বিলাই শাহজাহানের প্রতারণায় নিঃস্ব অনিল ধরের পরিবার!


সকালের-সময় রিপোর্ট  ১০ নভেম্বর, ২০২১ ১:৪২ : অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম নগরীতে বিভিন্ন এলাকায় জায়গা-জমির দালালি করে হরহামেশা প্রতারণা করে আসছে বিলাই শাহজাহান নামের এক প্রতারক। চট্টগ্রাম শহর ও গ্রামগঞ্জে তার প্রতারণার শিকার হচ্ছে অহরহ সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের সরলতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রায় অর্ধ কোটি হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এই বিলাই শাহজাহানের বিরুদ্ধে।

জানা যায়, বিলাই শাহজাহান ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক নেতাদের নাম ব্যবহার করে পায়দা লুটার পাশাপাশি জায়গা ক্রয়-বিক্রয়ের নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে অনিল ধর নামের এক হাজারি গলির স্বর্ণ ব্যাবসায়ীর কাছ থেকে। পুরো চট্টগ্রাম জুড়ে সে প্রতারণার জাল বিস্তার করে রেখেছে।

সম্প্রতি অনিল ধর, অনিল গংয়ের সাথে অলোক খাস্তগীর, মোঃ আশরাফ হেসেন চৌধুরী, অনিন্দ্য চৌধুরী, অভিজিত চৌধুরী, ও চন্দন কুমার ধর মিলে ফিরিঙ্গি বাজারে জায়গার বায়না নিয়ে
এমন একটি ডিজিটাল প্রতারণার খবর পাওয়া গেছে বিলাই শাহজাহানের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি প্রতারণা মামলা করেছে ভুক্তভোগী অনিল গং। মামলা নম্বর—১৫

জানা যায়, চট্রগ্রাম নগরীর কোতায়ালী থানার ফিরিঙ্গিবাজারের গুরিবাজার মৌজার ২০৭ নম্বর খতিয়ানের ৭৯৭ বিএস দাগের এই জায়গাটি আদালত কর্তৃক বাতিলকৃত অবৈধ বিএস খতিয়ানের জায়গা।

কিন্তু এই জায়গাটি বিলাই শাহজাহান সংখ্যলঘু সম্প্রদায়ের অনিল ধরের পরিবারকে ক্রয় করিয়ে দিবে বলে তার কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা। এবং সে সাথে শেয়ার বিক্রয়ের নামে একটি সিন্ডিকেটের হয়েও হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা।

অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, উপরোক্ত মৌজার ২০ গন্ডা ভুমির আরএস-খতিয়ানের প্রকৃত মালিক মথুরা মোহন, হরিদাস মোহন, লাল মোহন, অমর কৃঞ্চ, কামিনী কুমার, অশ্বিনি কুমার, ছন্দ্র কুমার ও শীষ ছন্দ্রসহ মোট আট জন।

এই আট জনের মধ্যে ৭ জনকে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে মৃত্যু দেখাইয়া এডভোকেট আশরাফুল আলম (রাজ্জাক) ও ভূমিদস্যু অলক খাস্তগীর প্রকাশ (অলিখ্যা) ও বিলাই শাহজাহানসসহ যোগসাজসের মাধ্যমে অমর কৃষ্ণের ওয়ারিশ বানাইয়া অনিদ্য, অভিজিৎ, সূজলা নামীয় ব্যাক্তিগণ হইতে বিগত ৮ মে ১২ইং কমিশনের মাধ্যমে রেজিষ্ট্রিকৃত ৮০১৫ নং আমমোক্তার নামা সৃজন করে নেন।

উক্ত আমমোক্তার নামা মুলে ভূমি বিক্রয় চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে অনিল কান্তি ধর, অনিল গং হইতে নগদ ও চেকে এক কোটি টাকা হাসিল করেন অলিখ্যা ও রাজ্জাক ও বিলাই শাহজাহান।….

স্টাম্পে উল্লেখিত কাগজপত্রে দেখা যায়, ২১ গন্ডার জমির মূল্য ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ হয়। ১ম পক্ষ রশিদ পত্র গ্রহীতাগণ ২য় পক্ষ রশিদপত্রের দাতাগণের বরাবরে পে-অর্ডার মূলে ৪৫ লাখ টাকা ও নগদে ৫ পাঁচ লাখ টাকা এবং গত ১৮ মার্চ ২১ ইং তারিখের চেক মূলে ৫০ পঞ্চাশ লাখ টাকার দুই খানা চেক প্রদান করে শাহজাহান সহ আবদুর রাজ্জককে। তারা শর্ত সাপেক্ষে ১কোটি টাকা নগদে এবং চেক মূলে একটা চুক্তিও সম্পাদন করেন।

পরবর্তিতে— অলিখ্যা ও রাজ্জাক অনিল গং এর চুক্তির কথা গোপন করে যোগসাজশে বাতিলকৃত বিএস ২০৭ খতিয়ানের রেকডিয় ফজল করিমের ওয়ারিশ রাজু গং ও তাদের অবৈধ বায়না দার শফিক আদনান, খোকন, ফারুক এর সহিত আঁতাত করিয়া আপীলকৃত মিছ মামলা ১৩০/২১ এ সোলেনামা দেওয়ার নামে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার পাঁয়তারায় লিপ্ত আছেন।

এমতাবস্থায় বিলাই শাহজাহান শফিক আদনান গংয়ের দালালি করে আইন বহিরভূত বায়না নামার অনুবলে বিগত ৩০শে জুলাই ২০২১ইং জনি ধর, অর্পণ ধর, শ্যামল ধর, চন্দন ধর, বাসু ধর, নামীয় ব্যক্তিদের বরাবরে একখানা চুক্তিনামা সম্পাদন করেন। উক্ত চুক্তি নামার ক্ষমতাবলে জনি গং সনাতন সম্প্রদায়ের বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে ফ্ল্যাট বিক্রি ও শেয়ার বিক্রি করে আসলেও অনিল গং থেকে নেয়া প্রায় কোটি টাকা এখনো ফেরত দেয়নি শাহজাহান চক্র।

অপরদিকে রাজু গং ভুল ভিত্তিহীনভাবে সৃজিত বিএস ২০৭ খতিয়ানের অবৈধ মালিক সেজে রাজনৈতিক শক্তি ব্যবহার করে ১৫ কোটি টাকা আয়ত্বে নেওয়ার মরিয়ায় লিপ্ত। অথচ উক্ত খতিয়ানটি এপি লিষ্টে অন্তভুক্ত এতদসত্বেও ভোক্তভোগী অনিল গং নিরুপায় হয়ে প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে অভিযোগও করেছেন।

অপরদিকে এডভোকেট আশরাফুল আলম (রাজ্জাক) ও অলক খাস্তগিরের নামে দেওয়া আমমোক্তার নামাটি বিক্রির ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। তাহারা দুইজন ও বিলাই শাহজাহান জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে উল্লেখিত আমমোক্তার নামা বিক্রির নামে অনিল গং থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী অনিল ধর সকালের-সময়কে বলেন, বিলাই শাহজাহান কে আমরা খুব বিশ্বাস করে ছিলাম, জায়গা জমি ক্রয় বিক্রয়ের জন্য সহযোগী হিসেবে তাকে আমরা পাশে রেখেছিলাম, সে বিভিন্ন সময় আমাদের সাথে প্রতারণা করে প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আমরা এই প্রতারকের বিচার চাই। এবং এই প্রতারকের বিরুদ্ধে ১০/১৫ টি মামলাও আছে, এবং কয়েকটি মামলায় তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট আছে।

এ বিষয়ে হাইকোর্টের এক আইনজীবি নাম প্রকাশ না করার শর্তে সকালের-সময় ডটকমকে বলেন, মৌরশী বা আরএস খতিয়ান যে অংশ বা ব্যক্তির কাছে বিক্রি করা হয় তা পর্রবর্তীতে বিএস খতিয়ানে লিপিবদ্ধ হলে তা আইনগত বৈধ।

কিন্তু অনেক সময় অনেকে প্রতারনার আশ্রয় নিয়ে অন্যের সম্পত্তি নিজের নামে বিএস খতিয়ান করিলে ঐ বিএস খতিয়ানের সাথে আরএস খতিয়ানের মালিকের হস্তান্তরের মিল না থাকলে উক্ত খতিয়ান বাতিলের জন্য যথাযথ আদালতে মামলা করলে তা বাতিল হয়ে যায়।

তেমনি উপরোক্ত ফজল করিম গং এর বিএস ২০৭ নং খতিয়ানের সাপোর্টে খরিদা ৫টি দলিলের সাথে আরএস মালিকের কোন বিক্রয়ের মিল না থাকায় উক্ত খতিয়ান ভুল ভিত্তিহীন বাতিল যোগ্য হবে সর্বময় আদলতে।

এ বিষয়ে জানার জন্য মোহাম্মদ শাহাজাহান প্রকাশ বিলাই শাহজাহানের মুঠোফোনে কল দেয়া হলে তিনি কল রিসিভ করেনি।

জানা যায়, কোতোয়ালি থানা সিআর মামলা নম্বর-৪৫৬/২১..এবং পটিয়া থানা সিআর মামলা নম্বর-০৭/১৮, ১২০/১৯। এই মামলাগুলোতে বিলাই শাহজাহানের স্ত্রী তছলিমা আক্তার তছিসহ প্রতারণার আসামী।

আরো জানা যায়, শাহজাহানের প্রথম স্ত্রী তছলিমা বেগম তছি, কোতোয়ালি থানা ও পটিয়া থানার ওয়ারেন্টভূক্ত আসামী। উক্ত শাহজাহান এর চেক মামলার সাজা প্রাপ্ত আসামী। শাহাজাহানের জাল দলিল ও খতিয়ানের পেছনে শাহজাহানের দ্বিতীয় স্ত্রী সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক রোজি আক্তার রোজি জড়িত। এবং এই রোজি আক্তারকে সাথে নিয়ে জাল দলিল ও খতিয়ান বানিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে। যখন কেউও তাদের টাকা পেরত চাই তখন শাহজাহান তার দ্বিতীয় স্ত্রী তছলিমাকে দিয়ে বিভিন্ন মামলা মোকাদ্দমার ভয়ভীতিও দেখায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

উল্লেখ্য: বিলাই শাহজান মৃত -ইউসুফ জানের ছেলে, বাড়ি পটিয়া উপজেলা আলী চান হাজির বাড়ি, কৈয়গ্রাম, পটিয়া, চট্টগ্রাম।

সকালের-সময়/এমএফ

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ