আনোয়ারার পিআইও জামিরুলের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ!


নিজস্ব প্রতিবেদক ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ৭:১৫ : অপরাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর করতে গিয়ে হাজীগাঁও দেয়াং পাহাড়ের মাটি বিক্রি করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ছিল আনোয়ারা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) জামিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। এর মাঝে তার বিরুদ্ধে এলজিইডির সড়কের ১২–১৩ লক্ষ টাকা মূল্যের দেড় লক্ষাধিক ইট বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনা জানাজানি হলে সংশ্লিষ্ট বিভাগে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়দের মাঝেও ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। বিভিন্ন মহল বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) জামিরুল ইসলাম বলেন, ইটগুলো বিক্রি হয়েছে দুই মাস হচ্ছে। দিনের আলোতেই এসব বিক্রি হয়েছে। তাহলে এতদিন পর বিষয়টি আসছে কেন? রাস্তাটা আগে ছিল ১০০ হাজার মিটার। এখন করা হবে ১২শ মিটার। রাস্তার বর্ধিত অংশ সংস্কারের জন্য ইটগুলো বিক্রি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ইট বিক্রির বিষয়টি সাবেক ইউএনও শেখ জোবায়ের আহমেদ, ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম এ কাইয়ুম শাহ, বারশত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিনসহ সকলে অবগত আছেন।—সড়কের ইট টেন্ডার ছাড়া পিআইও বিক্রি করতে পারেন কিনা–এ প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি তিনি।

জানা যায়, উপজেলার বারশত ইউনিয়নের বোয়ালিয়া ওয়াহেদ আলী মাতব্বর সড়কটি এলজিইডির তত্ত্বাবধানে ডাবল ব্র্রিক সলিং (এইচবিবি) করা হয়েছিল। কয়েক বছর ধরে সড়কটির বিভিন্ন অংশে যান চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হলে সড়কটি সংস্কারের দাবি জানান স্থানীয়রা।

এ অবস্থায় এলজিইডির এ সড়কটি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) তত্ত্বাবধানে আবারও ডাবল ব্রিক সলিং করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০ দিন আগে এ সড়কটির টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাসখানেক আগে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা পূর্বের এলজিইডির সড়কের ইটগুলো হাসান নামের এক ইট ও মাটি বিক্রেতার কাছে বিক্রি করে দেন।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, পিআইও অফিসে ৭১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এই সড়কের ১২শ মিটার কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়া ২০ দিন আগে শেষ হয়। ৬৫ দিনের মধ্যে এই সড়কের সংস্কার কাজ শেষ করার কথা রয়েছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, পিআইও অফিস টেন্ডার করার মাসখানেক আগে সড়কে থাকা প্রায় দেড় লক্ষাধিক ইট ইউএনও এবং পিআইওর নির্দেশে সড়ক সংস্কারের নামে মাটি, ইট ও বালি ব্যবসায়ী জনৈক হাসানের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করেন। এলাকাবাসী মনে করেছিল সড়কটি কার্পেটিং হবে, তাই ইটগুলো নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পরে জানতে পারে সড়কটি আবারো ডাবল ব্রিক সলিং হচ্ছে। তারা ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

সরেজমিনে গেলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানান, রাস্তার ইট বিক্রির সময় কয়েকবার স্থানীয় চেয়ারম্যান এম এ কাইয়ুম শাহ ও বারশত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মহিউদ্দীন এসেছেন। এ সময় তাদের মুখে শুনেছি নতুন রাস্তা হবে তাই পুরাতন ইটগুলো নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পরে এলাকাবাসী জানতে পারে ইটগুলো বিক্রি করা হয়েছে।

ইট কেনার বিষয়টি স্বীকার করে স্থানীয় ইট ব্যবসায়ী তারেক বলেন, আমি হাসান নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে কয়েক গাড়ি ইট ক্রয় কয়েছি।

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, আমি স্থানীয় মেম্বার হিসেবে জানতে পেরেছি, নতুন রাস্তা হচ্ছে। তাই পুরাতন ইটগুলো বিক্রি হয়েছে। তার বেশি বলতে পারব না।—এদিকে পিআইওর পক্ষে ইট বিক্রেতা হাসানের সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

বারশত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম এ কাইয়ুম শাহ এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

বারশত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মহিউদ্দিন জানান, এলজিইডি সড়কের পুরনো ইটগুলো পিআইও জামিরুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে বিক্রি করা হয়েছে। আমি সড়ক উন্নয়নের জন্য ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে তদারকি করতে গেছি। কিন্তু ইট বিক্রির কাজে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। বিষয়টি সম্পূর্ণ পিআইওর এখতিয়ারে হয়েছে।

উপজেলা প্রকৌশলী তাসলিমা জাহান বলেন, সড়কটি এলজিইডির অধীনে এইচবিবি (ডাবল বড় ব্রিক সলিং) ছিল। বর্তমানে সড়কটির কাজ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা পিআইওর কার্যালয় বাস্তবায়ন করছে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইশতিয়াক ইমন বলেন, আমি সদ্য যোগ দিয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখব। তবে একটা সড়ক ডাবল ব্রিক সলিং থেকে আবার কোন আইনে ডাবল ব্রিক সলিং হবে তা আমার বোধগম্য নয়।

আনোয়ারা পিআইও অফিসের আরও অনিয়ম-দুর্নীতির এক্সক্লুসিভ খবর দ্বিতীয় পর্বে দেখুন।

সকালের-সময়/ফোরকান

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ