হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ, ক্যারিবীয়দের উল্লাস


সকালের-সময় স্পোর্টস ডেস্ক ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ৬:২৮ : পূর্বাহ্ণ

ঢাকা টেস্টে জয়ের সম্ভাবনা তৈরি করেও শেষ পর্যন্ত হেরে গেল বাংলাদেশ। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে গতকাল দ্বিতীয় টেস্টের চতুর্থ দিন ২৩১ রান তাড়া করতে নেমে ২১৩ রানে গুটিয়ে যায় মুমিনুল হকের দল। ১৭ উইকেট পতনের রোমাঞ্চকর এ দিনে ১৭ রানের জয় তুলে নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এ জয়ে দুই টেস্টের সিরিজে বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করল তারুণ্যনির্ভর দলটি।

বলাবাহুল্য, ঘরের মাঠে ৯ বছর পর টেস্টে হোয়াইটওয়াশ হলো বাংলাদেশ। টাইগাররা সর্বশেষ হোয়াইটওয়াশের শিকার হয় এ ওয়েস্ট ইন্ডিজেরই বিপক্ষে। ২০১২ সালেও বাংলাদেশের মাটিতে ২-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ জিতেছিল ক্যারিবীয়রা। সেবার অবশ্য বাংলাদেশ সফরে এসেছিল পূর্ণ শক্তির ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল।

গতকাল ২৩১ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় ২১৩ রানে। তামিম ইকবাল ছাড়া আর কেউই পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলতে না পারায় ছোট্ট টার্গেটও অধরা রয়ে গেল। মেহেদী হাসান মিরাজ শেষদিকে নাঈম হাসান ও আবু জায়েদ রাহীকে নিয়ে ২৫ রানের দুটি পার্টনারশিপ গড়ে দলের আশা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন, যদিও শেষরক্ষা হয়নি।

ব্যক্তিগত ৩১ রানে জোমেল ওয়ারিক্যানের বলে দীর্ঘদেহী রাহকিম কর্নওয়ালকে ক্যাচ দেন মিরাজ। এর মধ্য দিয়ে শেষ হয় বাংলাদেশের লড়াইও। এর আগে সকালে মাত্র ৭৬ রানের মধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাকি ৭ উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা জাগান বোলাররা।

তাইজুল তিনটি, নাঈম দুটি ও রাহী একটি উইকেট নিয়ে অতিথিদের ১১৭ রানে অলআউট করেন। ৩৬ রানে চার উইকেট নেন তাইজুল, ৩৪ রানে তিনটি উইকেট নেন নাঈম, রাহীর শিকার ৩২ রানে ২ উইকেট। আগের দিন দ্রুততম ১০০ উইকেট শিকারের রেকর্ড গড়া মিরাজ নেন ১৫ রানে এক উইকেট। যদিও বাংলাদেশের হারে বিফলেই গেল বোলারদের এ লড়াই।

বিশ্বের সবচেয়ে ‘ভারী’ ক্রিকেটার কর্নওয়াল প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নেন, গতকাল দ্বিতীয় ইনিংসে নেন আরো চার উইকেট। মিরপুরের স্লো উইকেটের সুবিধা পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে কুপোকাত করেন তিনি। তার বাউন্স ও ঘূর্ণি বলের কোনো জবাব দিতে পারেননি মুমিনুলরা।

২০১৭ সালের পর এ প্রথম বিদেশের মাঠে কোনো টেস্ট সিরিজ জিতল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তা-ও ‘খর্বশক্তি’র একটি দল নিয়ে। সিরিজের দল ঘোষণার পর তারকাদের অনুপস্থিতি দেখে বাংলাদেশের নির্বাচক থেকে শুরু করে অনেক খেলোয়াড়ও হতাশা প্রকাশ করেন। অথচ এ দলটির কাছেই কিনা শেষ পর্যন্ত হোয়াইটওয়াশের লজ্জা বরণ করতে হলো তামিম, মুশফিকদের।

পরাজয় শেষে সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশ দলনায়ক মুমিনুল হক বলেন, পরাজয় সব সময়ই হতাশার।
আমাদের জন্য পজিটিভ হলো মিরাজের বোলিং ও ব্যাটিং। তাইজুলও সত্যিই অনেক ভালো বল করেছেন। আসলে ওপেনাররা যখন ব্যাট করছিলেন তখন ভাবছিলাম, আমরা চেজ করতে যাচ্ছি। কিন্তু মিডল অর্ডার দুর্ভাগ্যজনকভাবে ধসে পড়ল। মিরাজ যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন, যদিও আমরা লক্ষ্যে পৌঁছতে পারলাম না।

সাকিব আল হাসানের দলে না থাকাটা ব্যবধান গড়ে দিয়েছে বলে মনে করেন মুমিনুল। তার কথায়, সাকিব আসলে একের ভেতর দুই। কাজেই তাকে হারালে একজন অধিনায়ক হিসেবে দলের ভারসাম্য ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।

ম্যাচসেরা কর্নওয়ালের অনুভূতি ঝরল এভাবে, আমি মনে করি, এটা দারুণ পারফরম্যান্স। প্রথম দিন থেকেই গোটা টিমের মধ্যে প্রাণশক্তিতে ভরা ছিল। কোচিং স্টাফ আমাদের পূর্ণ সমর্থন দিয়ে গেছেন। কন্ডিশন যখন খানিকটা স্পিনবান্ধব হয়, তখন আমি বোলিংটা উপভোগ করি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৪০৯ ও ১১৭ (বোনার ৩৮, ডি সিলভা ২০, ক্যাম্পবেল ১৮; তাইজুল ৪/৩৬, নাঈম ৩/৩৪, রাহী ২/৩২)।

বাংলাদেশ: ২৯৬ ও ২১৩ (তামিম ৫০, মিরাজ ৩১, মুমিনুল ২৬; কর্নওয়াল ৪/১০৫, ব্র্যাথওয়েট ৩/২৫, ওয়ারিক্যান ৩/৪৭)। ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৭ রানে জয়ী।

ম্যাচসেরা: রাহকিম কর্নওয়াল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)।

সিরিজসেরা: এনক্রুমাহ বোনার (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)।

সিরিজ: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২-০ ব্যবধানে জয়ী।

এসএস

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ