কাজীর গরু কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই–প্রবাদটি দেশের চলমান পরিস্থিতির সঙ্গে অনেকটাই মানানসই। বিষয়টি রেলের এক কালো বিড়ালের, তবে আরেকটু পরিষ্কার করা যাক। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পাহাড়তলী ওয়ার্কশপের সাবেক বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক ও বর্তমানে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী (সিএমই) তাপস কুমার দাস। তার বর্তমান (সিএমই) দপ্তরে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে এপিপির আওতায় ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ পায়।
কিন্তু বরাদ্দের ৩৬ কোটি টাকা তাপস কুমার ও সদ্য অবসরে যাওয়া রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) জাহাঙ্গীর হোসেন লোপাট করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের অভিযোগ।
তারা বলেন, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে এপিপির আওতায় ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ পায় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের যান্ত্রিক প্রকৌশল দপ্তর। বরাদ্দের ১৪ কোটি টাকা সরঞ্জাম দপ্তর যন্ত্রাংশ ক্রয়ে ব্যয় করলেও বাকি ৩৬ কোটি টাকা নিপুণ কৌশলে লোপাট করেন তাপস কুমার ও জিএম জাহাঙ্গীর।
রেলওয়ের তথ্য সূত্রে জানা যায়, ৩৬ কোটি টাকার হিসাবে পদে পদে করা হয়েছে অনিয়ম-দুর্নীতি। বিভিন্ন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের নামে এই ৩৬ কোটি টাকার কেনাকাটার অস্তিত্ব শুধুমাত্র হিসাব দপ্তরের কাগজে-কলমেই রয়েছে, বাস্তবে নেই। যা কাজীর গরু কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই অবস্থা।
তবে—৩৬ কোটি টাকা লোপাটের সত্যতা মিলেছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের হিসাব দপ্তরের তথ্যেও। যা প্রকাশ করেছে আরেকটি গণমাধ্যম। তাদের সে রিপোর্টে বলা হয়েছে দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, সিএমই দপ্তরের এপিপির ৩৬ কোটি টাকার বিল হিসাব শাখা থেকে তোলা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে বিশদ বিবরণী দেওয়া সম্ভব নয়। এটা অনেক সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। খরচ (ঘুষ) দিলে বিশদ বিবরণীর তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করা যেতে পারে। এ জন্য তিনি ২০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন।
দপ্তরের আরেক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এ ধরণের অনিয়ম সাধারণত একজনের পক্ষে সম্ভব হয় না। এই অনিয়ম-দুর্নীতি ঠিকাদার, এপিপি বাস্তবায়ন কমিটি ও সর্বোপরি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা জড়িত রয়েছেন।
রেলওয়ে সূত্রের দাবি, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সাবেক জিএম জাহাঙ্গীর হোসেন ও প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী তাপস কুমার দাস অত্যন্ত কুট কৌশলে কাগজে-কলমে হিসাব দেখিয়ে এপিপির আওতায় বরাদ্দকৃত ৩৬ কোটি টাকা লোপাট করেছেন। শুধূ এই ৩৬ কোটি টাকা নয়, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে আরও নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন ঠিকাদাররা। যা পরবর্তী প্রতিবেদনে দেখুন।
ঠিকাদারদের অভিযোগ, প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী কেনাকাটার যে কোন ফাইল মোটা অংকের কমিশন ছাড়া ছাড়ে না। ফাইলের প্রকারভেদে ৫ থেকে ১০ পারসেন্ট পর্যন্ত কমিশন আদায় করেই ফাইলে সই করেন। অন্যথায় ফাইল আটকে রেখে সময়ক্ষেপণ করে হযরানি করেন ঠিকাদারদের।
তারা আরও বলেন, চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে রেলওয়ের ক্যারেজে উন্নতমানের যন্ত্রাংশ তৈরি ও মেরামতের কারখানা থাকলেও অত্যন্ত কুট কৌশলে এই প্রকৌশলী সব যন্ত্রাংশ খোলা মার্কেট থেকে তার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ক্রয় করে সরকারের কোটি কোটি টাকা নয়ছয় করারও অভিযোগ করেন।
অনিয়ম-দূর্নীতির বিষয় গোপন রাখতে তাপস কুমারের ইশারায় নিরাপত্তার অজুহাতে কোন সাংবাদিককে ক্যারেজ ওয়ার্কশপে প্রবেশ করতে দেন না। অথচ ঠিকাদার-সাপ্লাইয়ারের পরিচয়ে ক্যারেজ ওয়ার্কশপে প্রতিদিন শত শত মানুষ নির্বিঘ্নে প্রবেশ করে। শুধু তাই নয়, সাংবাদিকদের এড়িয়ে চলতে তিনি ঠিকমতো অফিসও করেন না। প্রায় সময় তিনি তার পছন্দের জায়গায় অবস্থান করেন। সপ্তাহে দুই-একদিন অফিস করলেও বসেন বিকেলে।
এপিপির ৩৬ কোটি টাকাসহ অন্যান্য অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে জানতে রেলওেয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী (সিএমই) তাপস কুমার দাসের মুঠোফোনে বার বার কল দেয়া হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।
আর এদিকে রেলওয়ে পাহাড়তলী ক্যারেজ এবং ওয়াগন মেরামত কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (কারখানা-ডিএস) থাকা কালেও সরকারি বিধি-বিধানের তোয়াক্কা না করে নিজের ইচ্ছানুয়ায়ি সব কর্মকাণ্ড চালিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঠিকাদাররা।
তারা বলেন, স্বেচ্ছারিতায় অতিষ্ট হয়ে তখন কারখানার শত শত শ্রমিক-কর্মচারি কাজে অনিহা প্রকাশ করে। এবং সুপ্তি দে নামে এক মহিলাকে নিয়োগ দিয়ে তার ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করার অভিযোগ করেন। এ নিয়ে নানা গুঞ্জনও রয়েছে।
এ বিষয়ে সদ্য অবসরে যাওয়া রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) জাহাঙ্গীর হোসেনেরও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এসএস/এমএফ