শীর্ষ সোনা চোরাকারবারি আবু আহম্মেদকে পুলিশে দিলেন হাইকোর্ট


মোহাম্মদ ফোরকান  ৮ জানুয়ারি, ২০২৩ ১:৫৫ : অপরাহ্ণ

২০৪ কোটি টাকা অর্থ পাচারের মামলায় সোনা চোরাকারবারি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির বাসিন্দা আবু আহাম্মদকে জামিন না দিয়ে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেছেন হাইকোর্ট। শাহবাগ থানার পুলিশের হাতে তাকে হস্তান্তর করা হয়েছে।

রোববার (৮ জানুয়ারি) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।

গত ১১ ডিসেম্বর ২০৪ কোটি টাকা অর্থ পাচারের মামলায় সোনা চোরাকারবারি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির বাসিন্দা আবু আহাম্মদকে গ্রেপ্তারের পদক্ষেপ জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। চট্টগ্রাম পুলিশ কমিশনারকে এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। একইসঙ্গে আদালতের আদেশ না মানায় আবু আহাম্মদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করে আদালত।

গত ৬ ডিসেম্বর ২০৪ কোটি টাকা অর্থ পাচারের মামলায় সোনা চোরাকারবারি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির বাসিন্দা আবু আহাম্মদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করতে নির্দেশ দেন আদালত। গত ৫ ডিসেম্বর ২০৪ কোটি টাকা অর্থ পাচারের অভিযোগে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির বাসিন্দা ব্যবসায়ী আবু আহাম্মদ হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন।

দায়রা জজ আদালত আবু আহাম্মদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন। জামিন আবেদনে এই তথ্য গোপন করা হয়। জামিন আবেদনে তথ্য গোপন করায় আদালত আইনজীবী ফারিয়া আলমকেও সতর্ক করেন।২০৪ কোটি টাকা অর্থ পাচারের অভিযোগে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির বাসিন্দা ব্যবসায়ী আবু আহাম্মদসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ১৮ মার্চ কোতয়ালি থানায় মামলা করে সিআইডি।

সেই মামলার অভিযোগে বলা হয়, প্রাথমিক অনুসন্ধানে বিএফআইইউ হতে প্রাপ্ত ব্যাংক হিসাব বিবরণী, কাগজপত্র পর্যালোচনা, লেনদেনের ধরন এবং আসামির স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, আসামিরা একে অপরের সহায়তায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কয়েকটি ব্যাংক হিসাব নম্বরে ১২ বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে স্বর্ণ চোরাচালান, চোরাই ও অন্যান্য দ্রব্যের অবৈধ ব্যবসা ও হুন্ডির মাধ্যমে ২০৪ কোটি টাকার পাচারের অর্থ দিয়ে গাড়ি, বাড়ি, মার্কেটসহ বিভিন্ন সম্পত্তি অর্জন করেছেন।

এই মামলায় হাইকোর্টে আত্মসমর্পণ করে জামিন চান ওই আসামি। গত ৭ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ আসামিকে তিন সপ্তাহের মধ্যে চট্টগ্রামের সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। এই নির্দেশের পর ২২ ফেব্রুয়ারি আসামি আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন দাখিল করেন। চট্টগ্রামের সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. ইসমাইল হোসেন নথি তলব পূর্বক ৫ মে জামিন শুনানির জন্য দিন ধার্য রাখেন।

কিন্তু চট্টগ্রামের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে নথি না আসায় জামিন শুনানি হয়নি। এরপর ১৩ জুলাই দিন ধার্য রাখা হলেও নথি না আসায় জামিন শুনানি হয়নি। এরপর ধার্য তারিখে নথি না আসায় ৩১ আগস্ট নথি উপস্থাপনপূর্বক ৫ সেপ্টেম্বর শুনানির দিন ধার্য করে আদালত। এভাবে আরও কয়েকবার শুনানির জন্য সময় প্রার্থনা করেন আসামি। এসব আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত।

গত ১৩ নভেম্বর আসামির সময় আবেদন না মঞ্জুর করে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। বিশেষ আদালতের আদেশে বলা হয়, গত নয় মাস ধরে জামিন শুনানি না করে আসামি সময়ের দরখাস্ত দিয়ে আসছেন। যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং উচ্চ আদালতের আদেশ অবমাননার সামিল। এরপরই ওই আসামি পুনরায় হাইকোর্টে আত্মসমর্পণ করে আগাম জামিন চান।

আসামি পক্ষে ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন ও জাকির হোসেন শুনানি করেন। তারা আদালতের কাছে আবেদনের ওপর নির্দেশনা চান। রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিকের বিরোধিতা করে বলেন, ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে বিশেষ আদালতে নথি পৌঁছা এক ঘণ্টার ব্যাপার। কিন্তু কেন এতদিনেও নথি পৌঁছাল না, এর সুবিধাভোগী এই আসামি। আসামিকে সরাসরি কারাগারে পাঠানো হোক। আবার আত্মসমর্পণের নির্দেশনা দেওয়া হলে হয়তো সে বারবার সময় নিয়ে আবারও বিষয়টিকে বিলম্বিত করবে।

সকালের-সময় ডটকম

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ