লোকোমোটিভ ক্রয়ে অনিয়ম–তদন্তে প্রমাণ হওয়ার পরও ব্যবস্থা নেই!


নিজস্ব প্রতিবেদক ১১ জুন, ২০২২ ৩:৪৪ : পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ রেলওয়ের লোকোমোটিভ ক্রয়ে তথ্য গোপন ও অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে তদন্তে। প্রকল্প পরিচালক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের না জানিয়ে বরং বিভ্রান্তমূলক পত্র দিয়েছেন ইআরডি, আইএমইডি ও এডিবিকে। এতে করে প্রকৃত তথ্য আড়ালে থেকে যায় এবং লোকোমোটিভ জাহাজীকরণের পর দেশেও চলে আসে।

এ ঘটনায় বাংলাদেশ রেলওয়ের আর্থিক ক্ষতি সাধিত হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। এমনকি লোকোমোটিভগুলো দেশে আসার পর ১৩ মাস অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে ছিল।

সূত্রমতে, বাংলাদেশ রেলওয়ের সঙ্গে কোরিয়ান সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এইচআরসির চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী লোকোমোটিভের সার্বিক ধারণক্ষমতা ২ হাজার হর্স পাওয়ার, সংযুক্ত ডিজেল ইঞ্জিন ২ হাজার ২০০ হর্স পাওয়ার, মেইন অলটারনেটর টিএ-১২ মডেলের ৩ হাজার হর্স পাওয়ার দেওয়ার কথা।

কিন্তু অলটারনেটরের হর্স পাওয়ার কমিয়ে ২ হাজার হর্স পাওয়ার করা হয়। বিষয়টি দুই প্রকল্প পরিচালক জানলেও তা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানাননি বলে তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়। যদিও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান থেকে লোকোমোটিভের ডিজাইন চলাকালে ওজন ও আয়তনের সীমাবদ্ধতা দেখিয়ে অলটারনেটর পরিবর্তনের কথা জানিয়েছিল।

যা তৎকালীন প্রকল্প পরিচালকের উচিত ছিল প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিকে জানানো। ২০১৯ সালের ১১ অক্টোবর প্রকল্প পরিচালক হাসান মনসুরের বদলে প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্বে আসেন নুর আহাম্মদ হোসেন। তিনিও প্রকল্প বাস্তবায়নসংক্রান্ত সভায় বিষয়টি উত্থাপন করেননি। লোকোমোটিভ জাহাজীকরণের প্রায় দুই সপ্তাহ পরে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়।

এদিকে, প্রাক-জাহাজীকরণ সার্টিফিকেট (পিএসসি) ছাড়াই ১০টি লোকোমোটিভ গত ৩১ আগস্ট ২০২০ তারিখে চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছায়। তখন প্রকল্প পরিচালক লোকোমোটিভগুলোর ত্রুটি উল্লেখ করে নিরাপত্তা ও ডেমারেজ এড়ানোর জন্য জরুরি খালাসের প্রস্তাব করেন।

এমতাবস্থায় অতিরিক্ত মহাপরিচালক (আরএস) এই প্রস্তাবের আলোকে শর্তারোপ সাপেক্ষে খালাস করে নিরাপদ স্থানে রাখার নির্দেশনা প্রদান করেন। অতিরিক্ত মহাপরিচালক অন শিপমেন্ট ৬৫ শতাংশ পেমেন্ট স্থগিত রেখে লোকোমোটিভ ত্রুটির পরীক্ষানিরীক্ষার পর পরবর্তী সিদ্ধান্তের নির্দেশনা দেন। এ অবস্থায় আমদানিকৃত লোকোমোটিভ ১০টি ১৩ মাস অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকে।

পরে পরীক্ষানিরীক্ষা ও দায়-দায়িত্ব নির্ধারণের জন্য রেলপথ মন্ত্রণালয় একজন অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ফারুকুজ্জামানকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি বিস্তারিত পর্যালোচনা করে উভয় প্রকল্প পরিচালক, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ও প্রি-শিপমেন্ট প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করে।

তদন্তে দেখা যায়, প্রকল্প পরিচালক নুর আহম্মদ হোসেন এক্তিয়ার বহির্ভূতভাবে এই লোকোমোটিভ বিষয়ে ইআরডি, পরিকল্পনা কমিশন, আইএমইডি, এডিবিকে বিভ্রান্তমূলক পত্র প্রেরণ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আইএমইডির পর্যবেক্ষণের আলোকে বাংলাদেশ রেলওয়ে আরো একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।

উক্ত কমিটিও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ও দুই প্রকল্প পরিচালককে দায়ী করে। অন্যদিকে, সরকারের সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট অ্যান্ড টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ) ও আইএমইডির পরামর্শক্রমে লোকোমোটিভসমূহের কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য দুটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়।

উক্ত কমিটি লোকোমোটিভ ১০টি রেলবহরে যুক্ত ট্রেন চলাচলের পক্ষে মত দেয়। কিন্তু সময়ক্ষেপণ ও তথ্য গোপনে রেলওয়ের যে আর্থিক ক্ষতি সাধিত হয়েছে সে বিষয়ে তদন্ত কমিটি দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্হা নেওয়ার সুপারিশ করলেও কার্যকর ব্যবস্হা নেওয়া হয়নি।

সূত্র–আইপি

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ