জয়-পরাজয়ে ৩৮টি ভোটে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি


৯ মার্চ, ২০১৯ ২:১৬ : অপরাহ্ণ

সকালেরসময় রিপোর্ট:: মাত্র একদিন পরই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দেশের দ্বিতীয় সংসদ বলে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। স্বাধীন দেশে ডাকসুর এটি ৮ম নির্বাচন। প্রতীক্ষিত এ নির্বাচনকে সামনে রেখে চলছে জোর প্রচারণা। শেষ সময়ে নির্ঘুম রাতদিন পার করছেন প্রার্থীরা।

প্রতিটি ভোটারের কাছে অন্তত নিজের চেহারা একবার দেখানোর চেষ্টা, ভোট চাইছেন বলছেন, বিজয়ী হলে কাজ করবেন শিক্ষার্থীদের জন্য। ইতোমধ্যে ইশতেহারও দিয়েছেন প্রার্থীরা। জয়-পরাজয়ের নানা হিসাব কষছেন তারা। তাই শেষ বেলায় আর সময় নষ্ট করতে চাইছেন না। ডাকসুর ২৫টি পদ ও হল সংসদের ১৩টিসহ প্রতি ভোটার ভোট দেবেন মোট ৩৮টি।

৩৮টি ভোটে মূল লড়াই হবে কেন্দ্রীয় সংসদের ভিপি-জিএস-এসজিএস পদে। অন্যান্য পদগুলোতে স্বাভাবিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা। আর হলগুলোর মধ্যে ছাত্রীদের হলে লড়াই জমবে। এসব হলে ছাত্রদলের কোনো প্যানেল না থাকলেও স্বতন্ত্র প্যানেল শক্ত অবস্থানে রয়েছেন প্রার্থীরা। তাই ছাত্রদের হলে ছাত্রলীগ এগিয়ে থাকলেও ছাত্রীদের হলগুলোতে শঙ্কায় রয়েছে সংগঠনটির প্রার্থীরা। আবার নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা তা নিয়েও শঙ্কা কম নেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে।

কেন্দ্রীয় সংসদে ভিপি পদে মূল লড়াইয়ে থাকবেন ছাত্রলীগের রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্রার্থী নুরুল হক নুরু। এ ছাড়াও এ পদে আরও ১৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।তবে সেখানে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের মোস্তাফিজুর রহমান ও বামজোটের লিটন নন্দী ছাড়া অন্য কেউ আর আলোচনায় নেই। তবে নির্বাচনে বড় ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে শোভন ও নুরের মধ্যে। এ পদে অনেকে নুরুল হক নুরকে ছাত্রলীগের শোভনের থেকে এগিয়ে রাখছেন।

কোটা আন্দোলনে সফল নেতৃত্ব দেয়া, ছাত্রলীগ ও পুলিশের হাতে নির্যাতিত হওয়া, নিপরাপদ সড়ক আন্দোলনসহ বছর দেড়েক ধরে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার থাকায় নুরের জনপ্রিয়তা বর্তমানে ক্যাম্পাসে তুঙ্গে রয়েছে। অন্যদিকে ছাত্রলীগের প্রার্থী শোভনের কিছু ব্যক্তিগত দুর্বলতাও নুরকে এগিয়ে দিয়েছে। আবার ক্ষমতাসীন হওয়ায় হলগুলোতে ছাত্রলীগের একক আধিপত্যের কারণে শোভনও জিততে পারেন বলে মনে করেন অনেকে।

তাদেরও কিছু ভোট রয়েছে। আর বাকি প্রার্থীদের মধ্যে ছাত্রদলের মোস্তাফিজ, স্বতন্ত্র জোটের অরণি সেমন্তি খান ও বামজোটের লিটন নন্দী এদের পরপর থাকবেন বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা। এদিকে জিএস পদে মূল লড়াই হবে ছাত্রলীগের গোলাম রাব্বানী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এ আর এম আসিফুর রহমানের মধ্যে। গোলাম রাব্বানী নেতা হওয়ার আগ থেকেই ফেসবুক ভিত্তিক নিজের প্রচার প্রচারণায় বেশ মনযোগী।

তিনি এ নির্বাচনে মূল লড়াইয়ে থাকবেন। তার সঙ্গে লড়াইটা হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ও দৈনিক প্রথম আলোর সাবেক নিজস্ব প্রতিবেদক এ আর এম আসিফুর রহমানের। আসিফ দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের পক্ষে বিভিন্ন প্রতিবেদন করে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, ছাত্র রাজনীতির নানা অনিয়ম নিয়েও গত চার বছর কাজ করেছেন আসিফ।

এ ছাড়াও ক্যাম্পাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থী-ছাত্রনেতাদের মধ্যে তার ভালো গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। যার কারণে সাধারণ ও সচেতন শিক্ষার্থীরা তাকেই বেছে নিতে পারেন বলে মনে হচ্ছে। জিএস পদে অন্যান্যদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকবেন- কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্রার্থী রাশেদ খান, ছাত্র ফেডারেশনের উম্মে হাবিবা বেনজীর ও ছাত্রদলের আনিসুর রহমান খন্দকার অনিক।

এজিএস পদে মূল লড়াই হবে ছাত্রলীগের সাদ্দাম হোসেন ও কোটা আন্দোলনকারীদের ফারুক হাসানের মধ্যে। তবে এ পদে ছাত্রলীগের সাদ্দাম এগিয়ে রয়েছেন। ক্যাম্পাসে ক্লিন ইমেজ, দক্ষ নেতৃত্ব ও সুন্দর উপস্থাপনার জন্য ইতোমধ্যে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে পরিচিত মুখ সাদ্দাম। তাই নির্বাচনের মূল লড়াইয়ে সাদ্দাম এগিয়ে থাকবেন বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়াও বিতর্ক অঙ্গন থেকে উঠে আসা সাদ্দামের প্রগতিশীল ধ্যান ধারণায় শিক্ষার্থীদের কাছে ভালো গ্রহণযোগ্যতা তার।

সাদ্দামের সঙ্গে এজিএস পদে লড়াই হবে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্রার্থী ফারুক হাসানের। ফারুক হাসানও কোটা সংস্কার আন্দোলনে সফল নেতৃত্ব দেয়া ও পুলিশ-ছাত্রলীগের হাতে নির্যাতিত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মনে তার প্রতি সহানুভূতি রয়েছে। তাই কোটা আন্দোলনের সফলতার কারিগর হিসেবে তাকে ভোট দেবেন অনেকে। এ ছাড়াও এ পদে ছাত্রদলের সোহেলসহ অন্য প্রার্থীরা এ দু’জনের পর পর থাকবেন।

জানতে চাইলে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্যানেলে এজিএস প্রার্থী ফারুক হাসান বলেন, ‘কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে আমরা নেতৃত্ব দিয়েছি। যার কারণে আমাদের ছাত্রলীগ ও পুলিশের হাতে নির্যাতিত হতে হয়েছিল। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে আগামীতেও সব হামলা-মামলা মোকাবেলা করে সোচ্চার হব। তাই সাধারণ শিক্ষার্থীরাও আমাদের চাচ্ছেন। আমরা যখন শিক্ষার্থীদের কাছে ভোট চাইতে যাচ্ছি তারাও বলছেন আগামী ১১ মার্চ তারা আমাদের সমর্থন দিতে প্রস্তুত রয়েছেন।

ছাত্রলীগের এজিএস প্রার্থী সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আমাদের মধ্যে অনেক রঙ থাকতে পারে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইস্যুতে আমাদের সবার একটি রঙ। আমরা বিগত দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীর সুখে-দুঃখে, বিরহ সাফল্যে পাশে ছিলাম। তাই তারা আমাদের চাচ্ছে। আমরা আশা করছি, সাধারণ শিক্ষার্থীরা আগামী ১১ মার্চ ছাত্রলীগকেই বিজয়ী করবে। স্বতন্ত্র প্রার্থী এ আর এম আসিফুর রহমান বলেন, আমরা যখন শিক্ষার্থীদের কাছে যাচ্ছি তখন তাদের মধ্যে একটা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখতে পাচ্ছি। তারা এখনো নিশ্চিত নয় যে তারা আদৌ ভোট দিতে পারবে কি না।

সাধারণ শিক্ষার্থীরা রাজনীতির বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্তি চায়। তারা চায় এমন নেতা ডাকসুতে আসবে যিনি কোনো দল থেকে নয়, বরং শিক্ষার্থীদের থেকে নির্বাচিত হবে। শিক্ষার্থীদের দ্বারা নির্বাচিত হবে। তিনি বলেন, প্রতিটি হলে গেলেই শিক্ষার্থীদের ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। আশা করছি, ১১ তারিখ সাধারণ শিক্ষার্থীরা আমাকে জিএস পদে নির্বাচিত করবেন।

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ