বিষয় :

বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু–চলছে বয়ান


নিজস্ব প্রতিবেদক, টঙ্গী ২০ জানুয়ারি, ২০২৩ ১০:১৭ : পূর্বাহ্ণ

টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শেষ হওয়ার চারদিন পর শুক্রবার বাদ ফজর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে এবারের বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। প্রথম পর্বের ইজতেমায় অংশ নেন জোবায়ের পন্থীদের মুসল্লি এবার বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিচ্ছেন সা’দ পন্থী মুসল্লি।

শুক্রবার বাদ ফজর পাকিস্তানের মাওলানা ওসমান এর আম বয়ানের মধ্যদিয়ে ইজতেমার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। তাৎক্ষণিক ভাবে তা বাংলায় তরজমা করেন মাওলানা জিয়া বিন কাসিম। ইজতেমা ময়দানে অবস্থনরত বিদেশী মুসল্লিদের জন্য মূল বয়ানটি আবার তাদের নিজ নিজ ভাষায়ও তাৎক্ষণিক অনুবাদ করা হচ্ছে।

এছাড়া বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের মিডিয়া সমন্বয়ক মোহাম্মদ সায়েম বলেন, বিশ্ব ইজতেমার মূল পর্ব শুক্রবার থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বুধবার থেকেই দলে দলে তাবলীগ মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে এসে অবস্থান নিয়েছেন। মুসল্লিরা দলে দলে মাঠের ভেতরে ঢুকে নিজ নিজ জেলার খিত্তায় অবস্থান নিতে শুরু করেছেন।

লাখ লাখ মুসল্লির উপস্থিতিতে ইজতেমা ময়দান পূর্ণ হয়ে গেছে। বাস, ট্রাক, ট্রেন পায়ে হেঁটে টুপী-পাঞ্জাবী পরিহিত মুসল্লিরা টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে আসছেন। টঙ্গীতে মুসল্লিদের যেন ঢল নেমেছে। সমস্ত ইজতেমা ময়দান পূর্ণ হয়ে গেছে। রোববার আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত মুসল্লিদের এ আগমন অব্যাহত থাকবে। ইতোমধ্যে পাঁচ সহস্রাধিক বিদেশী মুসল্লি ময়দানের বিদেশী তাবুতে অবস্থান নিয়েছেন।

উপস্থিত এসব মুসল্লিদের জন্য বৃহস্পতিবার থেকেই প্রাথমিক আম বয়ান শুরু হলেও ইজতেমার মূল আ’ম বয়ান শুরু হয়েছে শুক্রবার (২০জানুয়ারি) বাদ ফজর থেকে। খাবার ও গোসলের বিরতি দিয়ে রোববার আখেরি মোনাজের আগ পর্যন্ত চলবে ঈমান-আমলসহ তাবলীগের ৬ উসুলের বয়ান।

বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের বিশিষ্ট আলেমগণ মূল বয়ান করছেন। মূল বয়ান বাংলাসহ বিভিন্ন ভাষা-ভাষীদের জন্য তাৎক্ষণিক তরজমা করা হচ্ছে। ময়দানে শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বিভিন্ন কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র/শিক্ষকসহ পেশাজীবীদের জন্যও আলাদা আলাদা বয়ান অনুষ্ঠিত হয়েছে।—রোববার আখেরি মোনাজাতের আগে হেদায়তী বয়ান শেষে অনুষ্ঠিত হবে আখেরি মোনাজাত।

মাওলানা সা’দ কন্ধলভীর ছেলেদের অংশ গ্রহণ: বিশ্ব ইজতেমার আয়োজক কমিটির সুরা সদস্য মাওলানা সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম জানান, ২০১৯ সাল থেকে ভারতের মাওলানা সা’দ কান্ধলভী বাংলাদেশে বিশ্ব ইজতেমায় যোগ না দিলেও এবার বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় যোগ দিতে তার ছেলে মাওলানা ইউসুফ বিন সা’দ কান্ধলভী, মাওলানা সাঈদ বিন সা’দ কান্ধলভী, মাওলানা ইলিয়াস বিন সা’দ কান্ধলভী এবং মেয়ের জামাতা মাওলানা হাসান বৃহস্পতিবার দুপুরে টঙ্গীর ইজতেমা মাঠে এসে যোগ দিয়েছেন। সা’দ-এর তিন ছেলেই এখানে বয়ানও করবেন বলেন তিনি।

বিশ্ব ইজতেমার মিডিয়া সমন্বয়কারী মোহাম্মদ সায়েম বলেন, শুক্রবার জুম্মার নামাজ ও বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন মাওলানা সা’দ কান্ধলভীর বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ কান্ধলভী। শুক্রবার দুপুর সোয়া একটার দিকে জুম্মার খুৎবা দেয়া হবে বলেন তিনি।

এক মুসল্লির মৃত্যু

মিডিয়া সমন্বয়কারী মোহাম্মদ সায়েম বলেন, ইজতেমায় যোগ দিতে আসা বরগুনার এক মুসল্লি বার্ধক্যজনিত অসুখে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টায় ভুগে মারা গেছেন। নিহত মফিজুল ইসলামের (৭৫) পিতার নাম হলো আব্দুল আলীম রানা।

বয়ানকারীদের তালিকা

শুক্রবার বাদ ফজর পাকিস্তানের মাওলানা ওসমান, তার বাংলায় তরজমা করবেন মাওলানা জিয়া বিন কাসিম, সকাল ১০টায় তালিম করবেন মাওলনা ইউসুফ কান্ধলভী, তার বাংলা তরজমা করবেন মাওলানা মুনির বিন ইউসুফ, জুম্মার পর মাওলানা সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম (বাংলাদেশি), বাদ আছর সাইদ বিন সা’দ কান্ধলভী, তার বাংলা তরজমা করবেন মুফতি আজিম উদ্দিন, বাদ মাররিব বয়ান করবেন ভারতের মাওলানা ইউসুফ বিন সা’দ কান্ধলভী, তার বয়ানের তরজমা করবেন মাওলানা জিয়া বিন কাসিম।

শনিবার বাদ ফজর ভারতের মাওলানা ইয়াকুব, তার বয়ান বাংলায় তরজমা করবেন মাওলানা মুনির বিন ইউসুফ, বাদ জোহর বয়ান করবেন তুর্কির মাওলনা ওমর, বাদ আছর বয়ান করবেন মাওলানা ইলিয়াস বিন সা’দ কান্ধলভী, তার বয়ান বাংলায় তরজমা করবেন মাওলানা ওসামা ইসলাম বাদ এবং মাগরিব ভারতের মাওলানা আব্দুস সাত্তার তার বয়ান তরজমা করবেন মাওলানা জিয়া বিন কাসিম।

রোববার বাদ ফজর- ভারতের মাওলানা বাংলাদেশী মুরসালিন, হেদায়তী বয়ান করবেন ভারতের মাওলানা ইউসুফ বিন সা’দ কান্ধলভী, তার বাংলায় তরজমা করবেন মাওলানা জিয়া বিন কাসিম। এরপর আখেরি মোনাজাতও পরিচালনা করবেন মাওলানা ইউসুফ বিন কান্ধলভী।

গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম জানান, গাজীপুর মহানগর পুলিশের প্রথম পর্বের মতো দ্বিতীয় পর্বও ভালভাবে শেষ করতে চাই। তার জন্য সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রথম পর্বে অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আমরা আরো সতর্কভাবে এবং সিকিউরডভাবে এ পর্ব সম্পন্ন করবো আশা করছি। আগের সকল জনবল ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর প্রায় ১০হাজার সদস্য ইজতেমায় কাজ করছেন। দ্বিতীয় পর্বেও ব্যাপক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আগত মুসল্লিদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুরো ইজতেমা ময়দানকে কয়েকটি সেক্টরে ভাগ করে নিরাপত্তা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

৮৫ খিত্তায় মুসল্লিদের অবস্থান

ইজতেমা ময়দানে বিদেশী মুসল্লিদের জন্য পশ্চিম-উত্তর দিকে আলাদ তাবু নির্ধারিত রয়েছে। সেখানে আধুনিক সব ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

আর দেশী মুসল্লিদের অবস্থানের জন্য দ্বিতীয় পর্বে পুরো ইজতেমা ময়দানকে জেলা ওয়ারী ৮৫টি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। আগত ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা যে সমস্ত খিত্তায় অবস্থান করবেন তা হলো- ঢাকা (খিত্তা নং ১-৪, ৬-২২), টঙ্গী (খিত্তা নং-৪), নরসিংদী (খিত্তা নং-২৩), গোপালগঞ্জ (খিত্তা নং-২৪), মাদারীপুর (খিত্তা নং-২৫), ফরিদপুর (খিত্তা নং-২৬), রাজবাড়ী (খিত্তা নং-২৭), শরীয়তপুর (খিত্তা নং-২৮), নারায়ণগঞ্জ (খিত্তা নং-২৯), কিশোরগঞ্জ (খিত্তা নং-৩০), টাঙ্গাইল (খিত্তা নং-৩১), মানিকগঞ্জ (খিত্তা নং-৩২), মুন্সীগঞ্জ (খিত্তা নং-৩৩), গাজীপুর (খিত্তা নং-৩৪), বগুড়া (খিত্তা নং-৩৫), নওগাঁ (খিত্তা নং-৩৬), নাটোর (খিত্তা নং-৩৭), মৌলভীবাজার (খিত্তা নং-৩৮), সিলেট (খিত্তা নং-৩৯), রাজশাহী (খিত্তা নং-৪০), চাঁপাইনবাবগঞ্জ (খিত্তা নং-৪১), পাবনা (খিত্তা নং-৪২), সিরাজগঞ্জ (খিত্তা নং-৪৩), জয়পুরহাট (খিত্তা নং-৪৪), ব্রাহ্মণবাড়িয়া (খিত্তা নং-৪৫), চাঁদপুর (খিত্তা নং-৪৬), কুমিল্লা (খিত্তা নং-৪৭), খাগড়াছড়ি (খিত্তা নং-৪৮), নেত্রকোনা (খিত্তা নং-৪৯), ময়মনসিংহ (খিত্তা নং-৫০), জামালপুর (খিত্তা নং-৫১), সুনামগঞ্জ (খিত্তা নং-৫২), হবিগঞ্জ (খিত্তা নং-৫৩), শেরপুর (খিত্তা নং-৫৪), কক্সবাজার (খিত্তা নং-৫৫), রাঙ্গামাটি (খিত্তা নং-৫৬), বান্দরবন (খিত্তা নং-৫৭), চট্টগ্রাম (খিত্তা নং-৫৮), নোয়াখালী (খিত্তা নং-৫৯), ফেনী (খিত্তা নং-৬০), লক্ষ¥ীপুর (খিত্তা নং-৬১), পিরোজপুর (খিত্তা নং-৬২), বরগুনা (খিত্তা নং-৬৩), ঝালকাঠি (খিত্তা নং-৬৪), পটুয়াখালী (খিত্তা নং-৬৫), ভোলা (খিত্তা নং-৬৬), বরিশাল (খিত্তা নং-৬৭), কুষ্টিয়া (খিত্তা নং-৬৮), চুয়াডাঙ্গা (খিত্তা নং-৬৯), বাগেরহাট (খিত্তা নং-৭০), নড়াইল (খিত্তা নং-৭১), খুলনা (খিত্তা নং-৭২), যশোর (খিত্তা নং-৭৩), মাগুরা (খিত্তা নং-৭৪), ঝিনাইদহ (খিত্তা নং-৭৫), সাতক্ষীরা (খিত্তা নং-৭৬), মেহেরপুর (খিত্তা নং-৭৭), নীলফামারী (খিত্তা নং-৭৮), দিনাজপুর (খিত্তা নং-৭৯), রংপুর (খিত্তা নং-৮০), লালমনিরহাট (খিত্তা নং-৮১), ঠাকুরগাঁও (খিত্তা নং-৮২), গাইবান্ধা (খিত্তা নং-৮৩), পঞ্চগড় (খিত্তা নং-৮৪), কুড়িগ্রাম (খিত্তা নং-৮৫)।

গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমার জোবায়ের পন্থীদের) প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছে ১৩ জানুয়ারি থেকে ১৫ জানুয়ারি। চার দিন বিরতি দিয়ে আবার ২০ জানুয়ারি শুরু হয়েছে বিশ্ব ইজতেমার (সা’দ পন্থীদের) দ্বিতীয় পর্ব। আগামী রোববার (২২ জানুয়ারি) আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমা। ২০২০ সালে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর ২০২১ ও ২০২২ সালে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়নি।

সকালের-সময়/এমএফ

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ