ইলিয়াস আলীকে নিয়ে আব্বাসের মন্তব্য, চরম বিপাকে বিএনপি!


সকালের-সময় রিপোর্ট  ২৭ এপ্রিল, ২০২১ ৩:২৮ : অপরাহ্ণ

ইলিয়াস আলীর গুম নিয়ে মির্জা আব্বাসের বক্তব্যের পর দলের ‘গুম-খুন’ হওয়া নেতাকর্মীদের দেয়া বিএনপির তথ্য-উপাত্ত নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এমনকি দলটির ভেতরেও এনিয়ে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

দলটি সিনিয়র নেতারা বলছেন, মির্জা আব্বাসের বক্তব্যের পর সর্বোচ্চ নেতৃত্ব থেকে চিঠি দিয়ে তার জবাব চাওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক এবং এর মাধ্যমে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে। এর ফলে তার দলের প্রতি আস্থা ও ভালোবাসা অনেক কমে গেছে বলেও মনে করছেন তারা।

চিঠি দিয়ে জবাব চাওয়ার পর থেকে মির্জা আব্বাস বিব্রতকর অবস্থায় মধ্যে আছেন বলে তার ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। তারা জানান, মির্জা আব্বাস আর বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে থাকবেন কি না কিংবা থাকলেও আগের মতো সক্রিয় থাকবেন কি না- তা নিয়ে তিনি চিন্তাভাবনা করছেন। আর উনি যদি দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকেন তাহলে তার অনুসারী ও সহযোদ্ধারাও বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে থাকবেন না বলেও জানায় সূত্রটি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক সিনিয়র নেতা বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস দলের অন্য নেতাদের মতো ভিন্ন কোন রাজনৈতিক দল থেকে আসেননি। তিনি বিএনপির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এই দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন এবং এখনো আছেন। তিনি পরগাছা নন।

আর উনি দলের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন, অনেক পরিশ্রম এবং সংগ্রামও করেছেন। এখনো করছেন। আর মির্জা আব্বাস বিএনপির অন্য নেতাদের মতো কারো কাছে নিজেকে বিক্রি করেননি। এজন্যই আজ উনা’র বক্তব্যের পর সর্বোচ্চ নেতৃত্ব থেকে তাকে চিঠি দেয়া হয়! যা উনার জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক ও অসম্মানজনক।

বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গঠনের পর মির্জা আব্বাস এই দলে যোগদান করেন। দলটির প্রথমদিকের একজন নেতা তিনি। হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের শাসনামলে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এছাড়া তিনি ১৯৯১ সালে ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ঢাকা-৬ আসন থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। এসময় তিনি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

এদিকে গত ১৮ এপ্রিল বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাদের সঙ্গে দলের হাইকমান্ডের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই বৈঠকে মির্জা আব্বাসের বক্তব্য নিয়ে কয়েকজন নেতা নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, মির্জা আব্বাস নিখোঁজ ইলিয়াস আলী ইস্যুতে দলের সিনিয়র নেতাদের জড়িয়ে যেভাবে কথা বলেছেন, এতে দলকে তিনি বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছেন। উনার মতো সিনিয়র একজন নেতাকে আরো সতর্ক হয়ে কথা বলা উচিত।

মির্জা আব্বাসের বক্তব্যের পর দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব থেকে চিঠি দিয়ে তার জবাব চাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, দলের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে মির্জা আব্বাস বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত আছেন। আর উনার মতো একজন সিনিয়র নেতাকে দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব থেকে চিঠি ইস্যু করা অত্যন্ত দুঃখজনক ও অসম্মানজনক।

এর আগে ১৭ এপ্রিল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস এক ভার্চুয়াল সভায় বলেছিলেন, ইলিয়াস আলীর গুমের পেছনে দলের নেতারা জড়িত থাকতে পারেন। দলের ভেতরে লুকিয়ে থাকা এই ব্যক্তিদের অনেকেই চেনেন। আওয়ামী লীগ সরকার ইলিয়াস আলীকে গুম করেনি বলেও মনে করেন তিনি।

ঢাকাস্থ সিলেট বিভাগ জাতীয়তাবাদী সংহতি সম্মিলনীর উদ্যোগে ওই সভায় বিএনপি মহাসচিবকে উদ্দেশ্য করে আব্বাস বলেন, ইলিয়াস গুম হওয়ার আগের রাতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কোনো এক ব্যক্তির সঙ্গে তার বাগবিতণ্ডা হয় চরম লেবেলের।

তাকে ইলিয়াস খুব গালিগালাজ করেছিলেন। আমার দলে এখনো সেই পেছন থেকে দংশন করা সাপগুলো রয়ে গেছে। যদি এদের দল থেকে বিতাড়িত না করেন তাহলে কোনো পরিস্থিতিতেই দল সামনে এগোতে পারবে না।

পরে গত ২২ এপ্রিল ইলিয়াস আলীর গুমের সঙ্গে দলের নেতারা জড়িয়ে মির্জা আব্বাস যে বক্তব্য দিয়েছিলেন- তার ব্যাখ্যা চায় বিএনপি। ওই দিন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই বক্তব্যের ব্যাখ্যা চেয়ে মির্জা আব্বাসকে চিঠি দেন।

ওই চিঠিতে মির্জা আব্বাসকে বলা হয়, ইলিয়াস আলী গুম হয়েছেন ৯ বছর। এই বিষয়ে দেশিয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মধ্যে ঐক্যমত্য তৈরি হয়েছে। আপনার বক্তব্য এই জনমতকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। যার ফলে দলের নেতাকর্মীরা আপনার বক্তব্যের ব্যাপারে ব্যাখ্যা প্রত্যাশা করছে যে, আপনি কী বলতে চেয়েছিলেন।

ইলিয়াস আলীর গুম হওয়া নিয়ে বক্তব্যের ব্যাখ্যা চেয়ে দলের দেয়া চিঠির জবাব গত ২৬ এপ্রিল দিয়েছেন মির্জা আব্বাস। ওইদিন বিকেলে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে লোক মারফত এই চিঠি পৌঁছে দেন তিনি। বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত ও সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বাংলাদেশ জার্নালকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

চিঠির বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানতে চাইলে সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, সেটা বলতে পারবো না। কারণ একটি বন্ধ খাম আমাকে দেয়া হয়েছে। সেটা সেই অবস্থায় আমি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে পৌঁছে দিয়েছি।

তবে বিএনপির একটি সূত্রে জানা গেছে- চিঠিতে মির্জা আব্বাস বলেন, ১৭ এপ্রিল ইলিয়াস আলীকে নিয়ে বক্তব্য দেয়ার পরদিন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তবুও দল তার বক্তব্যের ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছে। তার বক্তব্য আসলে কেউ অনুধাবন করেনি, যা অত্যন্ত দুঃখের বিষয়।

চিঠিতে তিনি আরো বলেন, আমি কখনো বিএনপি ও জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে কাজ করেনি। দলের দুঃসময়ে দলের জন্য নিরসলভাবে কাজ করেছি। সরকার বিরোধী আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছি সামনে থেকে। গত ৪৩ বছরে তার সামনে বিএনপি নিয়ে কেউ বিরূপ মন্তব্যের সাহস পায়নি। কেউ করলে তার কড়া প্রতিবাদ করেছেন। তারপরও ৪৩ বছর পর এই প্রথম একটি বক্তব্য নিয়ে দলের ভেতরে তাকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলা হয়েছে।

এরআগে গত ১৮ এপ্রিল শাহজাহানপুরে নিজের বাসায় এক সংবাদ সম্মেলন মির্জা আব্বাস বলেছিলেন, ইলিয়াস আলী গুমের জন্য বিএনপির কিছু নেতা দায়ী। এই কথা কি আমি বলেছি? কেউ কি প্রমাণ করতে পারবে? অসম্ভব, সম্ভব নয়। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই- আমরা কথা বিকৃত করা হয়েছে। পত্রিকায় এসেছে- সরকার বা আওয়ামী লীগ ইলিয়াসকে গুম করেনি, এই কথাও আমি বলিনি। আমার বক্তব্যকে বিকৃত করে পেঁচিয়ে লেখা হয়েছে, টুইস্ট করা হয়েছে।

এসএস

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ