ডিজিটাল ওজন স্কেলের ফাঁদে ক্রেতা, কেজি প্রতি ১৫০-২০০ গ্রাম কম


৮ জানুয়ারি, ২০১৯ ২:৫১ : পূর্বাহ্ণ

সকালেরসময় রিপোর্ট:: চট্টগ্রাম মহানগর সবকটি বাজারে ডিজিটাল ওজন স্কেলের ফাঁদে ঠকছেন ক্রেতারা। প্রতিটি স্কেলে কেজি প্রতি ১৫০-২০০ গ্রাম কম। বিশেষ করে মাছ, মুরগি, মাংস ও ফলের দোকানগুলোতেই চলছে ওজনে ঠকানোর কারবার, ক্রেতারা পণ্য ক্রয়ের পর বিশ্বস্ত কোনো দোকানে তা পুনরায় ওজন করলে দেখা যায় পরিমাণ কম থাকে। এ নিয়ে ক্ষোভ থাকলেও বিক্রেতাদের কাছে অসহায় ক্রেতারা। আবার অন্যদিকে বিশেষ কৌশলে ডিজিটাল স্কেলে চুরির মাধ্যমে মোটা অঙ্কের মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা। সেখানেও তাকিয়ে থাকা ছাড়া কিছুই করার থাকেনা ক্রেতাদের।

চট্টগ্রাম শহরে ঘনবসতি এলাকা চকবাজার, এই বাজারে রয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিসের বাজার, বিশেষ করে কাচাবাজার ঘিরে রয়েছে বড় একটি সেন্ডিকেট, তাও আবার জিটাল ওজন স্কেলে ফাঁদে ফেলে ক্রেতাদের টকানোর সিন্ডিকেট। প্রতিটি স্কেলে কেজি প্রতি ১৫০-২০০ গ্রাম কম দেয় তারা। বিশেষ করে মাছ, মুরগি, মাংস ও ফলের দোকানগুলোতেই চলছে ওজনে কম দেওয়ার কাজকারবার। পণ্য ক্রয়ের পর বিশ্বস্ত কোনো দোকানে তা পুনরায় ওজন করার পর বিষয়টি ধরা পড়ছে। এ নিয়ে ক্ষোভ বিরাজ করলেও বিক্রেতাদের কাছে অসহায় ক্রেতারা। আর বিশেষ কৌশলে ডিজিটাল স্কেলে চুরির মাধ্যমে মোটা অঙ্কের মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছে অসাধু এই ব্যবসায়ীরা।

জানা গেছে, মুরগি ও মাছের দোকানগুলোতে ডিজিটাল স্কেলে ওজনে কম দেওয়ার সুযোগের মূল কারণ হচ্ছে, এসব ভোগ্যপণ্য ওজনের পর বিক্রেতা নিজেই তা জবাই করে কেটে-কুটে পরিষ্কার-করে দিচ্ছে। ফলে ওজনে কম দেওয়ার বিষয়টি অধিকাংশ ক্ষেত্রে যাচাই করার সুযোগ পাচ্ছেন না ক্রেতারা। একই অবস্থা গরু ও খাসীর ও মুরগীর মাংসের ক্ষেত্রেও। ওজন করার পর বিনে পয়সায় মাংস কুটে দিচ্ছে বিক্রেতারা। এ সুবাদে পঁচা-বাসী মাংসও মিশিয়ে দিচ্ছে। ফলের দোকান, তরিতরকারির দোকানের প্রতিটি স্কেলেও ওজনে চলছে কৌশলী কারচুপি।

এই বিষয়ে এক মুরগী ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এখানে স্থানীয় নেতাদের ও প্রশাসনকে টাকা দিয়ে আমরা এই কাজ করছি। সম্প্রতি নগরীর চকবাজার কাচাবাজার বাজার থেকে শিরিন নামক এক নারী মুরগি কিনে তা একটি মুদির দোকানে যাচাই করেন। এতে ১৮০ গ্রাম কম দেখে পুনরায় মুরগি বিক্রেতার কাছে যান। তিনি ভুল স্বীকার করে ১৮০ গ্রামের টাকা ফেরত দিয়ে ওই নারীকে চলে যেতে বলেন। কিন্তু নাছোরবান্দা নারী স্কেলে মুরগি মাপতে বলেন। এ সময় ওজনের হের ফেরের বিষয়টি ধরা পড়ে। যা দেখে উপস্থিত অনেকে কারচুপির কথা বলেন। ততক্ষণে পাশের মুরগি বিক্রেতাদের কয়েকজন জোট হয়ে ক্রেতাদের ধমকাতে থাকেন। নিরুপায় ক্রেতারা ডিজিটাল বাংলাদেশের ডিজিটাল চুরি বলে ক্ষোভ ঝারতে থাকেন।

গতকাল সোমবার নগরীর বহদ্দারহাট থেকে চারটি ফার্মের মুরগি কিনেন মোহাম্মদ জমির। যার ওজন হয় আট কেজি ৮০০ গ্রাম। ওই সময় ক্রেতা বলেন, জবাই করার দরকার নেই। আমি বাসায় নিয়ে যাব। কিন্তু বিক্রেতা তা জবাই ও পরিষ্কার করে দেয়ার জন্য জোর করতে লাগলেন। বললেন পয়সা দিতে হবে না। শেষ পর্যন্ত ক্রেতা মুরগি নিয়ে তা অন্যত্র মেপে এসে বললেন, এতে আট কেজিরও কম আছে। শুরু হল কথা কাটাকাটি ।

বিক্রেতার যুক্তি ওজনের পর একবার মুরগি পায়খানা করলেও ১০০ গ্রাম কমে যায়। সে হিসেবে ওজন কমতেই পারে। তাৎক্ষণিকভাবে মুদির দোকান থেকে কেনা এক কেজি পিয়াজ তার স্কেলে মাপতে দেন ক্রেতা। যা এক কেজি ১৭০ গ্রাম হয়। ক্রেতার প্রশ্ন কারচুপি না থাকলে এক কেজির পিয়াজ এক কেজি ১৭০ গ্রাম হল কি করে। কথা কাটাকাটি এক পর্যায়ে রুপ নেয় ঝগড়ায়। তখন মুরগি বিক্রেতা সাফ জবাব দেন, যেন আছে তেন ল বেডা। ভালা লাইলি আইছ নো আইলি নো আইছ। মুরগি বিক্রেতা এ সময় আরো বলেন, বাজারের সব মাল বিক্রেতার ডিজিটাল স্কেলে একই মাপ। এর বাইরে তো আয়ই আর যেইন ন পাইরগুম ।

এ ব্যাপারে চকবাজার ফুলতলা বাজারে মা পোল্ট্রি সেলস্ সেন্টারের কর্মচারী মো. সাহাব উদ্দিন বলেন, আমাদের ওজন স্কেলে কোনো কারচুপি নেই। আমরা কম দিলেও তা বাইরে দেখার সুযোগ আছে। কিন্তু মাছের দোকান, তরকারির দোকান, ফলের দোকানের মতো ভাসমান দোকানগুলোতে তা যাচাই করার সুযোগ নেই। ফলে এসব দোকানীরা ক্রেতাদের ঠকাচ্ছে।

এ ব্যাপারে চকবাজারের এক ফল বিক্রেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ব্যবসা করি লাভের আশায়। কিন্তু ফল তো পচনশীল জিনিষ। সবমিলিয়ে টিকে থাকতে হলে ওজনে কম দিতেই হবে। তা নাহলে কেউ ফলের ব্যবসা করতে পারবে না। ডিজিটাল স্কেলে কম দেওয়ার পদ্ধতি কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেন স্কেলের ভেতরে ওজনের স্প্রিংয়ের সাথে ১৫০-২০০ গ্রাম ওজনের কোনো কিছু লাগিয়ে দিলে তো হয়।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াছ হোসেন বলেন, ওজনে কারচুপি করা মারাত্মক অপরাধ। আগে কম ওজনের বাটখারা চোরাই বাজার থেকে কিনে ওজনে ঠকানো হতো। এখন ডিজিটাল স্কেলেও কারচুপি করছে ব্যবসায়ীরা। এটা ক্রেতাদের বিশ্বাসের ওপর চরম আঘাত। এ ব্যাপারে শিগগিরি ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো হবে।

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ