হরিলুটের কারখানা পাহাড়তলী ক্যারেজ ওয়ার্কশপ!


সকালের-সময়  ১৩ এপ্রিল, ২০২২ ২:৪০ : পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক: পাহাড়তলী রেলওয়ের ক্যারেজ ওয়ার্কশপে যাত্রীবাহী বগি মেরামতের কাজ হয়। সারাদেশের রেল যোগাযোগের স্বার্থে পাহাড়তলীতে অবস্থিত এ ওয়ার্কশপের গুরুত্ব অধিক। সুযোগটি কাজে লাগিয়ে সেখানে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা ব্যাপক হরিলুটে মেতেছেন।

ওয়ার্কশপে দায়িত্বরতদের পছন্দের ঠিকাদার ছাড়া সেখানে কেউ কাজ নিতে পারে না। সেখানে গড়ে উঠেছে সংঘবদ্ধ ঠিকাদার-কর্মকর্তার সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট করোনাকাল থেকে এ পর্যন্ত বহু টাকা লোপাট করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সূত্র জানায়–পাহাড়তলী ক্যারেজ ওয়ার্কশপের বিভাগীয় তত্বাবধায়ক নির্মাণ তাপস কুমার শীল ও কর্মব্যবস্থাপক নির্মাণ রাশেদ লতিফ সেখানে একছত্র আধিপত্য গড়ে তুলেছেন। সিএমই পূর্বের অধীনে হওয়ায় চট্টগ্রামের রেলের শীর্ষ কোন কর্মকর্তাকে পাত্তাই দেন না তারা। নিজেদের পছন্দের কয়েকজন ঠিকাদার ছাড়া সেখানে কেউ কাজ করতে পারেন না।

সরেজমিন দেখা যায়–নানা ছুঁতোয় অন্যদের কাজ দিতে চান না তাপস ও রাশেদ। সেখানে তাদের প্রশ্রয়ে ঠিকাদাররাও বেপরোয়া। এ কারণে সাংবাদিকদের ওয়ার্কশপ সংক্রান্ত কোন তথ্য দিতেও অপারগতা প্রকাশ করেন তারা। কোন সাংবাদিক কারখানার ভিতরে প্রবেশ করতে চাইলে বাধার সম্মুখীন হতে হয়। গেইটে বাঁধা দেন তাপস-রাশেদের নিয়ন্ত্রিত লোপাটের অংশিদার আরএনবি সদস্যরা।

গত এক বছরে পাহাড়তলী ক্যারেজ শপে মেরামত কারখানায় কারা কাজ পেয়েছে ও পণ্য কেনাকাটার তথ্য জানতে গেলে সকালের-সময় ডটকম এর গাড়ি ভিতরে প্রবেশ করতে দেয়নি আরএনবি সদস্যরা। তারা দুই স্যারের অনুমতি ছাড়া কারখানায় কোন সাংবাদিক প্রবেশ করতে পারে না বলে সাফ জানিয়ে দেন। এর পর প্রতিবেদক রাশেদ লতিফকে বার বার কল দিলে তিনি কল রিসিভ না করে বেলাল নামক এক ঠিকাদার দিয়ে প্রতিবেদকে হুমকি দেন।

তবে–হরিলুটের বিষয়ে জানতে চাইলে পাহাড়তলী ক্যারেজ ওয়ার্কশপ মেরামত কারখানার বিভাগীয় তত্বাবধায়ক তাপস কুমার শীলও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা ছাড়া তথ্য দিতে অপারগতা জানান।

অনুসন্ধানে জানা যায়, একটি যাত্রীবাহী বগি মেরামতের নামে মূলত বড় ধরনের অনিয়ম হয়। প্রতিমাসে যে পরিমান যাত্রীবাহী বগি মেরামত করা হয় তার দ্বিগুন বিল ভাউচার তৈরি করেন তাপস কুমার ও রাশেদ লতিফের সিন্ডিকেট। এছাড়া পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা (পিপিআর) সিস্টেমে নিজের পছন্দের ঠিকাদার দিয়ে ইচ্ছেমত পণ্য কেনাকাটা করেন তারা। সন্ধ্যা হলেই যার ভাগবাটোয়ারা হয় কাজির দেউরির রেডিসন ব্লু ও বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে।

নিয়মানুযায়ী ওয়ার্কশপ গেট দিয়ে কেউ পণ্য নিয়ে প্রবেশ কিংবা বের হলে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর অনুমতি লাগে। কিন্তু আরএনবির কাছে পণ্য আনা-নেওয়ার কোন নোট সংরক্ষিত নেই। তারা বলেন স্যাররা নিষেধ করেছেন পন্য আনা-নেওয়ার কোন নোট সংরক্ষিত রাখা যাবে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ঠিকাদার বলেন, ক্যারেজ ওয়ার্কশপে যারা মালামাল সরবরাহের কাজ পান, তারা নিয়মিত পান। এখানে পছন্দের বিষয়টি প্রাধান্য দেন  তাপস কুমার শীল ও রাশেদ লতিফ। সেখানে নতুন কোন ঠিকাদার কাজ করতে গেলেই ঝামেলা বাঁধে। চার থেকে পাঁচ ঠিকাদার নিয়মিত কাজ করেন সেখানে। তারা যেটা বলে সেটা করেন তাপস কুমার ও রাশেদ লতিফ।

সূত্র জানায়, সম্প্রতি রেলে সম্পদ ব্যবস্থাপনা, বগি সংগ্রহসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের ১০টি উৎসে দুর্নীতি চিহ্নিত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসব দুর্নীতি প্রতিরোধে রেলের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনাসহ ১৫ দফা সুপারিশ করেছে কমিশন। যার প্রতিবেদন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের কাছে তুলে দেয়া হয়।

এ বিষয়ে রেলওয়ের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক রুহুল কাদের আজাদকে একাধিক বার কল ও এসএমএস দিয়েও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।

দ্বিতীয় পর্বে তাপস-রাশেদ সিন্ডিকেটের আরো ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হবে সাথে থাকুন…..ধন্যবাদ।

এসএস/ফোরকান

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ