প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা ও সরকার উৎখাতের হুমকির অভিযোগে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও রাজশাহীর সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনুসহ চার নেতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আবেদন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৯ মার্চ) রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক মোসাব্বিরুল ইসলাম জেলা মুখ্য মেট্রোপলিটন আদালতে এ মামলার আবেদন করেন। আবেদনের বিষয়ে কোনো আদেশ দেননি আদালত।
অভিযুক্তরা হলেন- বিএনপি চেয়্যারপারসনের উপদেষ্ঠা মিজানুর রহমান মিনু, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, নগর সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন। গত মঙ্গলবার (২ মার্চ) রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় মহাসমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পচাত্তরের ১৫ আগস্ট স্মরণ করিয়ে দিয়ে বক্তব্য দেওয়ার ঘটনায় এ মামলা করা হয়েছে।
সমাবেশে দেওয়া বক্তৃতার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেও মামলা থেকে রেহাই পেলেন না মিনু। রোববার (৭ মার্চ) এক বিবৃতিতে রাজশাহীর সাবেক এ মেয়র দুঃখ প্রকাশ করেন। রাজশাহী নগর বিএনপির দপ্তর সম্পাদক নাজমুল হক ডিকেন ই-মেইলে বিবৃতিটি গণমাধ্যমের কাছে পাঠিয়েছেন।
এর আগে মিনুকে ক্ষমা চাইতে নগর আওয়ামী লীগের বেঁধে দেওয়া ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম শেষ হয় শনিবার সন্ধ্যায়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তিনি ক্ষমা না চাইলেও পর দিন তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।
বিবৃতিতে মিনু উল্লেখ করেন- আমার বক্তব্যের জন্য যারা ব্যথিত হয়েছেন, মর্মাহত হয়েছেন, আমি তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি।
মিনু আরো বলেন, আমি এই মহানগরীতে জন্মগ্রহণ করে দীর্ঘদিন রাজশাহীবাসীকে নিয়ে রাজনৈতিক নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছি। স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনসহ সব আন্দোলনে পাশে পেয়েছি। সুতরাং কোনো ব্যক্তি বিশেষ বা গোষ্ঠী বিশেষকে উদ্দেশ্য করে আক্রোশমূলক বক্তব্য দেওয়া আমার স্বভাববহির্ভূত। তাই সবাইকে আমার বক্তব্যে ষড়যন্ত্র না খোঁজার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।
বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে মিজানুর রহমান মিনু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আজ রাত, কাল আর সকাল নাও হতে পারে। পচাত্তর মনে নাই?’ এর প্রতিবাদ জানায় রাজশাহী আওয়ামী লীগ। পর দিন এক বিক্ষোভ-সমাবেশ থেকে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন মিনুকে বক্তব্য প্রত্যাহারে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন।
লিটন ঘোষণা দেন, এই সময়ের মধ্যে মিনু ক্ষমা না চাইলে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। আর বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা এক প্রতিবাদলিপিতে মিনুর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবেই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
এদিকে মিনুর বিবৃতি পাঠানোর আগে আলটিমেটামের সময় শেষ হওয়ায় নগর আওয়ামী লীগ মিনুর বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত নেয়। জেলা প্রসাশকের কাছে মামলার আবেদন করেছেন রাজশাহী মহানগর আ.লীগের নেতৃবৃন্দ। ছবি সংগৃহীত
রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার করার বিষয়ে জানতে চাইলে বাদি অ্যাডভোকেট মোসাব্বিরুল ইসলাম বলেন, ‘২ মার্চ বিএনপির বিভাগীয় সম্মেলনে মিজানুর রহমান মিনু, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সাবেক মেয়র বুলবুল ও বিএনপি নেতা মিলন দেশ ও রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য দিয়ে দেশে অস্থিতিশীল অবস্থার সৃষ্টি করতে চেয়েছেন।
এ বিষয়ে পরদিনই আমরা এর প্রতিবাদ মিছিল করি এবং সেই সাথে তাদের ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেই ক্ষমা চাওয়ার জন্য। কিন্তু মিনু ও অন্যান্য নেতারা প্রধানমন্ত্রী ও সকলের কাছে ক্ষমা না চেয়ে দুঃখ প্রকাশ করে একটি প্রেস বিবৃতি দেন, যা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
তিনি আরো বলেন, ‘ক্ষমা না চেয়ে উপহাসমূলক প্রেস বিবৃতির দিয়ে তিনি (মিনু) ধূর্ততা করেছেন। তাই মিনুসহ অন্যান্য ৩ নেতার অবৈধ অশালীন বক্তব্যের বিরুদ্ধে আজ রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কাছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন করা হয়েছে।
নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তারা কটূক্তি করে ক্ষমা না চেয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। উপরন্তু তারা দেশকে একটি অস্থিতিশীল রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছেন। তাই রাষ্ট্র ও আইন বিরোধী বক্তব্যের জন্য তাদের বিরুদ্ধে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর আবেদন করা হয়েছে। সেখানে আমি এক নম্বর সাক্ষী হিসেবে আছি।
এদিকে জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, ‘সকালে মহানগর আওয়ামী লীগ আমার কাছে যে দরখাস্তটি করেছে সেটার মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের প্রয়োজন রয়েছে। দরখাস্তটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক যথাযথভাবে অনুমোদনের জন্য পাঠাব। এরপর উনারা দরখাস্তটি অনুমোদন দিয়ে নির্দেশনা দিলে মামলাটি দায়ের হয়েছে বলে চূড়ান্তভাবে বোঝা যাবে।
এসএস