বান্দরবান দুর্গম পাহাড়ে র‌্যাবের অভিযান–৫ জঙ্গি আটক


নিউজ ডেস্ক  ১২ জানুয়ারি, ২০২৩ ৬:৫০ : অপরাহ্ণ

বান্দরবানের দুই উপজেলায় থানচি-রোয়াংছড়ি সীমান্তবর্তী দুর্গম পাহাড়ি এলাকাগুলোতে অভিযান চালিয়ে ৫ জঙ্গিকে আটক করেছে র‌্যাব। আটক জঙ্গিরা নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া সদস্য।

র‌্যাব জানায়, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে থানচি ও রোয়াংছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী দুর্গম পাহাড়ি এলাকাগুলোতে প্রায় তিন মাস ধরে র‌্যাব সাঁড়াশি অভিযান চালায়। অভিযানে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া এবং পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সস্ত্রাসী সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) প্রশিক্ষণ আস্তানা থেকে ৫ জঙ্গিকে আটক করা হয়েছে।

আটক জঙ্গিরা হলেন- নোয়াখালী জেলার নিজাম উদ্দিন হিরন ওরফে ইউসুফ (৩০), কুমিল্লা জেলার সালেহ আহমেদ ওরফে সাইহা (২৭), মো. বাইজিদ ইসলাম ওরফে মুয়াজ (২১), ইমরান বিন রহমান শিতিল (১৭), এবং সিলেট জেলার সাদিকুর রহমান সুমন ওরফে বাইরু (২১)।

বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) দুপুর বারোটায় বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের কনফারেন্স রুমে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন প্রেস কনফারেন্সে মাধ্যমে এ তথ্য জানান।

সংবাদ সম্মেলনের র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, নতুন জঙ্গি সংগঠনে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঘরছাড়া ৫৫ জন যুবকই পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সস্ত্রাসী সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) প্রশিক্ষণ আস্তানায় প্রশিক্ষণ নিয়েছে। তাদের মধ্যে বুধবার অভিযানে রোয়াংছড়ি থেকে ২ জন এবং থানচি থেকে ৩ জনকে আটক করতে সক্ষম হয়েছি।

এসময় আরও কয়েকজন জঙ্গি পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। তবে ইতিমধ্যে কয়েক দফায় চলমান অভিযানে পাহাড়ে প্রশিক্ষণ নেয়া ১২ জন জঙ্গি এবং কেএনএফ’র ১৪ জন সদস্যকে আটক করা হয়েছে। তারমধ্য প্রথম দফায় ৭ জন জঙ্গি, দ্বিতীয় দফায় ৫ জন জঙ্গি এবং প্রথম দফায় কেএনএফ’র ৩ জন ও দ্বিতীয় দফায় ১১ জনকে আইনের আওতায় নেওয়া হয়েছে।

অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে এই পর্যন্ত কেএনএফ-এর কয়টি ক্যাম্প সন্ধান মিলেছে প্রশ্ন করার করলে তিনি বলেন, প্রথম ২০ অক্টোবর ২টি ক্যাম্প অভিযান পরিচালনা করি। সেখানে বিপুল পরিমাণে অস্ত্র ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। তারা সেখানে আত্মগোপনে ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করত। যারা আটক হয়েছে তাদের দেয়া তথ্য ভিত্তিতে সেখানে বেশ কয়েকজন ছিল।

পাহাড়ে বিচ্ছিন্নবাদী সংগঠন কেএনএফ আর জঙ্গি তাদের সাথে কিভাবে সম্পর্ক তৈরি হয়েছে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, গোয়েন্দা তথ্য ভিত্তিতে যা পেয়েছি। মূলত আর্থিক চুক্তিভিত্তিতে প্রশিক্ষণের সুযোগ দেওয়া হতো জঙ্গিদের।

যা প্রতি মাসে ৩ থেকে ৫ লক্ষ টাকা ব্যয় করতে হতো। সেই অর্থের বিনিময়ে কেএনএফ-এর সশস্ত্র বাহিনীদের ভরণপোষণ ব্যবস্থা হতো। পাশাপাশি জঙ্গিদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়ার মাধ্যমে কেএনএফ নিজেদের শক্তি সমন্বয় ও বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়া কেএনএফ-এর প্রধান নাথান বম ঢাকা অবস্থানরত সময় তার বাড়ি ভাড়া থেকে শুরু সব খরচ ওই অর্থ দিয়ে চালিয়ে দিতেন।

বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কেএনএফ বিরুদ্ধে অভিযান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই পর্যন্ত কেএনএফ ১৪জন সদস্যকে আটক করেছি। তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। তাদের দেয়ার তথ্য ভিত্তিতে পরবর্তীতে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

কেএনএফ -এর প্রধান নাথান বম অবস্থান সম্পর্কে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত তার অবস্থান সম্পর্কে ধারণা বা সরাসরি কোন তথ্য নেই। জঙ্গি বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা যখনই শুরু হয়, তখন থেকে নাথান বমসহ কথিত আরো বিশিষ্ট ব্যক্তিরা আত্মগোপনে চলে যায়।

এদিকে নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক কয়েকজন স্থানীয়রা জানান, দুর্গম এলাকায় একাধিক জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থাকার খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়দের মধ্যে চরম আতংক বিরাজ করছে। অনেকে জানমাল রক্ষার্থে দেশ ছেড়ে অনেক পরিবার ভারত মিজোরামের অবস্থান নিয়েছে বলে খবর শুনেছি।

এরই মধ্যে নিরাপত্তার স্বার্থে স্থানীয় প্রশাসন বান্দরবানের কয়েক দফায় রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি এই তিন উপজেলাকে পর্যটক ভ্রমণে অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি দিয়েছেন।

সকালের-সময়/ফোরকান

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ