এটিসি” ভুলকেই সন্দেহ করছে ইউএস-বাংলা


১৩ মার্চ, ২০১৮ ১২:৪২ : পূর্বাহ্ণ

সকালেরসময় বিশ্ব ডেস্ক::  এয়ারলাইন্স দুর্ঘনা যেন দিন দিন বেড়েই চলছে, কাঠমান্ডুতে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের প্লেন বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় প্রাণহানির কোনো সুনির্দিষ্ট সংখ্যা এখনও দিতে পারছে না কতৃপক্ষ। নেপাল সেনাবাহিনীর মুখপাত্রের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম “অন্তত ৫০”জনের প্রাণহানির খবর দিলেও দেশটির পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে কাঠমান্ডুভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বলছে, এ সংখ্যা ৪৯ জন।

সোমবার “১২ মার্চ” দুপুরে প্লেনটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত এ খবরই পাওয়া যাচ্ছিলো আন্তর্জাতিক ও নেপালী সংবাদমাধ্যমে। দুপুর ২টা ২০ মিনিটে কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় প্লেনটি বিধ্বস্ত হয়। ঢাকা থেকে যাওয়া ৭৮ আসনের উড়োজাহাজটিতে চার ক্রুসহ মোট ৭১ জন ছিলেন। বিকেল পৌনে ৫টার দিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ব্রিফিং করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানান, এখন পর্যন্ত ৪১ নিহত এবং ২০ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে জানা গেছে। এছাড়া ১০ জন নিখোঁজ রয়েছেন। আর চিকিৎসা শেষে চার জনকে রিলিজ করে দেওয়া হয়েছে।

তবে সন্ধ্যায় রাজধানীর বারিধারায় ইউএস-বাংলার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এয়ারলাইন্সটির সিইও ইমরান আসিফ জানান, তারা এখন পর্যন্ত ৮ জনের প্রাণহানির খবর পেয়েছেন। সংবাদমাধ্যমে এ সংখ্যা বেশি বলে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও আসিফ জানান, তারা সুনির্দিষ্ট তথ্যই এখন বলছেন। রাত সাড়ে ৯টায়ও নেপালের দুই শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম কাঠমান্ডুপোস্ট ও হিমালয়ান টাইমসের খবরে বলা হচ্ছিলো, দুর্ঘটনায় ৪৯ জন নিহত হয়েছেন। ২২ জন আহত হয়েছেন।

হিমালয়ান টাইমস জানিয়েছে, নেপাল পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক “ডিআইজি” মনোজ নেউপানি তাদের বলেছেন, দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৯ জন নিহত হয়েছে। আর ২২ জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। দুর্ঘটনাস্থলে প্লেনের ধ্বংসাবশেষকাঠমান্ডু পোস্টও ডিআইজি মনোজের বরাত দিয়ে বলেছেন, নিহতদের মধ্যে ২২ জন নেপালী, ২৩ জন অন্যান্য দেশের নাগরিক এবং ৪ জন ক্রু।

আর আহতদের কাঠমান্ডু মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, নরবিক হাসপাতাল, গ্রান্ডে হাসপাতাল, ওম হাসপাতাল ও মেডিসিটি সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের সেখানে চিকিৎসা চলছে। দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে ইউএস-বাংলা কর্তৃপক্ষ বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমের “এটিসি” গাফেলতিকে সন্দেহ করছে। আর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, পাইলট তাদের নির্দেশনা মানেনি।

ফ্লাইটে যারা ছিলেন, তারা হলেন- তানিরা তানভীন শশী, পিয়াস, শেখ রাশেদ, কৃষ্ণ কুমার, উম্মে সালমা, আশনা সাকিয়া, অঞ্জলি শ্রেষ্ঠ, সারুনা শ্রেষ্ঠ, সৈয়দা কামরুন নাহার, হরিপ্রসাদ, দয়ারাম তহরাখার, বালকৃষ্ণ থাপা, শ্বেতা থাপা, কিশোর ত্রিপতি, আবাদেশ কুমার যাদব, অনিরুদ্ধ জামান, মো. নুরুজ্জামান, মো. রফিক জামান, রিয়ানা আব্দুল্লাহ, পয়বাল আহমেদ, সামরিন আহমেদ, জাকদ আলী, আলিফুজ্জামান, আলমুন নাহার, বিলকিস আরা, শিলা বাজগাইন, বেগম নুরুন্নাহার বিলকিস, আলজিনা বড়াল, চারু বড়াল।

আকজারা বেগম, শাহীন বেপারী, শুভিন্দ্র সিং, বসঞ্জিত বহরা, সামিরা বায়ানজানকর, প্রবীণ চিত্রকর, নাজিয়া আফরিন চৌধুরী, সাজানা দেবখোজা, প্রিন্সি ধামি, গায়নি কুমারি গুরুং, রেজকানুল হক, মো. রকিবুল হাসান, মেহেদী হাসান, এমরানা কবির হাসি, কবির হোসাইন, দীনেশ হুমাগাইন, সানজিদা হক, হাসানন ইমাম, মো. নজরুল ইসলাম, শ্রেয়া জিলা, পূর্ণিমা লুনানি, মিলি মেহেরজান, নিগা মেহেরজান, সঞ্জয়া মেহেরজান, জেংমিং, আঁখি মনি, মেহনাজ বিন নাসির, কেসাব পান্ডে, প্রসন্না পান্ডে, বিনোদ পাউডাল, হরিশংকর পাউডাল, সঞ্জয় পাউডাল, এফএইচ প্রিয়ক, থামারা প্রিয় নৈইয়ি, মতিউর রহমান, এসএম মাহবুবুর রহমান, আশিষ রঞ্জিত।

সন্দেহ……

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের প্লেন বিধ্বস্ত হওয়ার কারণ হিসেবে সেখানকার বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের “এটিসি” ভুলকেই সন্দেহ করছে এয়ারলাইন্সটির কর্তৃপক্ষ। সোমবার “১২ মার্চ” সন্ধ্যায় রাজধানীর বারিধারায় ইউএস-বাংলার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ সন্দেহ প্রকাশ করেন এয়ারলাইন্সটির সিইও ইমরান আসিফ। এ বিষয়ে আল জাজিরাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম খবর দিয়েছে।

দুপুর ২টা ২০ মিনিটে কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় প্লেনটি বিধ্বস্ত হয়। ঢাকা থেকে যাওয়া ৭৮ আসনের উড়োজাহাজটিতে চার ক্রুসহ মোট ৭১ আরোহী ছিলেন। ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়া একটি রেকর্ডবার্তার বরাত দিয়ে ইউএস-বাংলার সিইও বলেন, বিমানবন্দরের এটিসি টাওয়ার সঙ্গে পাইলটের কথোপকথনের অডিও পেয়েছি। এই রেকর্ডবার্তা শুনলে আপনারা বুঝতে পারবেন, আমাদের ধারণা এটিসি টাওয়ারের ভুল নির্দেশনার কারণে প্লেন বিধ্বস্ত হয়েছে।

অভিযোগ করা হচ্ছে কি-না, এমন প্রশ্ন করা হলে ইমরান আসিফ বলেন, আমরা অভিযোগ করছি না, সন্দেহ করছি। বিমানবন্দরের কোন দিক দিয়ে রানওয়েতে ফ্লাইটটি অবতরণ করবে, সে বিষয়ে কোনো ভুল বার্তা দেওয়া হয়েছে। অডিওটি ইতিমধ্যে অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে। আবেদ সুলতান নামের পাইলট বিমান বাহিনীর সাবেক অফিসার জানিয়ে ইউএস-বাংলার সিইও বলেন, তিনি জীবিত রয়েছেন।

তার পাঁচ হাজার ঘণ্টার ফ্লায়িং অভিজ্ঞতা রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাদের মনে হচ্ছে, যান্ত্রিক কোনো ত্রুটি নয়, বৈমানিকেরও কোনো গাফেলতি ছিল না, এটিসির কোনো গাফেলতি ছিল। এর আগে অবশ্য, ত্রিভুবন বিমানবন্দরের মহাব্যবস্থাপক “জিএম” রাজকুমার ছেত্রী সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, পাইলট বিমানবন্দরের নির্দেশনা মানেননি বিধায় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ