দালাল সিন্ডিকেটে জিম্মি চট্টগ্রাম বিআরটিএ, ভোগান্তি চরমে!


মোহাম্মদ ফোরকান  ৪ মার্চ, ২০২৩ ১১:৩৮ : পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মহানগরীর বালুচরাস্থ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ, বিআরটিএ দফতরে দালালদের দৌরাত্ম্য কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না। গাড়ির ফিটনেস, ট্যাক্স টোকেন, ডিজিটাল নাম্বারপ্লেইট, নতুন গাড়ির রেজিস্ট্রেশন, মালিকানা পরিবর্তনসহ নানা কার্যক্রমে দালালদের দৌরাত্ম্যের কারণে প্রতিদিন হয়রানি ও আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছে সেবা প্রার্থীরা।

চট্টগ্রাম বিআরটিএ’র সেবাদান পদ্ধতি আংশিক ডিজিটাল হলেও দালালদের দৌরাত্ম কমেনি। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, গাড়ির নিবন্ধন, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ফিটনেস সার্টিফিকেট দেওয়াসহ প্রতিটি পদে বাড়তি টাকা না দিলে পোহাতে হয় চরম ভোগান্তি।

তবে—বিআরটিএর কর্মকর্তারা বলছেন, সাধারণ মানুষের অসচেতনতার কারণে দালালদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সড়ক পরিবহন নেতা সকালের-সময়কে বলেন, চট্টগ্রাম বিআরটিএ-তে ঘুষ আর দালাল ছাড়া কোন কাজই হয় না। এখানে কাজ হয় ঘুষের রেটের মাধ্যমেই। নিয়ম-মাফিক সব কাজ করতে চাইলেও ঘুষ আর দালালের মাধ্যমেই করতে হয়। কেউ একা কোন কাজ করতে চাইলে তাকে পদে পদে হয়রানি করা হয়। ফলে সেবা প্রার্থীরা দালালের মাধ্যমে বেশি টাকা দিয়েই কাজ করতে বাধ্য হন।

চট্টগ্রাম বিআরটিএ দফতরে ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে আসা মোহাম্মদ করিম বলেন, আমি আমার ব্যক্তিগত গাড়ি চালানোর জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে এসেছি। কিন্তু এখানে পদে পদে হয়রানি। শুধু ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানে ওয়ানস্টপ সেবা দেওয়ার কথা বলা হলেও প্রতিটি কাজেই ঘুরতে হয় নানা টেবিলে। ব্যাংকের পর্যাপ্ত বুথ না থাকায় ফি পরিশোধেও পোহাতে হয় ভোগান্তি।

লাইসেন্স নিতে আসা পেশাদার এক গাড়িচালক আব্দুল আজিজ জানান, সব ধরণের পরীক্ষা শেষে কাগজপত্র এবং টাকা জমা দেওয়ার এক বছরেও ড্রাইভিং লাইসেন্স হাতে পাননি। তিনি বলেন, দালাল ছাড়া এখানে কোন কাজই হয়না। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্ধারিত লোক দিয়ে কাজ না করলে ঘুরতে হয় দিনের পর দিন।

সরেজমিনে বিআরটিএতে গিয়ে কথা হয় কয়েকজন ভুক্তভোগীর সাথে, তখন তারা সকালের-সময়কে জানান, প্রবীর পাল নামের এক দালালের মাধ্যমে তারা কাজ করাচ্ছেন। তিনি বিআরটিএ সিন্ডিকেট প্রধান। তার সিন্ডিকেট অনেক বড়। তার সাঙ্গু-পাঙ্গুরা মুলতঃ দালালের কাজ করে। তবে মোটরযান পরিদর্শকের অফিস সহকারী ইসলাম, রনিসহ অনেকে তার হয়ে কাজ করে। এদিকে মোটরযান পরিদর্শক তৌহিদ হোসেন ও আনোয়ারের বিশ্বস্ত হয়ে কাজ করেন প্রবীর পাল।

ভুক্তভোগীরা আরও জানান, প্রবীর পালকে শুধু জাতীয় পরিচয়পত্রের এক কপি ফটোকপি, আর দুই কপি ছবি দিলেই হয়। অন্যান্য ডকুমেন্টস তিনিই ম্যানেস করে দেন। নাগরিকত্ব সনদ লাগে কি না জানতে চাইলে তখন তারা বলেন, চট্টগ্রামের সিটি কর্পেরেশন এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হলে লাগবে না বলে জানান প্রবীর দা। তবে সিটির বাইরে হলে স্থানীয় ওয়ার্ড থেকে একটি সনদ দিতে হয়। একই পদ্ধতিতে গাড়ির রেজিস্ট্রেশনও করে দেন তিনি। রেজিস্ট্রেশনেও গুনতে হয় বিশ থেকে ২৫ হাজার টাকা।

তারা আরও জানান, এখানে সব ধরনের সেবা পাবেন, তবে বৈধ ভাবে নয়, অবৈধভাবে। শুধু টাকা দিলেই হয়। প্রবীর পালের নাম্বার আছে কিনা জানতে চাইলে তখন ভুক্তভোগীরা নাম্বার দিয়ে বলেন, এটা প্রবীর পালের নাম্বার, তখন অভিযোগের বিষয়ে জানতে প্রবীর পালের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমি এখন বিআরটিএতে যায় না, তবে আপনি চাইলে হ্যাল্প করতে পারি বলে লাইন কেটে দেন।

এদিকে চট্টগ্রাম বিআরটিএ-তে দালালের দৌরাত্মের বিষয়টি অস্বীকার করেন কর্মকর্তারা। তারা বলেন, আমাদের কাছে অনেক অভিযোগ আসে। আমরা যত দ্রুত সম্ভব তা সুরাহারও চেষ্টা করি। অনেক ক্ষেত্রে গ্রাহকের বোঝার ভুল থাকে, আবার আমাদের কর্মকর্তাদেরও গাফিলতি থাকে। এ ছাড়া পর্যাপ্ত জনবলের অভাবেও এখানে গ্রাহকদের কিছু সমস্যায় পড়তে হয় বলে স্বীকার করেন কর্মকর্তারা।

সূত্র জানায়, সম্প্রতি নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর হওয়ার পর বিআরটিএর কাজের চাপ স্বাভাবিকের চেয়ে তিন গুণ বেড়ে গেছে। প্রতিদিন শত শত গাড়ি ফিটনেস হালনাগাদ এবং লাইসেন্স নবায়নের জন্য আনা হয়। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে দালাল সিন্ডিকেট।

এসএস

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ