প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ!


সকালের-সময় রিপোর্ট  ২৭ অক্টোবর, ২০২১ ২:৪৯ : অপরাহ্ণ

রাউজান উত্তরসর্তা দরগা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের নাম দুলাল কান্তি শীল। তিনি একটানা ৮ বছর যাবৎ এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসলেও প্রতিষ্ঠানটি ঘিরে রয়েছে তার পদে পদে অনিয়ম- দুর্নীতি। তার এই অনিয়ম-দুর্নীতি যেন দেখার কেউও নেই। নিরব ভূমিকাও পালন করছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা জানান, প্রধান শিক্ষক দুলাল কান্তি শীল ২০১৩ সালে থেকে প্রায় ৮ বছর আগে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে অদ্যাবধি কর্মরত রয়েছেন। যোগদানের পর থেকেই তিনি দায়িত্ব পালনে অবহেলাসহ স্কুল কমিটির সভাপতিকে নিয়ে একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করে চলেছেন। কথায় কথায় স্থানীয় এমপির নাম ব্যবহার করে ছাত্র-ছাত্রী ও অবিভাবকদের ভয়ভীতি দেখান।

তারা আরো জানান, নানা অজুহাতে তিনি বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন এবং পরে এসে হাজিরা খাতায় একত্রে সাক্ষর করেন। তার এমন উপস্থিতির কারণে বিদ্যালয়ের অন্যান্য সহকারি শিক্ষকগণও নিয়মিত পাঠদানে অলসতা করেন। এসব কারণে ইতোমধ্যে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী সংকট ফলাফল বিপর্যয়সহ ঐতিহ্য হারাতে বসেছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সরকারি নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করে অতিরিক্ত ফি, ফরম পূরণ বাবদ ১১ হাজার টাকা থেকে ১৪ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে। কোন শিক্ষার্থী যদি এ টাকা দিতে ব্যর্থ হয় তাকে পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে দেয়া হতো না বলেও জানান তারা।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে আরো বলেন, দীর্ঘদিন একই বিদ্যালয়ে চাকুরি করার কারণে বিদ্যালয়টিকে নিজেদের খেয়াল-খুশি মতো পরিচালনা করে আসছেন সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক। এমনকি বিদ্যালয়ের আয়-ব্যয়ের হিসাব এবং তাদের অনিয়ম-দুর্নীতিতে যাতে কেউ বাঁধা হয়ে দাড়াঁতে না পারে সে জন্য তিনি কৌশল অবলম্বন করে নিয়ম-নীতিকে তোয়াক্কা না করে নিজের পছন্দ অনুযায়ী ম্যানেজিং কমিটি গঠন করে আসছেন।

প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ পাওয়া গেছে:

১—পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে টেন্ডার আহ্বান ব্যতীত প্রতিষ্ঠানের ফ্যাসিলিটিজ ভবনের দ্বিতল ভবন নির্মাণের জন্য স্থানীয় জনগণ হতে রশিদ ব্যতীত লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায়, উক্ত চাঁদা আদায়ের যথাযথ হিসাব প্রদর্শন না করা।

২—বর্তমান প্রধান শিক্ষক নিয়োগের (২০১৩ সাল) হতে শিক্ষাবোর্ডের নিদের্শনা থাকা স্বত্তেও প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক অডিট না করা।

৩—শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবের জন্য বরাদ্দ পাওয়া (৩০,০০০) ত্রিশ হাজার টাকা বিদ্যালয়ের তহবিলে জমা না করে ভুয়া বিল ভাউচার করে আত্মসাৎ করা।

৪—বিধি মোতাবেক বিদ্যালয়ের আয়-ব্যয়ের ভাউচার পরিচালনা কমিটির সভায় অনুমোদন না করে অর্থ উত্তোলন করা।

৫—করোনাকালীন সময়ে সরকারী নির্দেশনা থাকার পরেও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা। বিশেষ করে জে.এস.সি. এবং এস.এস.সি পরীক্ষার্থীদের ফরমপূরণের সময় তাদের অসহায়ত্বকে জিম্মি করে অর্থ আদায়।

৬—উপজেলা কিংবা জেলা শিক্ষা অফিসে অথবা শিক্ষাবোর্ডে বিভিন্ন কাজের অযুহাতে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকা, উপস্থিত হলেও অল্পসময় পর বিদ্যালয় ত্যাগ করা ও বিদ্যালেয় ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে ঘুষ গ্রহণ।

৭—সভাপতি এবং প্রধান শিক্ষকের যৌথ স্বাক্ষরে নিজেদের ইচ্ছেমত বিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাব হতে টাকা উত্তোলন করা।

৮—টেন্ডার আহ্বান ব্যতীত বিদ্যালয়ে অস্থায়ী বাঁশ বেড়া টিন দিয়ে ঘর নির্মাণ করে ব্যবহারের পরে উক্ত ঘর টেন্ডার আহ্বান ব্যতীত বিক্রী করা।

৯—চশিবো’র বিগত ১৪/০৯/২০২১ ইং তারিখে জারিকৃত নোটিশে নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটি গঠনের নির্দেশনা থাকা স্বত্তেও এডহক কমিটি গঠন করে বোর্ডে প্রেরণ করা।

১০—এলাকার শিক্ষানুরাগী ব্যাক্তিগণের পরামর্শ ব্যতীত সাবেক সভাপতি এবং তিনি পরামর্শ করে উক্ত সভাপতির ছেলেকে এডহক কমিটির সভাপতি করে বোর্ডে প্রেরণ করা। এবং এই বিদ্যালয়ের সভাপতি ক্ষমতার জোরে বিগত ২০১২ সাল হতে প্রায় দীর্ঘ ৯ বছর ধরে একাধিকবার সভাপতি হিসেবে আছেন।

১১—স্থানীয় এমপি’র নাম ব্যবহার করে অভিভাবক সদস্য এবং শিক্ষকদেরকে চাকুরীচ্যুতের ভয় দেখানো।

১২—অত্র বিদ্যালেয়র সহকারী প্রধান শিক্ষক তড়িৎ কান্তি বড়ুয়ার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে।তিনি ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীকে চক, ডাস্টার মেরে আহত করাসহ পাঠ সংশ্লিষ্ট বিষয় ব্যতীত ছাত্রীদের ক্লাসে আপত্তিকর কথা বলেন। এবং শ্রেণিকক্ষে পাঠ ব্যতীত অপ্রাসঙ্গিক কথা বার্তা বলে ক্লাস শেষ করেন। অভিভাবক সদস্য সম্পর্কে বিরুপ মন্তব্য করেন। পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন না করে খাতায় নম্বর দিয়ে দেওয়াসহ রয়েছে অসংখ্য অভিযোগ।

এবং উক্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে শোকজ করলে সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেনি তড়িৎ বড়ুয়া। পরে দায়িত্বপালনে সচেষ্ট না হওয়ায় শাস্তিস্বরুপ বিদ্যালয় প্রদত্ত যাবতীয় সুবিধাদি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় সকল সদস্যদের সম্মতিক্রমে।

কিন্তু—প্রধান শিক্ষক উক্ত শিক্ষকের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করে বর্তমান এডহক কমিটির সভায় উক্ত বেতন ভাতা বকেয়াসহ পুনরায় প্রদানের ব্যবস্থা করেন। যদিও এডহক কমিটির সদস্যরা বিধি মোতাবেক উক্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না।

বিগত এডহক কমিটি গঠনের পর একাধিক সভা সকল সদস্যদের প্রত্যক্ষ উপস্থিতি ব্যতীত সম্পন্ন করা হয়েছে। কেবল প্রধান শিক্ষক রেজুলেশন লিখে রাখেন তারপর সদস্যদের ডেকে স্বাক্ষর নিয়ে নেন। এবং উপবৃত্তি বাবদ প্রাপ্ত সরকারী টিউশন ফির কোন হিসাব দিতে পারেনি তিনি।

বিদ্যালয়ের অনৈতিক কর্মকাণ্ড জেনে যাওয়ায় অত্র বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরী জাহাঙ্গীর হত্যার পেছনে প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির সংশ্লিষ্ঠতা আছে বলেও জানা যায়, তবে তারা এই হত্যাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিয়ে বীরদর্পে জীবন-যাপন করছেন।

অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে জানার জন্য প্রধান শিক্ষক দুলাল কান্তি শীলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সকালের-সময়কে বলেন, স্কুলের অনিয়ম-দুর্নীতির সাথে আমি একা জড়িত নই, এখানে সভাপতিও জড়িত, তিনি যে ভাবে বলে আমি সেভাবে কাজ করি, তবে—আপনারা যে অভিযোগগুলো পেয়েছেন সেগুলো তদন্ত করে দেখেন, একটা স্কুলের প্রধান শিক্ষক
কমিটির বাহিরে গিয়ে কাজ করতে পারে না।

এ বিষয়ে জানার জন্য রাউজান উত্তরসর্তা দরগা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি লায়ন মোহাম্মদ আলী সকালের-সময়’কে বলেন, আপনি যে দুর্নীতির কথা আমাকে বলতেছেন সেগুলার সাথে আমি জড়িত নই, হয়তো হেড মাস্টার জড়িত থাকতে পারে, কারণ—আমি গরিব পরিবারের সন্তান নই, আমার অনেক টাকা পয়সা আছে, আমার স্কুলে দুর্নীতি করার প্রশ্নেই আসে না, আপনি হেড মাস্টারকে কল দেন উনি হয়তো অনিয়ম-দুর্নীতির সাথে জড়িত থাকতে পারে।

প্রিয় পাঠক—দ্বিতীয় পর্বে নৈশপ্রহরী জাহাঙ্গীর হত্যার রহস্যসহ আরো বিস্তারিত আসছে…চোঁখ রাখুন..

সকালের-সময়/এমএফ

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ