চট্টগ্রাম জুড়ে ভুয়া অনলাইন টিভি চেয়ারম্যানের ব্যাপক চাঁদাবাজি!


সকালের-সময় রিপোর্ট  ১০ আগস্ট, ২০২১ ১:২৭ : পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অনলাইন টিভি’র চেয়ারম্যান পরিচয় দিয়ে চাদাঁবাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে শাহাদাৎ হোসেন ওরফে রাজু নামে এক কথিত সাংবাদিকের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি কখনও ট্রাফিক পুলিশ, কখনও ট্রাফিকের টেন্ডল (ক্যাশিয়ার), কখনও আবার কথিত ‘অনলাইন টিভি’র চেয়ারম্যান পরিচয় দিয়ে হরদম চাঁদাবাজি করে আসছে চট্টগ্রাম জুড়ে।

অন্যদিকে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল ও পত্রিকার ভুয়া আইডিকার্ড ব্যবহার করে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ীসহ নানা পেশার মানুষকে হুমকিসহ বিভিন্ন উপায়ে চাঁদা দাবি করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। তার এই অপকর্মের কারণে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন প্রকৃত ও পেশাদার সাংবাদিকরা।

সিএমপির ট্রাফিক বিভাগ বন্দর, পশ্চিম ও খুলশী জোন এলাকায় চলছে রাজু ও তার কথিত ‘অনলাইন টিভি’র স্টিকার লাগানো শত শত পরিবহনে চাঁদাবাজি। জানা গেছে, স্টিকার দেওয়া থাকলে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরাও ওই গাড়িগুলোকে আর হয়রানি করেন না মামলাও দেয় না। যার কারণে মাসিক ‘কন্ট্রাক্ট’ হিসেবে তাকে দিতে হয় নির্দিষ্ট অংকের চাঁদা।

অভিযোগ রয়েছে, ট্রাফিক সার্জেন্ট’দের যোগসাজশে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে শাহাদাৎ হোসেন ওরফে রাজু নামের এই কথিত ভুয়া সাংবাদিক। তার এসব অপকর্ম ও চাঁদাবাজি প্রকাশ্য চললেও নিরব ভূমিকায় রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

প্রতিদিন মাঝিরঘাট ও বন্দর থেকে প্রায় দুইশতাধিক পণ্যবাহী গাড়ি যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। এসব গাড়িতে ভুয়া অনলাইন ‘এনপ্লাস টিভি ডটকম’ নামের স্টিকার লাগিয়ে মাসিক চুক্তি বাবদ ৭ থেকে ১০ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।

সরেজমিনে কদমতলী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরের কাভার্ডভ্যান, কনটেইনারবাহী লরি, ট্রাকের চালকের সামনের গ্লাসের নিচে একাধিক গাড়িতে লাগানো হয়েছে ভুয়া এনপ্লাসটিভি ডটকমের স্টিকার। কদমতলী ডিটি রোডের ছমনা ম্যানশনের চতুর্থ তলায় কথিত এ অনলাইনের অফিস, এই অফিসের আড়ালেই চলে ভুয়া সাংবাদিক রাজুর রমরমা চাঁদাবাজি ও স্টিকার বাণিজ্য।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নোয়াখালীর জেলার সুধারাম থানার ভাটিরটেক গ্রামের আবদুল মালেকের পুত্র শাহাদাৎ হোসেন রাজু। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি কোতোয়ালিতে এক বিএনপি নেতার বাসভবনে ‘সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র ও নাশকতা’র গোপন বৈঠক করার সময় রাজুকে আটক করে কোতোয়ালী থানা পুলিশ।

এরপর প্রায় তিন মাস কারাভোগের পর সাবেক বন্দর থানার ট্রাফিক পরিদর্শক আবুল কাশেমের ‘টেন্ডল’ বা ক্যাশিয়ার হিসেবে যোগদান করেন রাজু। দীর্ঘদিন আবুল কাশেম ছাড়াও ওই এলাকায় টানা প্রায় ছয় বছর ‘টেন্ডল’ বা ক্যাশিয়ার হিসেবে বিভিন্ন পরিবহন থেকে চাঁদা সংগ্রহের কাজ করতেন এই কথিত রাজু।

আরো জানা যায়, ২০১৯ সালের ৯ জুলাই চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানার ঝর্ণাপাড়া এলাকায় পুলিশের চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে একজন তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে কথিত চাঁদাবাজ শাহাদাৎ হোসেন রাজু ও তার সহযোগী মহব্বত আলীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

এ ঘটনায় ধর্ষিতা নারী বাদী হয়ে ২ জনের নামে মামলা করে। এর পর আটক করে তাদেরকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে জামিনে এসে আবারো আগের অপকর্মে ফিরে এলাকায় চালাচ্ছে চাঁদাবাজি, দখলবাজি, ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড।

দেখা যায়, ভুয়া অনলাইন এনপ্লাস টিভির মস্তবড় সম্পাদক রাজু, আর তার স্ত্রী ফারজানা আক্তার পিংকি বনে যান ভাইস চেয়ারম্যান।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে শাহাদাৎ হোসেন রাজুর মোবাইল ফোনে একাধিক বার কল দেয়া হলেও তিনি কল রিসিভ করেনি।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিএমপির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, এই ভুয়া সাংবাদিক রাজুকে আমরা খোঁজ খবর নিয়ে আটকের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিউজ হওয়াতে সে এলাকা ছেড়ে আত্নগোপনে চলে গেছে। আমাদের ২৪ ঘন্টা নজরদারি আছে তার বিরুদ্ধে।

সকালের-সময়/এমএফ

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ