নির্মাণ কাজে ধীরগতি—জনদুর্ভোগ বাড়াচ্ছে ম্যাক্স গ্রুপ!


সকালের-সময় রিপোর্ট  ২০ অক্টোবর, ২০২১ ৮:১০ : অপরাহ্ণ

চট্টগ্রামের লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা বিমানবন্দর পর্যন্ত নির্মিত হচ্ছে চট্টগ্রাম শহরের প্রথম ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। চলমান কাজের ধীরগতি, নানা প্রতিবন্ধকতা এবং নির্মাণ কাজের কারণে গত প্রায় দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে মহাদুর্ভোগের মধ্যে পতিত হচ্ছে এই নগরীর লাখ লাখ মানুষ।

নির্মাণ কাজের শ্লথগতি এবং সড়কে দুর্ভোগ দুরাবস্থার কারণে বিভিন্ন সংস্থা একে অপরকে দুষছেন, কিন্তু লাখো মানুষ আর হাজার হাজার যানবাহন প্রতিদিন দুর্ভোগ নিয়ে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছেন। ভোগান্তি হ্রাসের যথেষ্ট সুযোগ থাকলেও যথাযথ উদ্যোগের অভাবে মানুষের দুর্ভোগ কেবলই বাড়ছে। এ ব্যাপারে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে পুলিশকে কথা দিয়েও তারা কথা রাখেনি। রাস্তায় চার লেনের গাড়ি চলাচল নিশ্চিত করার কথা থাকলেও ম্যাক্স তা করেনি।

সরেজমিনে দেখা যায়, নির্মাণ এলাকায় যতটুকু রাস্তা রয়েছে তাও খানাখন্দকে ভরা। ম্যাক্স রাস্তাটি ঠিক করে দেয়ার কথা থাকলেও নানা অজুহাতে কেবলই সময়ক্ষেপণ করছে। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে।

জানা যায়, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের একটি বিশেষায়িত প্রকল্প হিসেবে ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৯ সালে নির্মাণ কাজ শুরু হয় চট্টগ্রামের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের। চট্টগ্রাম মহানগরীর লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গার চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এক্সপ্রেসওয়ের কাজ আগামী ২০২৩ সালের মধ্যেই শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

কাজ শুরু প্রায় ২ বছর শেষ হলেও মূল নির্মাণ কাজের ৪০ শতাংশও কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু এই নির্মাণ কাজে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে মহাদুর্ভোগে পড়েছে চট্টগ্রাম নগরবাসী। বিশেষ করে চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ চৌমুহনী থেকে বারিক বিল্ডিং, ইপিজেড থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত দীর্ঘ গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি এখন প্রায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

দেখা যায়—মূল সড়কের মধ্যখানে নির্মাণ কাজ চলছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের আর দুই পাশে সড়ক যেনো খানা-খন্দকে ভরা কোনো যুদ্ধ বিধ্বস্থ এলাকা। এই সড়ক পথে চলাচলকারী প্রতিদিন হাজার হাজার বাস, ট্রাক, কাভার্টভ্যানসহ বিভিন্ন ধরনের গণপরিবহন ও ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করছে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে।

প্রতিদিনই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা, ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে যানবাহন। অপরদিকে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থেকে নষ্ট হচ্ছে কর্মঘণ্টা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ম্যাক্সের সঙ্গে কাজ করছে চীনা প্রতিষ্ঠান র‌্যাংকিন জেভি ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ডিডিসি-সার্ম-ডিপিএম জেভি।

প্রকল্পটির ছয়টি ধাপে বিভক্ত অংশে নির্মাণ কাজ করছে ম্যাক্স গ্রুপ—লালখানবাজার-দেওয়ানহাট (১৩শ মিটার চার লেন), দেওয়ানহাট-বারেক বিল্ডিং (২ হাজার মিটার চার লেন মূল ফ্লাইওভার), বারেক বিল্ডিং-সল্টগোলা (২৯শ মিটার চারলেন মূল ফ্লাইওভার), সল্টগোলা-সিমেন্ট ক্রসিং (৩১৫০ মিটার চারলেন মূল ফ্লাইওভার), সিমেন্টক্রসিং-কাটগর (২১৫০ মিটার চারলেন মূল ফ্লাইওভার), কাটগর-ভিআইপি রোড (২৩৫০ মিটার চারলেন মূল ফ্লাইওভার এবং সি বিচ থেকে ভিআইপি রোড ৮৫০ মিটার দুই লেন ফ্লাইওভার নির্মাণ)।

সরেজমিন দেখা গেছে, প্রকল্পের অ্যালাইনমেন্টের মধ্যে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো) ৩৩/১১/০.৪ কেভি পোল, লাইন উপকেন্দ্র ও রোড ক্রসিং লাইন না সরানোর কারণে প্রকল্পের বিভিন্ন অংশে পাইলিং ও ফাউন্ডেশনের কাজ ধীর গতিতে চলছে। সল্টগোলা ক্রসিং থেকে সিমেন্ট ক্রসিং পর্যন্ত সাড়ে তিন কিলোমিটার অংশের সাব-সয়েল ইনভেস্টিগেশনের কনফার্মিং টেস্ট সম্পন্ন হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিএমপি পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, রাস্তাটির অবস্থা ভয়াবহ। পুলিশ নিজেরাও বিভিন্ন সময় ইট এনে গর্ত ভরাট করেছে। রাস্তা জুড়ে খানাখন্দক থাকার কারণে দিনভর যানজট লেগে থাকে। আবার শহরের প্রধান এই সড়কটির যান চলাচল মুখ থুবড়ে পড়ার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে শহরের সার্বিক যান চলাচলে। এই রাস্তার ধকল সামলাতে পুলিশকে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

এই ব্যাপারে ম্যাক্স গ্রুপের চট্টগ্রাম অফিসের
সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে কেউও ফেন রিসিভ করেননি।

সকালের-সময়/এমএফ

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ