চামড়া বিপর্যয়, নগদ ১৮০ কোটি টাকা খেয়ে পেলল ট্যানারি মালিকরা!


সকালের-সময় রিপোর্ট ২ আগস্ট, ২০২০ ২:৪৯ : অপরাহ্ণ

চামড়া বিপর্যয় ঠেকাতে ঈদুল আজহার আগে চামড়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থা। এমনকি অর্থের ঘাটতি মেটাতে বিশেষ ঋণ সুবিধাও অব্যহত রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এমনকি কেস টু কেস ভিত্তিতে কাঁচা ও ওয়েটব্লু চামড়া রপ্তানির সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর পরেও চামড়ার দর মেলেনি। এবার কোরবানির পশুর চামড়ার বাজার নিয়ে হতাশাজনক পরিস্থিতি বিরাজ করছে….

দেশে করোনা মহামারি, বন্যার দুর্যোগ ও আন্তর্জাতিক বাজারে দর বিপর্যয় বিবেচনায় নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে দর নির্ধারণ করে সরকার। এবার গত বছরের চেয়েও প্রায় ২৩ থেকে ৩০ শতাংশ কমিয়ে দর নির্ধারণ করা হয়। নির্ধারিত এই দর এবার গত দশ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ছিল। এরপরেও নির্ধারিত দরের অর্ধেকে ও কয়েকভাগ কমে চামড়া বেচাকেনা হয়েছে।

সারাদেশে নির্ধারিত দর প্রতিবর্গফুট গরুর লবণযুক্ত চামড়া ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। একটি ২০ বর্গফুট গরুর চামড়া নির্ধারিত দর ৩৫ টাকা বর্গফুট ধরে লবণযুক্ত চামড়ার দাম পরে ৭০০ টাকা। এবার প্রতিবস্তা ৫০ কেজি লবণের দাম ৮০০ টাকা।

এমন আকারের একটি চামড়ায় ৭ কেজি লবণ ব্যবহার করলে ১১২ টাকা, শ্রমিকের মজুরি ১০ টাকা, আড়ত কমিশন ৮ টাকা ধরা হলেও মোট ব্যয় হবে ১৩০ টাকা। এই ব্যয় করে প্রতিটি চামড়ায় ৭০ টাকা মুনাফা করলেও ৫০০ টাকায় কেনার কথা। অথচ রবিবার ব্যবসায়ীরা এই চামড়া ১০০ থেকে ২০০ টাকায় কিনেছেন।

এদিকে রোববার চট্টগ্রামেও সকালে এসেছে বেশ কিছু চামড়া। চট্টগ্রাম কাঁচা আড়তদার জানান, চট্টগ্রামের বাইরে বিভিন্ন উপজেলা থেকেও চামড়া আসবে। আগে কাঁচা চামড়া নিয়ে আসা হতো। এবার লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করার পর চামড়াগুলো আড়তে আনতে বলা হয়েছে।

এ বছর চট্টগ্রামে গরুর লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম ২৮ থেকে ৩২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। খাসির লবণযুক্ত চামড়ার দাম ধরা হয় ১৩ থেকে ১৫ টাকা ও বকরির চামড়া ১০ থেকে ১২ টাকা। আড়তদাররা জানান, ‘অন্যান্য বছরগুলোতে মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীদের তৎপরতা ছিল বেশি। গতবছরও বেশি দাম চাওয়ায় কিনতে পারিনি। এতে নষ্ট হয়ে যায় অনেক চামড়া। এবছর তুলামূলক সস্তায় চামড়া কিনতে পেরেছি।

চামড়া ব্যবসায়ীরা বলেন, সবচেয়ে বড় চামড়া কিনেছেন ৬০০ টাকায়। এর চামড়া আকারে গড়ে ৪০ বর্গফুট হবে। মাঝারি চামড়া ৩০ বর্গফুট ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় কিনেছেন। আর ১৮ থেকে ২০ বর্গফুট আকারের ছোট চামড়া ১০০ থেকে দেড়শ টাকায় কিনেছেন। এই আড়তের সামনের সড়কে বসে অনেকেই তখন চামড়া কিনছিলেন।

দেখা যায়, আড়াইশ থেকে ৩০০ টাকায় চামড়া কেনাবেচা চলছে। দেখতে বেশ বড় মনে হওয়ায় এটাই সবচেয়ে বড় সাইজ কিনা ক্রেতাদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, এটা মাঝারি মানের চামড়া আকারে ২৫ থেকে ৩০ বর্গফুট হবে।

এবার দাম এত কম কেন? জানতে চাইলে ক্রেতারা জানান, ট্যানারিগুলো টাকা দেয়নি। কিভাবে চামড়া কিনবে আড়তদাররা? ট্যানারি টাকা না দিলে কোন বছরই কেনাবেচা জমে ওঠে না। গত দুই বছর ধরে ট্যানারি টাকা দেওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে জানান তারা।

খুচরা চামড়া বিক্রেতারা বলেন, নির্ধারিতদাম দূরের কথা কেনাদামেও বিক্রি করতে পরেননি চামড়া। উল্টো লোকশান দিতে হয়েছে। এভাবে চামড়ায় লোকসান হওয়ায় এবার হাতেগোনা অল্পসংখ্যক ব্যবসায়ী চামড়া কিনেছেন। বেশিরভাগ চামড়া মাদ্রাসাগুলো নিয়েছে। তারা যে দাম পেয়েছে তা খুবই কম। সারাদেশে চামড়ার গত বছরের মতো একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

চামড়ার দামে এই চিত্র সারাদেশ জুরেই ছিল। শনিবার সন্ধ্যায় দেশের বিভিন্ন আড়তে সারিসারি চামড়াবোঝাই ট্রাক ঢুকতে দেখা গেছে। ট্রাকে থাকা শ্রমিকদের কাছে কতদামে কেনা হয়েছে জানতে চাইলে তারা বলেন, ১০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে এ চামড়া কেনা হয়েছে। গত বছরও এমন দর ছিল। তবে এর আগের বছরে ভাল চামড়া দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত দরে তারা কিনেছেন।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা বলেন, মুলধন লুণ্ঠন হলে কিছুই করার থাকে না। বকেয়া পাওনার ক্ষেত্রে সক্রিয় ট্র্যানারিগুলোর মধ্যে মাত্র ৪টি ট্যানারি সাম্পূর্ণ টাকা দিয়েছে। আর ৫ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ টাকা দিয়েছে ১৫টি ট্যানারি।

বাকি ট্যানারিগুলো কোন টাকা দেয়নি। ট্যানারি মালিকরা টাকা না দেওয়ায় এবারও একই অবস্থা হয়েছে। শুধু ট্যানরি নয়। ব্যাংকগুলো ৬৮০ কোটি টাকা দেওয়ার কথা বলছে। অথচ বাস্তবে নগদ ১৮০ কোটি টাকা পেয়েছে ট্যানারিগুলো। এর ফলে চামড়া কেনাবেচায় বিপর্যয়ে পুনাবৃত্তি হয়েছে।

সকালের-সময়/ফোরকান

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ