত্বপূর্ণ পদটি দখলে রেখেছেন প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ। ওয়াসার প্রতিটি ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে কয়েক হাজার কোটি টাকা ভাগ-ভাটোয়ারা ও বিদেশে পাচারের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এসব অপরাধের কারণে তাকে এমডি পদ থেকে পদত্যাগ ও শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেছে বৈষম্যবিরোধী সাধারণ নাগরিক সমাজ। ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে ‘নিজ উদ্যোগে পদত্যাগ না করলে হেনস্তার শিকার হবে’ বলেও এমডিকে হুঁশিয়ারি দেন। এ সময় ‘দফা এক, দাবি এক, এমডির পদত্যাগ’ স্লোগান দেন তারা।
রবিবার (১ সেপ্টেম্বর) বেলা ১২টার দিকে চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডি কার্যালয়ে এ বিক্ষোভ করে তারা। একই সঙ্গে পদত্যাগের পাশাপাশি ১৭ দফা দাবিও উত্থাপন করেন সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ভোক্তাদের জাতীয় সংগঠন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন এবং চট্টগ্রাম নগর কমিটির নেতৃবৃন্দ।
প্রসঙ্গত, ১৯৬৮ সালে ওয়াসার সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগ পান। পরে নির্বাহী প্রকৌশলী পদে পূর্ণ মেয়াদে দায়িত্ব পালন শেষে ১৯৯৮ সালে অবসর নেন। চাকরি জীবনে অনিয়মে জড়িয়ে হয়েছিলেন বহিষ্কার। পরবর্তীতে একটি কো-অপারেটিভ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হয়ে জড়ান অর্থ আত্মসাতে। দুই দফায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাভোগ করেন।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ওয়াসার বোর্ড চেয়ারম্যান হিসাবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান। এরপর ২০১১ সাল থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবে খাটিয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসা বোর্ড গঠন করে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) পদ তৈরি হলে প্রথম দফায় তিন মাসের জন্য এমডির দায়িত্ব পান তিনি। পরে পাঁচ দফায় পুনর্নিয়োগে গত ১৩ বছর ধরে এ দায়িত্ব পালন করেছেন এ কে এম ফজলুল্লাহ।
সর্বশেষ ২০২০ সালের অক্টোবরে পুনঃনিয়োগ পাওয়ার পর হাসান আলী নামে এক গ্রাহক পুনঃনিয়োগ চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করেছিলেন। ওয়াসার চেয়ারম্যান হিসেবে একবার ও এমডি হিসেবে ৬ষ্ঠ বারের মত দায়িত্ব পান তিনি।
এসএস/এমএফ