ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় সাংবাদিকের জামিন


নিউজ ডেস্ক  ৩ এপ্রিল, ২০২৩ ৩:৫০ : অপরাহ্ণ

রাজধানীর রমনা থানায় দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় সাভারে কর্মরত প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। ২০ হাজার টাকা মুচলেকায় পুলিশি প্রতিবেদন দাখিল পর্যন্ত তাকে জামিন দেওয়া হয়েছে।

সোমবার (৩ এপ্রিল) ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান নূর এ আদেশ দেন। এদিন সকালে শামসের আইনজীবী প্রশান্ত কুমার কর্মকার তার পক্ষে জামিন আবেদন করেন। এরপর শুনানির জন্য দুপুরে সময় নির্ধারণ করা হয়। শামসের পক্ষে আমিনুল গণী টিটো, প্রশান্ত কর্মকার, আশরাফ উল আলম প্রমুখ আইনজীবী শুনানি করেন।

শুনানিতে তারা বলেন, আসামির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা ভিত্তিহীন। এ মামলার এজাহারে বর্ণিত ঘটনা, অর্থাৎ প্রতিবেদনটি করা হয়েছে দিনমজুর জাকির হোসেন এবং সবুজ নামের প্রথম শ্রেণির একজন ছাত্রের বক্তব্য দিয়ে। এটিতে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। এখানে দেশের স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়নি।

ওই প্রতিবেদনের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে ছবির সঙ্গে দিনমজুর জাকির হোসেনের বক্তব্য ছিল, তা প্রথম আলোর কাছে অসঙ্গতিপূর্ণ মনে হওয়ায় প্রথম আলো স্ব উদ্যোগে তা প্রত্যাহার করে নেয়। দুঃখ প্রকাশ করে, ক্ষমা চায়। পরে সংশোধনী আকারে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে।

কোনো স্বাধীনতাবিরোধীর মিথ্যা তথ্য দিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে রিপোর্ট করা হয়নি। এছাড়া রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করে শুনানি করেন মহানগর পিপি আব্দুল্লাহ আবু। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আছাদুজ্জামান নূর ২০ হাজার টাকার মুচলেকায় জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন।

গত ৩০ মার্চ শামসুজ্জামানকে কারাগারে পাঠানোর আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা মডেল থানার পরিদর্শক আবু আনছার। অপরদিকে আসামি পক্ষে জামিনের আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

গত ২৯ মার্চ ভোর ৪টার দিকে সিআইডির পরিচয়ে শামসুজ্জামানকে তুলে নিয়ে যায়। রাতে তাকে তেজগাঁও থানায় করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেফতার দেখায় পুলিশ। গত ২৯ মার্চ রাত ১১টার দিকে অ্যাডভোকেট আবদুল মশিউর মালেক নামের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে রাজধানীর রমনা থানায় এ মামলাটি দায়ের করেন।

এ মামলায় প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, পত্রিকাটির সাভারের নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামস, সহযোগী একজন ক্যামেরাম্যান এবং অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়ে।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে দৈনিক প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে একটি ছবিসহ সংবাদ প্রকাশ করা হয়। একই সঙ্গে সংবাদটি তাদের ফেসবুক পেজে শেয়ার করা হয়। সংবাদটিতে দেখা যায়, একটি শিশু ফুল হাতে জাতীয় স্মৃতিসৌধের ফটকে দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিবেদকের দাবি, ওই শিশুটির নাম জাকির হোসেন।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, শিশু জাকির হোসেন বলে- ‘পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগবো।’ পরবর্তীতে ৭১ টিভি চ্যানেলে প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে, অনুসন্ধানে দেখা যায় শিশুটির নাম সবুজ আহমেদ।

তার বাড়ি সাভার থানার কুরগাঁও পাড়ায়। বাবা একজন রাজমিস্ত্রি, মা মুন্নী বেগমের তিন সন্তানের মধ্যে মেজো সন্তান সবুজ। প্রথম আলোর তথ্যে বলা হয়েছে, সে দিনমজুর। কিন্তু সাতবছরের শিশু সবুজ আহমেদ প্রথম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে এবং স্কুল শেষে মাঝেমধ্যে ফুল বিক্রি করে।

এজাহারে আরও বলা হয়, শামসুজ্জামানের প্রস্তুত করা প্রথম আলোর ওই সংবাদে বলা হয়েছে, ‘পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগবো’। প্রকৃতপক্ষে শিশুটি এ ধরনের কোনো কথা বলেনি। শিশুটি জানিয়েছে, প্রথম আলোর সাংবাদিক শিশুর হাতে ১০ টাকা দিয়ে এই ছবি তুলেছে।

এতে প্রমাণিত হয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি এবং বাংলাদেশের অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার হীন উদ্দেশ্যে একটি অশুভ চক্র দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এই মিথ্যা সংবাদ তৈরি ও পরিবেশন করে অনলাইন ও সামাজিক মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যার ফলে দেশের অভ্যন্তরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।

এসএস

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ