বাবারা আলটিমেটাম দিয়ো না: বুয়েট ভিসি


সকালের-সময় রিপোর্ট ৯ অক্টোবর, ২০১৯ ১:০৩ : অপরাহ্ণ

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার ৩৯ ঘণ্টা পর শিক্ষার্থীদের সামনে হাজির হন উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বেঁধে দেয়া সময় শেষে বুয়েট ভিসি অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে শিক্ষার্থীদের সামনে হাজির হন। এর আগে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে বুয়েটের প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে দেন।

বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীদের সামনে আসেন ভিসি সাইফুল ইসলাম। কার্যালয় থেকে বেরিয়ে এসে শিক্ষার্থীদের যে যে প্রশ্নের মুখোমুখি হন, তার মধ্যে অন্যতম ছিল, তিনি কেন সন্তানের (আবরার) জানাজায় তিনি কেন হাজির হননি।

জবাবে উপাচার্য বলেন, সে সময় তিনি মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে ছিলেন। শিক্ষার্থীরা পাল্টা প্রশ্ন করেন, জানাজা পড়তে পাঁচ মিনিটের বেশি সময় লাগে না। জবাবে তিনি বলেন, গতকাল সন্ধ্যার দিকে ক্যাম্পাস থেকে পুলিশকে সরানোসহ নানা কাজে তাঁকে ব্যস্ত থাকতে হয়েছিল।

শিক্ষার্থীদের আট দফা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্য বলেন, তোমরা আলটিমেটাম দিয়ো না, বাবা! আমি তো বলেছি, তোমাদের দাবির সঙ্গে ইন প্রিন্সিপল আমি একমত। এর আগে শিক্ষার্থীরা ভিসির কার্যালয়, একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবনেও তালা লাগিয়ে দেন। এরপর তারা ভিসি কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। শিক্ষার্থীরা সেখানে ‘হইহই রইরই ভিসি স্যার গেল কই’ বলে স্লোগান দেন।

শিক্ষার্থীরা যখন ভিসির কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিচ্ছিলেন, তখন এক ছাত্রী সেখানে এসে বলেন, ভিসি ওই কার্যালয়ের ভেতরে অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। এর পরই ভিসি শিক্ষার্থীদের সামনে আসেন।

এ সময় ভিসি অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে আমি নীতিগতভাবে একমত। সমস্যা সমাধানের উপায় বের করা হচ্ছে। আমি কাজ করে যাচ্ছি। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের প্রশ্নবাণে জর্জরিত হন। কিন্তু তিনি কোনো প্রশ্নেরই সুর্দিষ্টভাবে জবাব দিতে চাননি। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের মধ্যে বারবার ঘুরেফিরে আসে যে, তিনি আবরারের জানাজায় যোগ দেননি কেন।

শেরেবাংলা হলে রাতে পুলিশ জড়ো করা হয়েছিল কেন। এমন নানা প্রশ্ন এলেও ভিসি বারবার বলছিলেন, তিনি প্রশ্নের জবাব দিতে হাজির হননি। এ সময় তিনি দু’একবার উত্তেজিত হন।

পাশাপাশি আলোচনার জন্য তিনি শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি চান। তিনি এ সময় শিক্ষার্থীদের বলেন, তিনি শিক্ষার্থীদের জন্যই কাজ করছেন। সোমবার রাত ১টা পর্যন্ত তিনি অফিসে কাজ করেছেন। তিনি কী করছেন তা সরকারের সব মহল জানেন। ছাত্রছাত্রীদের যেটা ভালো হয় সেটাই তিনি করবেন।

তিনি শিক্ষার্থীদের অধৈর্য না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তিনি শিক্ষার্থীদের জন্যই আছেন, থাকবেন। দাবি বাস্তবায়নের উপায় খোঁজা হচ্ছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দাবি বাস্তবায়ন করা হবে। বারবার চাপের মুখে তিনি কোনো আলটিমেটাম না দেয়ার পরামর্শ দেন শিক্ষার্থীদের।

এ সময় খুনি হিসেবে চিহ্নিতদের ছাত্রত্ব বাতিলের জন্য দাবি তুলছিলেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু ভিসি তাৎক্ষণিক জবাব দিচ্ছিলেন না। ফলে উভয়পক্ষে আলোচনা ভেঙে যায় এবং ভিসি নিজের দফতরে ফিরে যান। পরে শিক্ষার্থীরা পুনরায় ভিসির কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন।

প্রসঙ্গত রোববার দিবাগত রাত ৩টার দিকে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের একতলা থেকে দোতলায় ওঠার সিঁড়ির মাঝ থেকে আবরারের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। জানা যায়, ওই রাতেই ২০১১ নম্বর কক্ষে আবরারকে ডেকে নিয়ে পেটান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা।

পুলিশ জানিয়েছে, আবরারের দেহে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার লাশে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। আবরার বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী ছিলেন।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে সোমবার সন্ধ্যার পর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন নিহত আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ। এ ঘটনায় বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুয়েট ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে ১১ জনকে।

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ