মাকসুদা আক্তার সাবেক মিস আর্থ আয়ারল্যান্ড ২০১৫ এবং মিস আর্থ ইন্টারন্যাশনাল উইনার

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রিয়তি ধর্ষণ চেষ্টা, তদন্তে ইন্টারপোল!


লাইফস্টাইল ডেস্ক ২৩ মে, ২০১৯ ৯:৫৮ : পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আইরিশ বিউটি কুইন মাকসুদা আক্তার প্রিয়তি অবশেষে মুখ খুললেন। ২০১৫ সালে ঢাকার একজন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছিলেন। আর এই বিষয়টি এখন ইন্টারপোল তদন্ত করছে। গতকাল ২২শে মে তিনি তার জীবনের কিছু ব্যক্তিগত স্পর্শকাতর বিষয় তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, তিনি ভুয়া বার্তা পাচ্ছেন ফেসবুকের মাধ্যমে এবং তা সংখ্যায় শ’ শ।

তিনি দুঃখ ভুলে নিজের মতো করে দু’ সন্তান নিয়ে বাঁচতে চান। কিন্তু ফেসবুক তাতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাকসুদা আক্তার সাবেক মিস আর্থ আয়ারল্যান্ড ২০১৫ এবং মিস আর্থ ইন্টারন্যাশনাল উইনার। তাকে ট্রল করা হয়েছে ??‘বেশ্যা’ হিসেবে। কারণ তিনি একজন মডেল, একজন সিঙ্গেল মাদার।

দুই সন্তানকে নিয়ে তিনি গত ১৮ বছর ধরে বসবাস করছেন ডাবলিনে। তিনি লন্ডনের মিরর পত্রিকাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, কী করে তিনি সামপ্রতিক দিনগুলোতে অনলাইন লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছেন। তিনি এতটাই বিরক্ত হয়ে গেছেন যে, তার কখনও কখনও মনে হয় তার মডেলিং ছেড়ে দেয়া উচিত। আমার ধারণা, আমার মতোই অন্যান্য যারা মুসলিম মডেল রয়েছেন, তাদের অনলাইনে নিপীড়নের শিকার হতে হয়।

কিন্তু আমি মনে হয় অনেক বেশি এই বিষয়গুলো সহ্য করছি। কারণ তারা এটা মেনে নিতে পারে না যে দুইটি সন্তান নিয়ে আমি মডেলিং করি, আমি আমার দেহ প্রদর্শন করি। তারা আসলে এটা মেনে নিতে পারছে না। প্রিয়তি মিররকে বলেন, আপনি যদি কিছু না মনে করেন তাহলে তারা আমাকে যেটা বলছে সেটা হচ্ছে এই ধরনের-তারা আমাকে ?‘হোর’ ভাবছে। তারা ভাবছে, আমি পতিতাবৃত্তি করে জীবযাপন করি।

আমি তখন কিশোরী, যখন আমি ডাবলিনে চলে এসেছি। বিশ্বাস করেন, ফেসবুক পেইজে শত শত বার্তা পাই প্রতি সপ্তাহে। তার বেশির ভাগই হয়তো আয়ারল্যান্ড থেকে আসছে এবং তারা নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশি। তারা বসবাস করতে পারে বিশ্বের অন্যান্য স্থানেও। একটি বার্তা পাঠানো হয়েছে বাংলায়, লেখা হয়েছে আপনার মুখের গড়ন ২৫ বছর বয়সীর মতো। পেটটা ৪৫ বছরের মহিলার, কি করে তুমি এতটা তরুণ থাকতে পারছ?

মাকসুদা একজন বাণিজ্যের স্নাতক। তিনি দাবি করেছেন, তিনি গুরুতর ভাবে যৌন হামলার শিকার হয়েছিলেন এবং তাকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছিল। যখন তিনি ২০১৫ সালে দেশে গিয়েছিলেন এবং ইন্টারপোল এখন সেটা অনুসন্ধান করে দেখছে সেই ঘটনা থেকে মাকসুদা ডিপ্রেশনে ভুগছিলেন। কারণ তার একটাই চিন্তা, তার দুই সন্তান অনলাইনের প্রতি খুবই অনুরাগী এবং তারা প্রযুক্তিকে ভালোবেসেছে। আর তার ভয় সেখানেই।

সে মনে করছে, তার মাকে নিয়ে যেসব খারাপ কথা অনলাইনে রয়েছে, সেগুলো তারা পড়তে পারবে। মাকসুদা বলেন, আমি কঠোর পরিশ্রম করছি তাদের মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে। কিন্তু কেউ আমাকে সাহায্য করছে না। আমি তো বুঝতেই পারি না, কি করে তারা এইসব আজেবাজে কথা আমার উদ্দেশ্যে লিখতে পারেন। মাকসুদা বাস করেন একা।

তিনি নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে চাইছেন। কিন্তু সমপ্রতি তার মনে হয় অন্তত কয়েক মাসের জন্য হলেও মডেলিং বন্ধ করে দেয়া। কারণ যেসব তাকে ঘিরে হচ্ছে, সেটা তিনি আর নিতে পারছেন না। তিনি খোদাভীরু। আল্লাহ্‌কে বিশ্বাস করেন। কিন্তু তার পক্ষে হয়তো পবিত্র কোরআনের সব নির্দেশাবলী সব সময় অনুসরণ করা সম্ভব হয় না। মাকসুদা বলেন, এসব কারণেই আমি বাংলাদেশি সমপ্রদায় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছি।

কিন্তু আমি যেভাবে জীবন-যাপন করি, তা তারা নিতে পারে না বলেই আমি তাদের কাছ থেকে দূরে সরে এসেছি। তারা বলে, আমি নাকি স্বাধীনভাবে জীবন-যাপন করছি। তাই আমি আমার দেহ প্রদর্শন করি এবং এভাবেই আমি অর্থ উপার্জন করি। আমার দু’টি সন্তান এবং আমি আমার সন্তানদের বাবাকে বিয়ে করিনি। এটা তাদের কল্পনার বাইরে। তারা মনে করেন, এটা খুবই একটি বাজে বিষয় এবং ভাবটা যেন আমি সবার সঙ্গে শুয়ে বেড়াচ্ছি অথবা এ রকম কিছু একটা।

মাকসুদা জোর দিয়ে বললেন, তিনি পছন্দ করেন না কোনো একটা কক্ষে নিজেকে আবদ্ধ করে রাখতে। নিজেকে আবৃত করে রাখতে। এবং কারও সঙ্গে কথা না বলে থাকতে। এ জীবন তিনি চান না। তিনি বলছেন, মডেলিং আমাকে আত্মবিশ্বাস দিয়েছে। আমি অবসাদগ্রস্ত হয়ে ছিলাম। সেটা থেকে কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। মাকসুদা এমন অনেক অভিজাত অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন যেখানে ব্রিটিশ মন্ত্রীরা অংশ নিয়েছেন।

তিনি বিশ্বাস করেন এ বিষয়ে ফেসবুকের আরো বেশি কিছু করা উচিত। কারণ এইসব বার্তা ফেসবুকে লেখা সম্ভব হচ্ছে। আর তা মানুষের আত্মবিশ্বাসকে নষ্ট করে দিচ্ছে। মানুষের ব্যক্তিগত জীবনকে ধ্বংস করছে এবং এটা ভালো পরিবেশ তৈরি করছে না। কিন্তু এই বিষয়গুলো প্রতিরোধে ফেসবুক যথেষ্ট পদক্ষেপ নেয়া থেকে বিরত রয়েছে। তারা অনেক অর্থ করছে। তাই তাদের আরো বেশি নজরদারি বাড়ানো উচিত। বিউটি কুইন আরো বলেছেন, তিনি এক ভয়ঙ্কর হামলায় যৌন আক্রমণের শিকার হন এবং তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়েছিল ।

তার বয়স যখন ২০-এর কোঠায়। তখন এক ব্যক্তি তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। মিস আর্থ ইন্টারন্যাশনাল উইনার নারীদের প্রতি আহ্বান জানান, নারীদের যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে তারা যেন আরও বেশি মাত্রায় সোচ্চার হতে পারেন। ১৮ বছর ধরে বসবাস করছেন আয়ারল্যান্ডে। ২০১৫ সালে তিনি বাংলাদেশ সফর করেন। ওই সময় তিনি যৌন আক্রমণের শিকার হন। সেখানে একটি অফিসে টিভি বিজ্ঞাপন নিয়ে আলোচনা করছিলেন। কোম্পানির মালিক বলেন, টাকা নিতে তোমাকে আমার অফিসে আসতে হবে।

ডাবলিনের এই মেয়েটি বর্তমানে ইন্টারপোলকে সহায়তা দিচ্ছেন, যাতে তিনি ন্যায়বিচার পান। মাকসুদা বলেন, লোকটি ছিলেন একটি কোম্পানির মালিক। তিনি আমাকে বলেছিলেন, তোমাকে তোমার পাওনা বুঝে নিতে আমার অফিসে আসতে হবে, কারণ বাংলাদেশে কোনো ব্যাংক একাউন্ট ছিল না আমার।

পাইলটের যোগ্যতাসম্পন্ন মাকসুদা বলেছেন, একজন সেক্রেটারি আমাকে সেই অফিসে নিয়ে গিয়ে অফিস ত্যাগ করেন। এরপর লোকটি আসেন এবং তিনি তার হাত আমার পোশাকের উপরে রাখেন এবং আমাকে কোলে তুলে উপরে উঠান এবং টেবিলে নিক্ষেপ করেন।

তিনি প্রকৃতপক্ষে আমাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছিলেন এবং তিনি তার হাত আমার প্যান্টের ভেতরে রেখেছিলেন এবং আমি তখন ভাবলাম, আচ্ছা তবে আমি ধর্ষিত হতে যাচ্ছি। আমি ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে গিয়েছিলাম। এবং আমি জানি না, আমি কেন তখন চিৎকার করিনি। অবশ্য অফিসে সুরক্ষিত ছিল। আমার চিৎকার শোনার মতো কেউ সেখানে ছিল না। সে ছিল একজন ক্ষমতাবান মানুষ। অর্থের জোরে তার সব ক্ষমতা মুঠোয়। তিনি আরো স্মৃতিচারণ করেন, তিনি তখন তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তার বিষয়ে খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন।

তিনি ভাবছিলেন আমি কী করে এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পারি। আমি তখন বুদ্ধি করে বললাম। আমার একটা আইডিয়া আছে। আজকে এটা করার দরকার নেই। আমাকে আবার আসতে দিন। একটা সুন্দর পরিবেশে আমাকে কাজটা করতে দিন। তখন সে থামল মুহূর্তের জন্য এবং উঠে দাঁড়াল। আমি আমার কাপড় গুছিয়ে নিলাম। আমি তাকে বললাম, আমি আগামীকাল আসবো। আমার টাকার জন্য। এবং শেষ পর্যন্ত সে আমাকে চলে আসতে দিলো। ওই ঘটনার কয়েকদিন পরেই সন্তানদেরসহ ফিরে আসেন আয়ারল্যান্ডে।

তখন লোকটির টেলিফোন পাই এবং আমাকে বলল, আমি জানি তুমি কেন ফিরে আসনি। যদি তুমি তোমার মুখ খোলো, তাহলে তোমাকে ফেলে দিতে আমার দু’মিনিট লাগবে এবং আয়ারল্যান্ড আমার থেকে খুব বেশি দূরে নয়। পরিষ্কার বাংলায় তিনি বলেছিলেন তিনি আমাকে হত্যা করতে যাচ্ছেন।

মিরর লিখেছে, একজন সিঙ্গেল মাদার হিসেবে তিনি তার দুই সন্তানকে বড় করেছেন। তিনি বললেন, আমি খুবই বিমর্ষ হয়ে পড়েছিলাম। উদ্বিগ্ন ছিলাম। আমি ঘুমাতে পারতাম না। আমি আত্মহত্যার চিন্তা করেছি। এবং আমি ট্যাবলেট খেয়ে পার করেছিলাম দু’বছর।

মানবজমিন

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ