বিষয় :

শিল্পকলা একাডেমী—ডিজি লাকীর বিরুদ্ধে ২৬ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ!


সকালের-সময় রিপোর্ট  ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ৩:৪৪ : অপরাহ্ণ

শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক (ডিজি) লিয়াকত আলী লাকীর বিরুদ্ধে অনিয়ম করে সরকারের ২৬ কোটি টাকা উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। একাডেমির সচিবের পদ শূন্য হলে চুক্তিভিত্তিক একজন কর্মকর্তাকে সচিবের দায়িত্ব দিয়ে এ অর্থ উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে।

ডিজির এই আর্থিক অনিয়মসহ তার স্বেচ্ছাচারিতার ঘটনা সংসদীয় কমিটির সুপারিশে ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

এদিকে রবিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকেও শিল্পকলা একাডেমির ডিজির নানা অনিয়মের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বিষয়টি তদন্তের জন্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বৈঠকে ডিজির অর্থ তছরুপ ও অনিয়ম নিয়ে সংসদীয় কমিটির কাছে জমা পড়া একটি অভিযোগপত্রও উপস্থাপন করা হয়।

এসব বিষয় নিয়ে সংসদীয় কমিটিতেও তদন্তের কথা উঠে আসে। অবশ্য রবিবারের বৈঠকে কোনও তদন্ত কমিটি বা সাব-কমিটি গঠন করা হয়নি। সূত্র জানায়, মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর সংসদীয় কমিটি সিদ্ধান্ত জানাবে। এদিন বৈঠকে লিয়াকত আলী লাকিও উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, রবিবারের বৈঠকে শিল্পকলা একাডেমির জনবল, ভবনসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এ সময় শিল্পকলা একাডেমির আর্থিক অনিয়ম ও একাডেমির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের শূন্য পদে নিয়োগ না দিয়ে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ঢাকায় দায়িত্ব পালনে বাধ্য করাসহ নানা অনিয়ম নিয়ে আলোচনা হয়।

এ সময় তার বিরুদ্ধ সংসদীয় কমিটির কাছে জমা পড়া একটি চিঠির কথাও তুলে ধরেন কমিটির সভাপতি সিমিন হোসেন রিমি। অবশ্য তিনি চিঠির বিষয়বস্তু বিস্তারিত তুলে না ধরে কেবল তদন্তের কথা বলেন।

জানা গেছে, শিল্পকলার আগের সচিব মো. নওসাদ হোসেন গত ৩০ জুন বদলি হওয়ার পর ওই দিনই শিল্পকলা একাডেমির ডিজি লিয়াকত আলী লাকী নতুন আদেশ দিয়ে একাডেমির চুক্তিভিত্তিক পরিচালক (চারুকলা) সৈয়দা মাহবুবা করিম (মিনি)-কে সচিবের দায়িত্ব দেন।

ওই আদেশে বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে একাডেমির অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করার প্রয়োজনে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত সচিব যোগদানের পূর্ব পর্যন্ত নিজ দায়িত্বের পাশাপাশি সচিবের অতিরিক্ত দায়িত্ব তাকে প্রদান করার কথা বলা হয়।

নওসাদ হোসেন গত অর্থবছরের শেষ দিনেও (৩০ জুন) দায়িত্ব পালন করেন। অথচ ওই দিনের আদেশেই মাহবুবা করিমকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর সরকারের নিয়োগ দেওয়া সচিব মো. আছাদুজ্জামান বিদেশে যাওয়ায় সৈয়দা মাহবুবা করিমকে আবারও সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে, আগের আদেশে সচিবের দায়িত্ব পালনের কথা বলা হলেও এবারের আদেশে সচিবের ‘রুটিন’ দায়িত্ব পালন করার কথা বলা হয়েছে।

জানা গেছে, মন্ত্রণালয় থেকে আদেশপ্রাপ্ত কোনও সচিব ছাড়া একাডেমির ডিজির আদেশে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির চেকে স্বাক্ষর করার সুযোগ নেই। শিল্পকলা একাডেমির নিয়ম অনুযায়ী মহাপরিচালকও সেটি পারেন না। বিধি অনুযায়ী সচিব বা একাডেমির অর্থ বিভাগের কর্মকর্তাই কেবল চেকে স্বাক্ষর করতে পারেন।

শিল্পকলা একাডেমিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৩০ জুন থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত প্রথম দফায় সচিবের দায়িত্ব পালন করেন মাহবুবা। ওই সময় পেছনের তারিখে প্রায় ২৬ কোটি টাকার চেকে স্বাক্ষর করেন তিনি। পেছনের তারিখে স্বাক্ষর করে কেবল ১৬ আগস্টই ৮ কোটি টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

সংসদীয় কমিটির বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, রবিবারের বৈঠকে অর্থবছর শেষ হওয়ার পরও শিল্পকলা একাডেমির ডিজির টাকা উত্তোলনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। এক্ষেত্রে সংসদীয় কমিটির সদস্যরা বলেন, কোনও কারণে একটি অর্থবছরে বরাদ্দ দেওয়া অর্থ ব্যয় নাও হতে পারে। কিন্তু ব্যয় না করে অগ্রিম উত্তোলনের কোনও সুযোগ নেই।

ব্যয় না হলে সেটা সরকারের কোষাগারে ফেরত যাবে। পরের বছর কেন খরচ করা যায়নি সেই যুক্তি তুলে ধরে আবার চেয়ে নেওয়া যাবে। সরকার নিয়মতান্ত্রিকভাবে টাকা আবার বরাদ্দ দিতেই পারে। আর বাস্তব কারণ তো ছিলই, করোনায় সরকারের অনেক মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এ ধরনের পদ্ধতি এখন করছে। শিল্পকলা সেটা না করে পেছনের তারিখে তুলে তিন মাসে এত টাকা কোথায় খরচ করেছে, কীভাবে খরচ করেছে—তা জানা দরকার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সৈয়দা মাহবুবা করিম বলেন, আমি সচিবের দায়িত্ব নিতে চাইনি। আমাকে ডিজি মহোদয় বারবার বলার কারণেই দায়িত্ব নিয়েছি। আমাকে মৌখিকভাবে দায়িত্ব নেওয়ার জন্য বারবার বলেছেন। আমার আগেও অনেকে এরকম দায়িত্ব নিয়েছেন বলেও তিনি জানিয়েছেন। ডিজি আমার বস। তার আদেশ তো অমান্য করতে পারি না। তিনি হুকুম দিয়েছেন। তাই আমি এটা করেছি।

চেকে স্বাক্ষর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি হুকুমের তালিম করেছি। তবে আমি যেসব ফাইলে সই করেছি তার সবই ডিজি অনুমোদিত। ওনার অনুমোদন ছাড়া কোনও ফাইল বা চেকে সই করিনি। জানা মতে অন্যায় কিছু করিনি। আর যদি কোনও প্রশ্ন থাকে সেটা ওনাকেই করতে হবে।

এসব বিষয়ে জানতে লিয়াকত আলী লাকীকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

সংসদীয় কমিটির বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে সদস্য অসীম কুমার উকিল বলেন, শিল্পকলা একাডেমির জনবলসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ডিজির অনিয়ম বা ওই সংক্রান্ত কোনও কিছু নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়নি।

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কমিটির এক সদস্য বলেন, সভাপতি ডিজির বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ আসার কথা বৈঠকে উপস্থাপন করেছেন। তবে বিস্তারিত কিছু বলেননি। বিষয়টি তদন্তের কথা বলেছেন।

সূত্র—বিটি

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ