বিষয় :

সরকারের প্রণোদনা প্রতিজন সাংবাদিকের অধিকার

সাংবাদিকতার সনদ বিএফইউজে দেয়ার সাংবিধানিক কোন ভিত্তি নেই!


সকালের-সময় রিপোর্ট  ২৫ এপ্রিল, ২০২০ ১২:২২ : পূর্বাহ্ণ

সারাদেশে জেলা ও উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিক ও সংবাদ সংশ্লিষ্ট কর্মীদেরকে তালিকাভুক্ত করে বিশেষ প্রণোদনা প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত ১৯ এপ্রিল জেলা প্রশাসক কে চিঠির মাধ্যমে বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়ে ছিলেন বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল। কিন্ত পরে ২১ এপ্রিল ঐ চিঠি অনিবার্য কারণ দেখিয়ে আবার প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।

এদিকে একুশে টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি হাসান ফেরদৌস (২২ এপ্রিল) তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, সরকারি তথ্য অনুযায়ি তালিকাভুক্ত মিডিয়া (প্রিন্ট) সংখ্যা ৭০৬। এরমধ্যে ঢাকায় ৩৬৫ এবং ঢাকার বাইরে ৩৪১। এর বাইরে আছে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া। ৪৪টির লাইসেন্স দিয়েছে সরকার। প্রায় ৩৫ টি বর্তমানে অনএয়ারে আছে।

চট্টগ্রামে কর্মরত এ সিনিয়র সাংবাদিক আরো বলেন, সরকারীভাবে অনুমোদিত এসব গণমাধ্যমে সারাদেশে কাজ করেন প্রায় লক্ষাধিক গণমাধ্যম কর্মি। এসব গণমাধ্যমে কর্মরতরা “সাংবাদিক” কিনা এই সনদ দেয়ার দায়িত্ব কার? সরকারের তরফ থেকে কোন সংগঠনকে সাংবাদিক “সনদ” দেয়ার দায়িত্ব দিয়েছে এমন কোন তথ্যও নেই। তাহলে সারা দেশের সাংবাদিকের সংখ্যা নির্ধারণ করে খয়রাতি সাহায্যের আবেদন করা হয় কিভাবে?

তিনি বলেন, বাংলাদেশে জেলা ৬৪টি, উপজেলা-প্রায় পৌনে ৫শ’। এসব এলাকায় কয় জন সাংবাদিক কাজ করবে তা নির্ধারনের জন্য কোন সংগঠন কি দায়িত্ব পেয়েছে? তাহলে জেলা ভিত্তিক সংখ্যা নির্ধারন করা হয় কিভাবে।

অন্যদিকে আমাদের নতুন সময় চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান কামাল পারভেজ বলেন , সাংবাদিকদের প্রণোদনা বিষয়ে “বিএফইউজে” যে তালিকা (৫,৭৭১ জন) তৈরি করে দিয়েছেন এটা হচ্ছে মনগড়া একাংশের একটা স্বার্থপরায়নের কাজ। ৪,১৮১ জন “বিএফইউজে” এর সদস্য দেখানো হয়েছে সব সদস্য কি বর্তমানে সাংবাদিক পেশায় নিয়োজিত আছে কিনা এবং তারা পত্রিকায় কর্মরত কিনা সেটাও দেখার বিষয়।

তিনি বলেন, প্রণোদনার বিষয়টি হলো বর্তমানে বিভিন্ন প্রিন্ট পত্রিকা, ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় চলমান কর্মরত এবং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাঠে কাজে করে যাচ্ছেন ও তৃনমূল পর্যায়েসহ এমন পেশাদারী আছেন তাদের জন্য প্রযোজ্য হওয়াই উচিৎ।

এ বিষয়ে অনলাইন পোর্টাল সকালের-সময় ডট কম সম্পাদক ও প্রকাশক মোহাম্মদ ফোরকান বলেন, মফস্বল ও নগরকেন্দ্রিক সাংবাদিকতার এই বিভেদ যত বাড়তে থাকবে, ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন ততোটাই বাধাগ্রস্ত হতে থাকবে।

সাংবাদিকতা বিভাজনে আজ সবছেয়ে বড় সমস্যা ইউনিয়ন নামধারী ট্রেড মার্কা জ্ঞানহীন সাংবাদিকদের কারণে। এর সাথে তাল মিলিয়ে কিছু সরকারী সংস্থা ও প্রশাসনের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্তারাই মিডিয়া হাউজ সাংবাদিক নেতাদের ফুসলিয়ে সাংবাদিকদের বিভাজনের পথেই তাদের একপেশে অশুভ যাত্রা অব্যাহত রেখেছে। যা একজন প্রকৃত সাংবাদিকের ন্যায়-নীতির মধ্য পড়ে না।

সাংবাদিকতার সনদ বিএফইউজে দেয়ার কোন সাংবিধানিক ভিত্তি নেই। তারা কে? সাংবাদিকতার সনদ একমাত্র মিডিয়া অফিসেই দিতে পারে। সরকার প্রণোদনা দিবে সেটা প্রতিটি মিডিয়া হাউজ সংবাদ কর্মীদের লিস্ট করে তা তথ্য মন্ত্রানালয়ে পাঠাবে সেটা তারা লিষ্ট করে সবার ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করবে এটাই হচ্ছে তথ্য মন্ত্রাণালয়ের কাজ।

সরকারের প্রণোধনা প্রস্তাবে আজ যারা বিভাজন সৃষ্টি করেছেন আপনারা কি মনে করেন? প্রকৃত সাংবাদিকদের বাদ দিয়ে আপনারাই প্রণোদনা নিয়ে নিবেন! এটা কি ভাবে ভাবলেন! সারাদেশের প্রকৃত সাংবাদিকদের বাদদিয়ে ট্রেড সংগঠন সাংবাদিক ইউনিয়নের নাম দিয়ে তথ্য মন্ত্রীর হাতে লিষ্ট একটা তুলে নিজেদের কান্ড-জ্ঞানহীনতার যে পরিচয় আপনারা দিয়েছেন এই দেশের প্রকৃত সাংবাদিক সমাজ আপনাদের কোন দিন ক্ষমা করবে না।

স্বজনপ্রীতির কারণে ৫/৬ মাসের অফিসের পিয়ন আর ক্যামরা নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করা তাদের বানিয়ে ফেলনেন ইউনিয়নের সদস্য, তারা এখন মস্তবড় সাংবাদিক। আর যারা ১০/১৫ বছর সাংবাদিকতা করে সমাজের দর্পণের দেশ ও দশের কাজ করে যাচ্ছে তারা এখনো সাংবাদিক হতে পারলো না। এটাই দুঃখের বিষয়।

অথচ! অনেকে টিভি চ্যানেল, অনেকে পত্র-পত্রিকায় ও অনলাইল গণমাধ্যমে সুনামের সহিত রিপোর্টিং করে যাচ্ছে অনেক সাংবাদিক ভাই, দেখা যায় তারা ইউনিয়নের সদস্য হবার জন্য ৫/৬ বার আবেদন করলেও নেতারা তাদের ইউনিয়নের মেম্বার করেনি। মেম্বার করেননি তাতে কি হয়েছে ওরা সাংবাদিক নয় এটা বিএফইউজে কি বলতে পারবে! না, কারণ! বাংলাদেশের সংবিধান তাদের সে অধিকার দেয়নি।

সম্প্রতি প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ মিডিয়ায় বলেছেন, সনদ ছাড়া সাংবাদিকতা নয়, সাংবাদিকতা পেশায় আসতে হলে পরীক্ষার মাধ্যমে সনদধারী হতে হবে। তাহলে আমার প্রশ্ন! ইউনিয়নের সদস্যরাই কি পরীক্ষা দিয়ে সাংবাদিক হয়েছে?

এছাড়া তৃণমূলে মাঠ পর্যায়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যে সকল সাংবাদিকরা কাজ করেন তারা মনে করেন- মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক যদি প্রণোদনা সাংবাদিকদের দেওয়ার হয়, তাহলে সেটা কোনো ক্লাব বা সংগঠনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে, তা যদি তথ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশক্রমে এটি ডিএফপি তালিকা ভুক্ত পত্রিকার সম্পাদক, ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া ও তথ্য মন্ত্রানালয়ের তালিকাভূক্ত অনলাইন পোর্টালের প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে তা করা যেতে পারে। এর পর মফস্বলে কর্মরত সাংবাদিকদের তালিকা নিয়ে, সেটি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সুষ্ঠু ভাবে কাজটি সম্পন্ন করা হলে, প্রকৃত সংবাদ কর্মী বা সাংবাদিকদের অধিকার নিশ্চিত সম্ভব বলে তৃনমূল কর্মীরা মনে করেন।

সকালের-সময়/এমএফ

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ