বিষয় :

করোনা ও আমাদের করণীয়

সচেতনতাই হ্রাস করতে পারে মরণঘাতী করোনার প্রাদুর্ভাব


বিশ্বজিত বড়ুয়া ১৯ মে, ২০২০ ৫:৪৭ : অপরাহ্ণ

যদিও করোনাভাইরাস চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান শহর থেকে শুরু হয়ে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে এবং উদ্ভূত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তা আজ আমাদের সকলেরই মাথা ব্যথার কারণ। এই উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে কীভাবে পরিত্রাণ পেতে পারি তার জন্য আমাদের চিন্তা করতে হবে।

এই মরণঘাতী করোনার এখনো পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা কোনো সুনির্দিষ্ট ওষুধ আবিষ্কার করতে সক্ষম হননি। সেহেতু আমাদেরকে পারিবারিকভাবে সচেতন থাকতে হবে। পারিবারিক সচেতনতাই হ্রাস করতে পারে এই মরণঘাতী করোনার প্রাদুর্ভাব। আমরা বিনা প্রয়োজনে কখনো ঘর বা বাসা থেকে বের হবো না।

তবে বিভিন্ন কারণে পরিবারের কাউকে না কাউকে বাইরে যেতে হয়। প্রয়োজনে যদি কেউ বাইরে গেলে তাকে অবশ্যই কিছু বিধি নিয়ম মানতে হবে। যারা গাড়ি ব্যবহার করেন, তারা গাড়িতে ওঠার আগে স্প্রে করতে হবে। বাইরে থেকে এসে কখনোই সরাসরি বাসায় বা ঘরে প্রবেশ করা যাবে না, বাইরে থাকতেই সেনিটাইজেশন দিয়ে হাত পরিষ্কার করে

সারা শরীরের স্প্রে করতে হবে এবং পরিধানকৃত কাপড় একটি ঝুড়িতে রাখতে হবে, একটা গামছা বা তোয়াল পড়ে সোজা বাথরুমে চলে গিয়ে সাবান দিয়ে গোসল বা স্নান করতে হবে তারপর পরিবারের সদস্যদের সাথে মিশতে পারবে। ঝুড়ির কাপড় আধা ঘন্টা সাবান পানিতে ডুবিয়ে রেখে ধুতে হবে।

দেশের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এ বি এম আব্দুল্লাহ সাহেবের মতে ক্ষার যুক্ত সাবান ব্যবহার করা যেতে পারে। করোনা প্রোটিন জাতীয় জীবাণু। ক্ষার জাতীয় পদার্থে টিকে থাকতে পারে না। আমরা জানি যে, করোনা ভাইরাস অতি ক্ষুদ্র হওয়ার কারণে সাধারণ কাপড়ের মাক্স দিয়ে সহজে করোনা জীবাণু নাক, মুখ, চোখ দিয়ে আমাদের ফুসফুসে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়।

তাই আমাদেরকে অন্তত ৩ লেয়ারের মাক্স ব্যবহার করা উচিত। এতো সতর্কতা গ্রহণ করেও আমরা নিশ্চিত হতে পারবো না যে, মরণঘাতী করোনাভাইরাস থেকে আমরা মুক্ত! যদি পরিবারের কারো হাচি, কাঁশি, সর্দি, জ্বর বা শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় তাকে বিশেষভাবে এক রুমে রাখতে হবে, সে যেন কারো সংস্পর্শে না আসে অন্তত ১৪ দিন। ঘন ঘন মাক্স পরিবর্তন করতে হবে।

রোগীর কফ, থুথু টিস্যু বা ছেড়া কাপড়ে জড়িয়ে নিদির্ষ্ট স্থানে ফেলতে হবে যেন কোনো সুস্থ মানুষের নাগালে না আসে। রোগীর পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও মাক্স পরতে হবে। আক্রান্ত রোগীকে সেবা করতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে কুসুম গরম পানিতে প্রচুর লেবুর রস খাওয়াতে হবে, ভিটামিন সি জাতীয় প্রচুর খাবার খাওয়াতে হবে। তাছাড়া কুসুম গরম পানিতে লবণ দিয়ে গারগেল করতে হবে।

অতিরিক্ত শ্বাসকষ্ট হলে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে হবে, সাথে নেবুলাইজার মেশিন কিনতে পারলে খুব ভালো হয়। খুব গলা ব্যথা থাকলে ডাক্তারের পরামর্শে এন্টিবায়োটিক খেতে হবে। বর্তমানে হট লাইনে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া যায়। আমরা অবগত আছি যে, দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভেন্টিলেশনের সুবিধা নেই, তা অতিসত্বর যোগান দেওয়াও সম্ভব নয়।

তাই আমাদেরকে বেশি সচেতন থাকতে হবে। যেন আমরা করোনা আক্রান্ত না হই। সরকার কতোদিন লকডাউন দিতে পারবে! শুধু লকডাউন দিলেই হবে না! খাদ্য সরবরাহ করবে কে? দেশের মানুষ এমন ধনী নয় যে মাসের পর মাস বসে বসে খেতে পারবে। আমাদের দেশও ধনী নয় যে সরকার প্রতিটি পরিবারে খাবার পৌঁছে দিতে পারবে। দেশের অধিকাংশ মানুষ খেটে খাওয়া বা চাকুরির ওপর নির্ভরশীল।

আর বিভিন্ন কারখানার মালিকরা কোত্থেকে শ্রমিকদের মাসের পর মাস বসিয়ে বেতন দিবে? শুধু এক তরফাভাবে কথা বললে হবে না। আমাদেরকে বাস্তব সম্মত চিন্তা করতে হবে। তাই সরকারকে বাধ্য হয়ে লক ডাউন শিথিল করতে হবে। না হলে গরীব বা চাকরিজীবীরা না খেয়ে এমনিতেই মরে যাবে।

গরীবদের ভাষ্য, না খেয়ে মরা আর অসুস্থ হয়ে মরা একই কথা। না খেয়ে মরার আগে যুদ্ধ করে মরি। সচেতন থেকে আমরা এই জীবন যুদ্ধে জয়ী হতে পারবো। আসুন আমরা সচেতন হই আর সবাইকে সাথে নিয়ে বাঁচি।

সকালের-সময়/এমএফ

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ