এক নুরুচ্ছফার হাতেই জিম্মি এলজিইডি চট্টগ্রাম!


মোহাম্মদ ফোরকান  ৩০ নভেম্বর, ২০২২ ৮:২৭ : অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলীর (পিএ) স্টেনো নুরুচ্ছফার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

সূত্র জানায়, এই অফিসের পুরনো কর্মচারী হওয়ার কারণে প্রভাব দেখিয়ে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তিনি। তার কারিশমায় প্রতি বছর উপজেলার বিশেষ ও বিভিন্ন বরাদ্দে ও মেরামত প্রকল্পের সকল কাজে ঠিকাদারসহ মিলে তিনি লোপাট করেছেন সরকারের কোটি কোটি টাকা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ঠিকাদার সকালের-সময় সময়কে জানান, নুরুচ্ছফাকে কমিশন না দিলে কাজ পাওয়া যায় না, যারা কমিশন দেয় তারাই এখানে কাজ পায়। আমরা উপজেলা প্রকৌশলীদের সাথেও যোগাযোগ করিলে তারাও এই নুরুচ্ছফার সাথে যোগাযোগ করতে বলে। এই ভাবে আমরা বছরের পর ঘুরেও একটি কাজ পায় না। সব সিন্ডিকেটভূক্ত ঠিকাদাররা পায়।

এছাড়া—টেন্ডার, মেরামত কাজে বিজ্ঞপ্তি ও কোনো নোটিস ব্যতীত নামমাত্র রেজুলেশন দেখিয়ে প্রকৃত ঠিকাদারকে কাজ না দিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী ও স্টেনো নুরুচ্ছফা মিলে নামে বেনামে বিভিন্ন কনস্ট্রাকশন লাইসেন্সের আড়ালে নিজেরাই কাজ বাগিয়ে নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই নুরুচ্ছফার বেপরোয়া অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে ভোগান্তিতে পড়েছে স্থানীয় ও পেশাদার ঠিকাদাররা। প্রতি অর্থ বছরে গৃহীত কর্মসূচীর আওতায় উপজেলার বিভিন্ন মেরামত কাজে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির পন্থা অবলম্বন করে পছন্দের ঠিকাদারকে নির্বাহী প্রকৌশলীর যোগসাজশে কাজ পাইয়ে দেওয়ারও অভিযোগ এই অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, তিনি নিজেই সরকারি কর্মচারী আবার নিজেই স্বঘোষিত ঠিকাদার।

আরও জানা যায়, তিনি চট্টগ্রাম এলজিইডি অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে স্ব-কৌশলে টেন্ডার পরিবর্তে কোটেশন (আর.এফ.কিউ) দেখিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অংকের টাকা। যার কারণে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে লাখ লাখ টাকা।

নুরুচ্ছফা চট্টগ্রাম এলজিইডি অফিসে ৭/৮ বছর যাবত কর্মরত থাকায় সব কাজে সেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম-দুর্নীতি লেগেই আছে। এই অফিসের কর্মকর্তা হিসেবে নির্বাহী প্রকৌশলী থাকলেও অফিসের একছত্র নিয়ন্ত্রণ নুরুচ্ছফার হাতেই। তিনিই এখানের হর্তাকর্তা। তার কথার বাহিরে কেউ যেতে পারে না।

আরও জানা যায়, অফিসের সিনিয়র কর্মকর্তা থাকলেও নিজের কমিশন প্যাডে টেন্ডারের বিজ্ঞাপন, সিডিউল ক্রয়-বিক্রয়, টেন্ডার খোলা এবং ঠিকাদারি বিল পাস করার কাজে দিক নিদের্শনা নুরুচ্ছফার কথায় মতোই চলে। প্রভাব খাটিয়ে এই অফিসের তিনি একাই একশো। অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ পেশাদার ঠিকাদাররা এক কথায় নুরুচ্ছফার কাছেই জিম্মি। তারা এই দুর্নীতিবাজ কর্মচারীর অপসারণ চায় বলেও প্রতিবেদকে জানান তারা।

ভুক্তভোগী কয়েকজন ঠিকাদার জানায়, সিডিউল অনুযায়ি কাজ করে বিল নিতে গেলে নুরুচ্ছফার পকেটে আগে মোটা অংকের টাকা দিতে হয়। তা না হলে কখন টাকা দিব তার কমিটমেন্ট দিতে হবে। তার কথা এড়িয়ে গেলে বিলের কাগজগুলো অন্যত্র সড়িয়ে রাখেন। ঘুষের টাকা না দিলে তিনি কাজও শুরু করতে দেয় না। যার ফলে অনিচ্ছাকৃতভাবে বাধ্য হয়ে আমাদের ঘুষ দিয়ে কার্যাদেশ নিতে হয়।

সূত্র আরও জানায়, তার গ্রামের বাড়ী সীতাকুণ্ডে ক্রয় করেছেন কাঁড়ি কাঁড়ি জমি, চট্টগ্রাম শহর ও ঢাকা শহরে রয়েছে একাধিক ফ্ল্যাট, রয়েছে প্লট, আবার তার ছেলেকেও লেখাপড়া করান অস্ট্রেলিয়ায়, তার স্ত্রী ও আত্মীয় স্বজনের নামে রয়েছে একাধিক ব্যাংক একাউন্ট।

এ ব্যাপারে জানতে চট্টগ্রাম স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) অফিসে গেলে নুরুচ্ছফার দেখা মেলেনি, তখন সাথে সাথে তাকে কল দেয়া হলে তিনি একটি অনুষ্ঠানে আছে বলে লাইন কেটে দেন। এবং সন্ধ্যায় আবার কল দিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়গুলো জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদকে কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। এবং তার ছেলে যে অস্ট্রেলিয়ায় লেখাপড়া করে তিনি তা স্বীকার করেছেন।

এ ব্যাপারে জানতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্ত (এলজিইডি) চট্টগ্রাম অঞ্চলের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তোফাজ্জল আহমেদকে মুঠোফোনে কল দেয়া হলে তিনি কল রিসিভ করেনি। এবং ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও তার কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।

প্রিয় পাঠক—নুরুচ্ছফার অনিয়ম-দুর্নীতির আরও বিস্তারিত দ্বিতীয় পর্বে দেখুন।

সকালের-সময়

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ