জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ 

স্ত্রীসহ সাবেক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের দুই মামলা


নিজস্ব প্রতিবেদক ৮ মে, ২০২৩ ১২:১৮ : অপরাহ্ণ

চাকরির শুরুতে ছিলেন সার্জেন্ট। সেখান থেকে পেট্রোল ইন্সপেক্টর এবং সর্বশেষ সহকারী কমিশনার (এসি) হিসেবে দায়িত্ব পালন। এরপর দীর্ঘ চাকরি জীবন শেষ করে চলে যান অবসরে। এবিএম শাহাদাৎ হোসেন মজুমদার নামের সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা ও তার স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা চৌধুরীর দেড় কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পেয়েছে দুদক। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের পাশাপাশি এই দম্পতি ৪৫ লাখ ৩৪ হাজার ৩২৬ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অপরাধ করেছেন।

এই ঘটনায় দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম–১ এ পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছেন একই কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. এনামুল হক। দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে গতকাল তিনি মামলা দুটি দায়ের করেন। দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম–১ এর উপপরিচালক নাজমুচ্ছায়াদাত এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলার আমজাদহাট এলাকার উত্তর তারাকুচা গ্রামের মৃত মোশারফ হোসেন মজুমদারের ছেলে এবিএম শাহাদাৎ হোসেন মজুমদার। নগরীর পাহাড়তলী থানাধীন দক্ষিণ কাট্টলীর চুনা ফ্যাক্টরী রোড এলাকায় স্ত্রীসহ বসবাস করে আসছেন। এবিএম শাহাদাৎ হোসেন মজুমদার সিএমপির অলংকার পুলিশ ট্রাফিক বক্সে পরিদর্শক এবং এসি হিসেবে মনসুরাবাদের পুলিশ লাইনে (ডাম্পিংয়ে) কর্মরত ছিলেন।

সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা এবিএম শাহাদাৎ হোসেন মজুমদারের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার এজহারে বলা হয়, এবিএম শাহাদাৎ হোসেন মজুমদার ২০১৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর দুদকে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। এতে তিনি ২ কোটি ১৬ লাখ ৫৯ হাজার ৯৩৬ টাকার স্থাবর ও ১০ লাখ ৮৬ হাজার ৮০ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট ২ কোটি ২৭ লাখ ৪৬ হাজার ১৬ টাকার সম্পদ অর্জনের ঘোষণা দেন।

কিন্তু যাচাইকালে দেখা যায়, তার নামে ২ কোটি ২৪ লাখ ৩২ হাজার ৪৫৮ টাকার স্থাবর ও ২১ লাখ ৪৬ হাজার ৮০ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট ২ কোটি ৪৫ লাখ ৭৮ হাজার ৫৩৮ টাকার সম্পদ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে তিনি দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ১৮ লাখ ৩২ হাজার ৫২২ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য অসৎ উদ্দেশ্যে গোপন করেছেন।

সম্পদ বিবরণী যাচাইয়ে আরো দেখা যায়, ৫ তলা মার্কেট নির্মাণে শাহাদাৎ হোসেন ব্যয় প্রদর্শন করেন ৭৫ লাখ ৯৮ হাজার ৯৬০ টাকা। কিন্তু গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলীর পরিমাপে (সিভিল) ৮৬ লাখ ৪৬ হাজার ৯৭২ টাকা নির্মাণ ব্যয় পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে তিনি ১০ লাখ ৪৮ হাজার ১২ টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জনের মূল্য কম প্রদর্শন করেন।

আয়কর নথি অনুযায়ী শাহাদাতের হাতে ৯ লাখ ৪ হাজার ২৯০ টাকা ও ব্যাংকে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৭১০ টাকাসহ মোট ১০ লাখ ৬০ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ থাকার তথ্য পাওয়া যায়। কিন্তু সম্পদ বিবরণীর অস্থাবর কলামে হাতে ও নগদে কোনো সম্পদ থাকার ঘোষণা প্রদান করেননি তিনি। গ্রহণযোগ্য আয়ের চেয়ে ৬৮ লাখ ১৮ হাজার ২৮৭ টাকার বেশি সম্পদের মালিক শাহাদাৎ হোসেন। জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে এটি অসঙ্গতিপূর্ণ।

শাহাদাতের স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা চৌধুরীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার এজহারে বলা হয়, শাহাদাতের মতো তার স্ত্রীও ২০১৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর দুদকে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। সেটি যাচাই শেষে দেখা যায়, রাজিয়া সুলতানা ২৭ লাখ ১ হাজার ৮০৪ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন।

পাশাপাশি ৭৫ লাখ ২৬ হাজার ৪৪৮ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ রয়েছে তার। এসব সম্পদের তিনি গ্রহণযোগ্য কোনো উৎস দেখাতে পারেননি। নিজেকে ব্যবসায়ী পরিচয় দিলেও এর স্বপক্ষে তিনি কোনো ট্রেড লাইসেন্স বা অন্য কোনও রেকর্ডপত্র উপস্থাপন করতে পারেননি।

মামলার বাদী দুদকের সহকারী পরিচালক মো. এনামুল হক বলেন, শাহাদাৎ হোসেন মজুমদার ও তার স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা মোট ৪৫ লাখ ৩৪ হাজার ৩২৬ টাকা মূল্যের সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন। পাশাপাশি তারা দুজনে মিলে প্রায় দেড় কোটি টাকা (১ কোটি ৪৩ লাখ ৪৪ হাজার ৪৪৮ টাকা) মূল্যের সম্পদ জ্ঞাত আয়বহির্ভূতভাবে অর্জন করেছেন।

এসএস

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ