পাহাড়তলী রেল কারখানায় পরতে পরতে অনিয়ম-দুর্নীতি!


নিজস্ব প্রতিবেদক ১৪ জুন, ২০২২ ২:১১ : পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম পাহাড়তলীতে অবস্থিত রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের কারখানায় যাত্রীবাহী কোচ ও মালবাহী ওয়াগনের মেরামত ও পুনর্বাসন কাজ করা হয়। এ কারখানার উপরই রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে চলাচলকারী সকল ট্রেনের প্রয়োজনীয় কোচ ও ওয়াগন সরবরাহ নির্ভর করে।

ফলে–এখানে কর্মব্যবস্থাপক (নির্মাণ) পদে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাকে যাত্রীবাহী কোচ ও মালবাহী ওয়াগনের মেরামত ও পুনর্বাসন কাজের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল, যন্ত্রাংশ যোগান, ক্রয়, বাজেট ব্যবস্থাপনা, শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি ও চাকুরি সংক্রান্ত বিষয় ব্যবস্থাপনা, জরুরি বা দুর্যোগকালীন অতিরিক্ত কোচ ও ওয়াগন মেরামতসহ অন্যান্য আনুষাঙ্গিক কাজ দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার সাথে সম্পাদন করতে হয়।

কিন্তু নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়–পাহাড়তলী কারখানায় কর্মরত রাশেদ লতিফ তার পছন্দের ঠিকাদার নিয়ে একটি সিন্ডিকেট বলয় তৈরি করেছেন এখানে। যারা যাত্রীবাহী কোচ ও মালবাহী ওয়াগন মেরামত ও পুনর্বাসন কাজের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল-যন্ত্রাংশ ক্রয়ে ব্যাপক অনিয়ম- দুর্নীতি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এক কথায় তিনি এখন কারখানার অঘোষিত রাজা বনে গেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, রেলওয়ে কারখানায় একটি বড় সিন্ডিকেট আছে। এরা প্রতি বছর রেলওয়ের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ক্রয় এবং মেরামতে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করে। এই সিন্ডিকেট সক্রিয় রাখতেই কর্মব্যবস্থাপক (নির্মাণ) রাশেদ লতিফ একান্ত ভুমিকা পালন করে যাচ্ছেন।

জানা যায়–ইঞ্জিনের যেকোন যন্ত্রাংশ ব্যবহারের পুর্বে গুনগত মান নিশ্চিত করার জন্য পাহাড়তলীতে রয়েছে রেলওয়ের নিজস্ব পরীক্ষাগার। সেখানে প্রত্যেকটি পণ্য পরীক্ষায় গুনগত মান সঠিক থাকলে ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু কারখানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তা না করেই নিম্নমানের মালামাল নিশ্চিন্তে ব্যহার করছেন। এর ফলে একদিকে যেমন অর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে সেবামুলক এই প্রতিষ্ঠানটি, অন্যদিকে থেকে যাচ্ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও।

পূর্বাঞ্চল রেলের খুচরা যন্ত্রাংশ ব্যবহারের আগে ল্যাবে পরীক্ষা করে সঠিক মান যাচাই করে ব্যবহার করার নিয়ম থাকলেও কতিপয় অসৎ কর্মকর্তা রাশেদ লতিফদের কমিশন বাণিজ্যের ফলে ঠিকাদারের সরবরাহকৃত মালামাল পরীক্ষা না করে ব্যবহার করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি ল্যাব টেষ্টে রিজেক্ট হওয়া মালামালও ব্যবহার করছেন পাহাড়তলী ক্যারেজ এবং ওয়াগন মেরামত কারখানার দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।

২০২০/২০২১ সালে মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর নামের রেলওয়ের এক সরবারাহকারি দেওয়া ফ্লোরিং কম্পোজিশন রেড ও ক্রিষ্টাল দানা পরীক্ষা ছাড়াই ব্যবহার করা হয়েছে। নিয়ম রক্ষার কারণে পরীক্ষার জন্য সেই ব্যবহার করা পণ্যের সেম্পল ল্যাবে পাঠিয়েছে চলতি বছরের মার্চে। সেখানে পরীক্ষায় প্রাপ্ত পলাফলে দেখা গেছে ব্যবহার করা পণ্যগুলো খুবই নিম্নমানের।

ফ্লোরিং কম্পোজিশন রেড এ ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড থাকার কথা মিনিমাম ২৫ শতাংশ কিন্তু সেটিতে আছে মাত্র ১৬ শতাংশ, একইভাবে ক্রিষ্টাল দানায় ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড থাকার কথা ৯৫ শতাংশ কিন্তু আছে মাত্র ৮০ শতাংশ। এছাড়া মোরশেদ নামের অপর এক সরবরাহকারির দেওয়া হাই স্পীড টুল এ কমপক্ষে ১৮ শতাংশ টাংস্টেন থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ৯ শতাংশ।

এ ব্যপারে জানার জন্য পাহাড়তলী পরীক্ষাগারের দায়িত্বে থাকা সহকারী পরীক্ষাগার মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন–আমরা শুধু পরীক্ষা করে রিপোর্ট প্রদান করি, কোনটা ব্যবহার করবে আর কোনটা রিজেক্ট করবে তার দায়িত্ব ব্যবহারকারীদের। নিম্নমানের পণ্য ব্যবহারের বিষয়ে তিনি আরো বলেন, যদি নিম্নমানের পণ্য ব্যহার করে থাকে তবে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বে রেল। সুতরাং ব্যবহারের আগে অবশ্যই গুনগত মান নিশ্চিত হওয়া উচিত।

এব্যপারে জানতে চাইলে পূর্বাঞ্চল রেলের পাহাড়তলী ক্যারেজ এবং ওয়াগন মেরামত কারখানার কর্মব্যবস্থাপক (নির্মাণ) রাশেদ লতিফকে একাধিক বার কল দেয়া হলেও তিনি কল রিসিভ করেনি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে সকালের-সময় ডটকমকে জানান, এই কারখানা ঘিরে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে, তারা সেখানে অনিয়ম-দুর্নীতির যেন বাসা বেঁধেছে, তাদের ব্যাপারে অসংখ্য অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে রেলের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সকালের-সময়/এমএফ

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ