চট্টগ্রাম স্টেশন রোডে দেশি ভেজাল মদের রমরমা বাণিজ্য–নিরব কর্তৃপক্ষ!


মোহাম্মদ ফোরকান  ১১ আগস্ট, ২০২২ ৪:৩৬ : অপরাহ্ণ

শেলী চক্রবর্ত্তী ও বিজয় চক্রবর্ত্তী (শাওন) তারা দুজনেই জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয় পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তপন চক্রবর্ত্তীর দ্বিতীয় স্ত্রী ও পুত্র। কিন্তু বছরের পর বছর তারা রিয়াজ উদ্দীন বাজারের দক্ষিণ পাশে অথাৎ নিজাম হোটেলের লাইনের ৩/এ স্টেশন রোড বাগদাদ হোটেলের পিছনে রেলের জায়গা অবৈধ ভাবে দখলে নিয়ে ভেজাল মদের মহাল করে মাদক ব্যবসা করে আসছে।

অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে শেলী চক্রবর্ত্তী ও তার ছেলে বিজয় চক্রবর্ত্তী ও পালক পুত্র অমিত চক্রবর্ত্তীর নেতৃত্বে রেলের জায়গায় মাদক ব্যবসা, জুয়া খেলা, পতিতাবৃত্তি থেকে শুরু করে সব ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড চলে আসলেও রহস্যজনক ভুমিকায় রয়েছে পূর্বাঞ্চল রেলসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

খোজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রাম রেল স্টেশনের ৩/এ স্টেশন রোডের ‘কান্ট্রি স্প্রীড সপ’ নামের মদের মহালের লাইসেন্সটি (যার নম্বর ১৭৮-০১/১৯৬৪-৬৫) তপন চক্রবর্ত্তী ও হারু বাবুর স্ত্রী মিসেস অনিতা দাশগুপ্তার নামে ইস্যু করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম। পরবর্তীতে তারা মারা গেলে এই মদের মহালটি তারা একক মালিকানা দাবি করে পরিচালনা করেন তপনের দ্বিতীয় স্ত্রী শেলী চক্রবর্ত্তী ও তার ছেলে বিজয় ও পালক পুত্র অমিত চক্রবর্ত্তী।

কিন্তু–এই মদের মহালটি লাইসেন্সের শর্তানুযায়ী যে স্থানে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তারা সেই স্থানে মদের মহাল না করে রেলের জায়গায় অবৈধভাবে ভেজাল দেশি মদের ব্যবসা করে আসছে। তারা সেখানে ধীরে ধীরে গড়ে তোলেছেন মাদকের সাম্রাজ্য। এতে করে সরকার প্রচুর পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, মদের মহালটির কারণে অপরাধীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে স্টেশন রোড। সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত মদের মহাল কেন্দ্রীক চলে না এমন কোন অপরাধ নেই। চলে মদ, জুয়া আর পতিতাবৃত্তির রমরমা বাণিজ্য। মাদকের প্রধান হাট হিসেবেও এখন এই এলাকাটি বেশ পরিচিত।

জানা যায়, ‘কান্ট্রি স্প্রীড সপ’ নামের এই অবৈধ মদের মহালে ফেনসিডিল, গাঁজা, ইয়াবা, হেরোইন, মদসহ বিভিন্ন জাতের মাদক হাত বাড়ালেই পাওয়া যায়। তপন চক্রবর্ত্তী ও হারু বাবুর স্ত্রীর নামে ইস্যু করা এই লাইসেন্স মদের দোকানের হলেও কিন্তু তপনের দ্বিতীয় স্ত্রী শেলী ও তার ছেলে বিজয় ও অমিত চক্রবর্ত্তী তারা লাইসেন্সের আড়ালে করছেন ভেজাল দেশি মদসহ রমরমা মাদক ব্যবসা। তারা গড়ে তুলেছেন স্টেশন রোডে মাদকের বিশাল সাম্রাজ্যে।

জানা যায়, বরিশাল কলোনি, স্টেশন কলোনি, রেলের প্লাটফর্ম, স্টেশন রোড, রিয়াজ উদ্দিন বাজার, বিআরটিসি মোড়, কভার স্টোরসহ আরও কয়েকটি এলাকায় চলে তাদের রমরমা মাদক বাণিজ্য, আবার মাদক বহনের জন্য রয়েছে তাদের নিজস্ব ২০/৩০ জনের একটি বহরও।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মাদক বহনকারী সকালের-সময়কে জানান, মদের সাথে পানি মিশেয়ে ভেজাল মদও বিক্রি করেন আবার বিভিন্ন মাদকও বিক্রি করে তপন দার স্ত্রী ও ছেলেরা। তারা এই কাজটি করেন তাদের বিশ্বস্ত কর্মচারীদের মাধ্যমে। তাদের মদের ড্রামে সবসময় মেশানো থাকে নানা ধরনের বিষাক্ত রাসায়নিক। ফলে, ভেজাল মদপানে বাড়ছে অসুস্থতা ও প্রাণহানি।

বিষয়টি জানার জন্য তপন চক্রবর্ত্তীর দ্বিতীয় ঘরের ছেলে মাদক ব্যবসায়ী বিজয় চক্রবর্ত্তী শাওনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সকালের-সময়কে বলেন, আপনি এই বিষয়ে নিউজ না করলে খুশি হব, কারণ আমরা এখানে এমনিতে ব্যবসা করিনা, স্থানীয় প্রশাসন থেকে শুরু করে রেল কর্মকর্তা, মাদকদ্রব্য কর্মকর্তা, আরএনবি, জিআরপি থানাসহ সবাইকে মোটা অংকের টাকা দিই বলে রেল কর্তৃপক্ষ আমার মদের মহাল উচ্ছেদ করে না। আর তাদের হেডামও নেই আমাদের মদের মহালটি উচ্ছেদ করার।

তবে বিষয়টি নিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রামের (মেট্রো) উপ পরিচালক মুকুল জ্যোতি চাকমা সকালের-সময়কে জানান, বিষয়টি আমি জানি না, কাগজপত্র দেখে বলতে হবে, আমি অফিসের বাহিরে আছি, তাহলে কিছু না জেনে কি ভাবে মদের লাইসেন্স ইস্যু করেন জানতে চাইলে সাথে সাথে তিনি লাইন কেটে দেন।

এবিষয়ে পূর্বাঞ্চল রেলের বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সকালের-সময়কে জানান, রেলের জায়গায় কেউ অবৈধভাবে মদের মহাল করতে পারে না, আর ভূসম্পত্তি বিভাগ কাউকে স্টেশন রোডে মদের মহাল করার অনুমতি দেয়নি, আমরা অচিরেই খোঁজ খবর নিয়ে স্টেশন রোডের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করব।

প্রিয় পাঠক–দ্বিতীয় পর্বে তাদের আরও কুকীর্তির খবর আসছে, সাথে থাকুন…ধন্যবাদ।

সকালের-সময়/এমএফ

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ