আকতারের দুর্নীতিতে ডুবতে বসেছে মেঘনা পেট্রোলিয়াম!


সকালের-সময় রিপোর্ট  ১৩ জুন, ২০২১ ১:২৯ : পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) তিনটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড সারা দেশে জ্বালানি তেল বিপণনের কাজে নিয়োজিত। তিনটি প্রতিষ্ঠানই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কর্মকর্তাদের অনিয়ম- দুর্নীতির কারণে ডুবতে বসেছে মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড। মেঘনা অয়েলের হর্তা-কর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের যেন অন্ত নেই। নিয়োগ ও পদোন্নতিতে অনিয়ম, বিভিন্ন ডিপোতে বড় ধরনের দুর্নীতির কারণে নাজুক পরিস্থিতি পার করছে প্রতিষ্ঠানটি।

বিশেষ করে মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের জিএম (এইচআর) আকতার হোসেনের বিরুদ্ধে উঠেছে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ। সম্প্রতি আনোয়ার হোসেন নামে মেঘনা পেট্রোলিয়ামের এক কর্মচারী আকতার হোসেনের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ লিখিতভাবে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) বরাবর দায়ের করেছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নিয়োগ ও পদোন্নতি বাণিজ্য, ডিপো থেকে মাসিক লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায়, মামলা পরিচালনা থেকে অর্থ আত্মসাৎ, ভূয়া বিল তৈরি করে টাকা আত্মসাৎ, ও কোম্পানির গাড়ি বিভিন্ন জায়গায় ভাড়ায় খাটিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেন আকতার হোসেন।

আনোয়ার হোসেন আরো উল্লেখ করেন, চট্টগ্রাম মহানগরীর আগ্রাবাদে মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড ভবনে কর্মরত জিএম (এইচআর) আকতার হোসেন দেশব্যাপী কোম্পানির ১৭টি ডিপো থেকে প্রতিমাসে প্রায় লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেন। এবং অনৈতিক এই সুবিধা আদায়ে জন্য তিনি কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে ইচ্ছামাফিক ডিপো পরিদর্শনে গিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন।

জানা যায়, কোম্পানির মামলা-মোকদ্দমা পরিচালনার নামে আকতার হোসেন প্রতিমাসে ১০ থেকে ২০ লাখ টাকা অবৈধ আয় করে থাকেন। কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলার বাদি-বিবাদী পক্ষের সাথে আঁতাত করে নিজের স্বার্থে এই অবৈধ আয় করে কোম্পানির ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেন। মামলা পরিচালনায় বিভিন্ন ট্যুরের ভুয়া বিল দেখিয়ে ও তিনি টাকা উত্তোলন করেন।

এছাড়া তিনি কোম্পানিতে কর্মচারী নিয়োগের নামে কোটি কোটি টাকা অবৈধ আয়ের ধারা অব্যাহত রেখেছেন। পদোন্নতি বাণিজ্যের মাধ্যমে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে প্রতিবছর ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা আদায় করে থাকেন।

অফিসে যাতায়াতের জন্য আকতার হোসেনকে কোম্পানি থেকে গাড়ী দেওয়া হলেও তিনি তা স্ত্রীর কর্মস্থল সিইপিজেডে ইয়ংওয়ানে শ্রমিক-কর্মচারী পরিহনে মাসিক ৪০ হাজার টাকায় ভাড়ায় খাটাচ্ছেন। অথচ এই গাড়ীর জ্বালানিসহ নানা ব্যয় বাবদ কোম্পানির অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। অন্যদিকে কোম্পানির দেয়া অফিসের পাজেরো জীপ (চট্টমেট্টো ঘ-১১-১১৭০) গাড়িটি তিনি তার পারিবারিক কাজে ব্যবহার করে থাকেন।

এসব নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ বিভিন্ন সময়ে কোম্পানির পক্ষ থেকে তদন্তের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তিনি ক্ষমতাসীন সরকারের প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয়ে প্রভাব খাটিয়ে তা বন্ধ করে দেন। এরমধ্যে কোম্পানির গাড়ি স্ত্রীর কর্মস্থলে ইয়ংওয়ানে ভাড়া খাটানোর বিষয়টি তদন্তের জন্য দায়িত্বপান বিপিসির সিনিয়র জিএম মো. আবু হানিফ।

এর আগে ২০০৯ সালের ১২ ডিসেম্বর আরেকটি দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব পান যমুনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক গিয়াস উদ্দিন আনসারী। যা তদন্ত বন্ধে চিঠি দেন জ্বালানি মন্ত্রনালয়ের সচিব।

এভাবে কোটি কোটি টাকা অবৈধ আয়ের মাধ্যমে তিনি নিজ ও স্ত্রী-সন্তানের নামে-বেনামে চট্টগ্রামের অভিজাত আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক, কল্পলোক আবাসিক, খুলশীসহ বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় কোটি কোটি টাকা মূল্যের প্লট ও ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন। যা তদন্ত করলে থলের বেড়াল বেরিয়ে আসবে বলে দাবি করেন মেঘনা প্রেট্রোলিয়ামের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী।

এ বিষয়ে জানার জন্য আকতার হোসেনের সরকারি মোঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রতিবেদককে তার অফিসে গিয়ে কথা বলার অনুরোধ করেন, প্রতিবেদক পরের দিন অফিসে গেলে তিনি এলবামের কিছু পূরণো ছবি দেখিয়ে বলেন, দেখেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আমার পরিবারের একজন, তিনি আমার পরিবারে ভাত খেয়েছেন, চা খেয়েছেন। আমি তার পরিবারের সদস্যের মতো। সুতারাং আপনারা লেখা-লেখি করে আমার বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারবেন না।

জানা যায়, নগরীর আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকায় তার একটি ফ্ল্যাট ও এক খন্ডজমিও রয়েছে। একপর্যায়ে তিনি প্রতিবেদককে সংবাদটি প্রকাশ না করার অনুরোধ জানান।

এ বিষয়ে মেঘনা পেট্রোলিয়ামের কয়েকজন ডিপো ইনচার্জ নাম প্রকাশ না করার শর্তে সকালের-সময় ডটকমকে জানান, আকতার স্যার মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায় করেন সেটা ঠিক, টাকা না দিলে তিনি হুমকি দমকি দেন, এবং বিভিন্ন হয়রানি করেন।

জানা যায়, আকতার হোসেন নোয়াখালীর হাতিয়া চরাঞ্চলের কুখ্যাত রাজাকার শাহ আলমের ছেলে কুখ্যাত সন্ত্রাসী মওদুদ বাহিনীর প্রধান ছিলেন। ১৯৮৮ সালে তৎকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের সুপারিশে ইফার অফিসার হিসেবে তিনি যোগ দেন।

বিভিন্ন রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সাথে তিনি নিজেকে পরিবর্তন করে নিয়েছেন। বর্তমানে নব্য আওয়ামীলীগার সেজে বঙ্গবন্ধু পরিবারের কাছের আত্মীয় দাবি করে প্রভাব বিস্তার করে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত করছে।

প্রিয় পাঠক, আকতার হোসেনের আরো দুর্নীতির তথ্য জানতে আগামী পর্বে চোঁখ রাখুন..

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ