সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা এক টাকাও পরিশোধ না করে চট্টগ্রামের একটি ডকইয়ার্ড থেকে দুটো জাহাজ কেড়ে নেন। এর দাম প্রায় ৭৪ কোটি টাকা। ঘটনাটি প্রায় সাড়ে তিন বছর আগের।
এ ঘটনায় সাবেক মন্ত্রী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন চট্টগ্রামের এফএমসি গ্রুপের এক কর্মকর্তা। মামলায় অভিযোগ করা হয়, এফএমসি গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এফএমসি ডকইয়ার্ড থেকে নির্মাণ বিল পরিশোধ না করেই ক্ষমতার জোরে একটি ফিশিং জাহাজ ডেলিভারি নেয় সাবেক মন্ত্রীর পরিবার।
এছাড়া একই পদ্ধতিতে আরেকটি কনটেইনার জাহাজ নিয়ে নেন। শেষেরটির ডেলিভারি দিতে সম্মত না হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারীদের মারধর, অফিস ভাঙচুর ও প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানকে অস্ত্র ঠেকিয়ে স্ট্যাম্প ও প্যাডে স্বাক্ষর নেওয়ার অভিযোগ করা হয়। তারপর তাদের হয়রানি করা হয়।
মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় মামলাটি দায়ের করেন গ্রুপটির হেড ক্লার্ক ফিরোজ আহমদ। মামলায় সাতজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাত ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করে পাঁচলাইশ থানার এসআই কামরুজ্জামান খান গণমাধ্যমকে বলেন, তদন্ত করে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- হাছান মাহমুদের স্ত্রী নুরান ফাতিমা, ছোট ভাই খালেদ মাহমুদ ও এরশাদ মাহমুদ, সাবেক মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী এমরুল করিম রাশেদ, তাদের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান দ্য বিসমিল্লাহ মেরিন সার্ভিসেস লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার সৈয়দ নুর উদ্দীন ও প্রতিষ্ঠানটির হিসাব বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ এরাদুল হক।
প্রতিষ্ঠানটির কমকর্তারা জানান, একটি কনটেইনার ও একটি ফিশিং জাহাজ নির্মাণের জন্য হাছান মাহমুদ ও তাঁর স্ত্রীর মালিকানাধীন দ্য বিসমিল্লাহ মেরিন সার্ভিসেসের সঙ্গে এফএমসি ডকইয়ার্ডের চুক্তি হয়। হাছান মাহমুদ ও তাঁর স্ত্রী কোনো টাকা না দিয়েই ২৪ কোটি টাকা দামের ফিশিং জাহাজ ডেলিভারি নিয়ে যান।
৫০ কোটি টাকা দামের কনটেইনার জাহাজটিও কোনো টাকা না দিয়েই ডেলিভারি দিতে চাপ দিতে থাকেন। তা নিয়ে এফএমসি গ্রুপের চেয়ারম্যানের সঙ্গে তাদের মতবিরোধ তৈরি হয়। পরে সেটিও নিয়ে নেন কোনো টাকা পরিশোধ ছাড়াই।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, বিরোধের জেরে ২০২১ সালের ৭ মার্চ হাছান মাহমুদ ও তাঁর স্ত্রীর নির্দেশে অন্য আসামিরা অস্ত্রসহ এসে এফএমসি কার্যালয়ে ঢোকার চেষ্টা করে। এ সময় তাদের একজন দারোয়ান বাধা দিলে তাকে মারধর ও শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করে।
পরে কার্যালয়ে ঢুকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আঘাত ও ভাঙচুর করে দুই লাখ টাকার ক্ষতি করে। এফএমসি গ্রুপের চেয়ারম্যান ইয়াছিন চৌধুরীর কার্যালয়ে ঢুকে অবৈধ অস্ত্র ঠেকিয়ে ১৫ থেকে ২০টি স্ট্যাম্প ও ডকইয়ার্ডের প্যাডে চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর নেয়। পরে তা ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানের অপূরণীয় ক্ষতি করে।
পরে মামলা করার প্রস্তুতির খবর পেয়ে আসামিরা এফএমসি গ্রুপের কর্মকর্তা ও চেয়ারম্যানকে অপহরণ, গুম, মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল খাটানো ও হত্যার হুমকি দেন বলে অভিযোগ করা হয়।
এসএস/এমএফ