সকালেরসময় সিডনি প্রতিনিধি:: অস্ট্রেলিয়ায় অধ্যয়নরত বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জ্ঞানার্জনের সর্বোচ্চ সুযোগ কাজে লাগাতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অস্ট্রেলিয়া সফরের দ্বিতীয় দিনে শনিবার সকালে সিডনির প্যারাম্যাটায় ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটির সাউথ ক্যাম্পাস পরিদর্শনের সময় তিনি বলেন, বাংলাদেশের এখানে যারা পড়তে আসে এখান থেকে শুধু ডিগ্রি নিয়ে যাওয়া নয়, এদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।
অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়টিতে স্থাপিত বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আবক্ষ ভাস্কর্যে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাও জানান বঙ্গবন্ধুকন্যা হাসিনা। ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটির সাউথ ক্যাম্পাসে ইন্সটিটিউট অফ ওসন গভার্নেন্সের সামনে ২০১৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুর এই আবক্ষ ভাস্কর্যটি উদ্বোধন করেছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। সমুদ্রসীমা নির্ধারণে ১৯৭৪ সালে সংসদে আইন করায় ইন্সটিটিউট অফ ওসন গভার্নেন্সের সামনে বাংলাদেশের জাতির জনকের আবক্ষ ভাস্কর্যটি স্থাপন সঠিক বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, জাতির জনক আমাদের সংসদে ১৯৭৪ সালে এই আইনটি করে। আর সমুদ্রসীমা বিরোধ নিয়ে ১৯৮২ সালে জাতিসংঘ আইন করে। নিজের সময়ে ভারত ও মিয়ানমারের মতো প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তি করার বিষয়টি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে দুই প্রতিবেশীর সঙ্গেই সমাধান করি।
প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সমস্যা সমাধানের অনেকে ক্ষেত্রই তিক্ততা সৃষ্টি হওয়ার কথাও বলেন তিনি। সমুদ্র সম্পদ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কীভাবে কাজে লাগানো যায় , সেদিকে নজর দেওয়ার উপর জোর দেন তিনি। এক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ার কাছ থেকে এই সম্পর্কিত জ্ঞান আহরণের কথাও বলেন তিনি। ১৯৭২ সালের ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার পর থেকে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে উষ্ণ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথাও স্মরণ করেন শেখ হাসিনা।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার পর বিশ্বনেতাদের মধ্যে যারা বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে অস্ট্রেলিয়ার তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা এডওয়ার্ড গফ হুইটলামকেও স্মরণ করেন তিনি। এডওয়ার্ড গফ তখন বাংলাদেশিদের উপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অত্যাচারের বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য কমনওয়েলথসহ অন্যান্য দেশের স্বীকৃতি আদায়েও জোরাল ভূমিকা ছিল অস্ট্রেলিয়ার এই রাজনীতিকের।
১৯৭৫ সালের জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে এডওয়ার্ড গফের বাংলাদেশ সফরের কথা স্মরণ করেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক উইলিয়াম এ এস অডারল্যান্ডের বীরোচিত ভূমিকার কথাও স্মরণ করেন শেখ হাসিনা। ভিনদেশি এই মুক্তিযোদ্ধাকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাব দিয়েছে বাংলাদেশ বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’ সম্মাননায় ভূষিত করা হয় তাকে। উচ্চতর শিক্ষার জন্য বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য অস্ট্রেলিয়া একটি প্রিয় গন্তব্য হিসাবেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করছেন।
বাংলাদেশের বিচার বিভাগের দক্ষতা বাড়াতে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওশেনোনগ্রাফি বিভাগের প্রশিক্ষণে ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটির সহযোগিতার কথাও স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশে ব্লু ইকোনমিতে সব মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত এবং এতে অর্থায়ন, প্রযুক্তি বিনিময়সহ বিভিন্ন ক্ষেত্র অস্ট্রেলিয়ার সহযোগিতা ও অংশীদারিত্বের কথাও বলেন তিনি। সমুদ্র থেকে মৎস্য সম্পদ আহরণ এবং এক্ষেত্রে প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষক বিনিময়ে অস্ট্রেলিয়ার সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন প্রধানমন্ত্রী। উন্নয়নশীল দেশের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অস্ট্রেলিয়ার উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সহায়তাও চান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশ যখন উন্নয়নের পরবর্তী স্তরে যাচ্ছে, তখন আমাদের মানব সম্পদের আরও দক্ষতা প্রয়োজন। যে ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ এবং কারিগরি শিক্ষায় সহায়তা করতে পারে অস্ট্রেলিয়া। বাংলাদেশর তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এজন্য আমরা অস্ট্রেলিয়া আর ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা নিচ্ছি।
ক্যাম্পাসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক বার্নি গ্লোভার।
এডওয়ার্ড গফের বাংলাদেশ সফরের বিভিন্ন আলোকচিত্রও প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী জাতির জনকের ভাস্কর্যে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।
এসময় স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা নিরাপত্তা বলয়ের বাইরে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেন। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর শেখ হাসিনা হেঁটে গিয়ে তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
পরে আরএমআইটি ইউনিভার্সিটির উপ উপাচার্য অধ্যাপক জেফরি স্ট্রোকের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ইন্টারকন্টিনেন্টাল সিডনি হোটেলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। অর্থনীতির উন্নয়নে বৈদেশিক মুদ্রার সুষ্ঠু ব্যবহারের উপর তারা মানিকগঞ্জের শিবালয়, কুষ্টিয়ার খোকসা, রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দী এবং ময়মনসিংহের ফুলপুরে জরিপ চালাচ্ছে। তারা তাদের জরিপের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে জানান।