বিষয় :

বসন্তের রঙে ভালোবাসা হোক অমলিন


নিউজ ডেস্ক  ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ২:৪৮ : অপরাহ্ণ

রবিঠাকুরের বসন্তে উপচেপড়া রঙ, আনন্দ আর প্রেম থাকলেও জীবনানন্দের বসন্তে কেমন যেন দূরাগত বিষাদমাখা। আর বাঙালির জীবনে সব বসন্তই আসে সমানে সমান। বোঝা মুশকিল, গরম না শীত—কোন দিকে গড়াবে ভোর-রাতটা। সুতরাং আজকের দিনটা কারও কাছে বাসন্তী অফারে মোড়ানো ঝাঁ-চকচকে শাড়ি-পাঞ্জাবি, মাথায় ব্যান্ড, হাতে ফুল কিংবা ফ্যানের সুইচে মধ্যবিত্তের দ্বিধাগ্রস্ত আঙুল।

ফ্যান ছাড়ুন বা না-ই ছাড়ুন (অথবা ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক), আজ এই বসন্তে হলুদ-কমলা গায়ে চাপিয়ে সময় কাটুক প্রিয়জনের সঙ্গে। তাতেই ঢের বদলে যাবে বাতাসটা। এদিক-ওদিক তাকালেই দেখবেন, ফাগুনের রেণুমাখা বাতাস ফের আগুন ধরাতে চলছে গত বসন্তে একা কাটানো কোনো এক তরুণ-যুবার মনে। জোরে জোরে বুক ভরে শ্বাস নেওয়াও যে চাই।

কেউ যদি কানে কানে ঢাকার এয়ার পলিউশন ইনডেক্স জানাতে আসে, তবে আগুন-চোখ হেনে বলুন, ভাই চুপ করে বসুন তো, আজ বসন্ত! এ ঋতু আর যাই হোক, আমদানিনির্ভর নয়। এরপর বাসন্তী উপলব্ধিটা মনেপ্রাণে জড়িয়ে চোখ বুজে ভেতরের নিজেকে বার্তা দিন—বসন্ত মানে শুধু রোগ নয়। এ ঋতু হলো যাবতীয় দ্বিধা ঝেড়ে অবগুণ্ঠন খুলে জীবনটাকে ফের আলিঙ্গন করার মোক্ষম উপলক্ষ।

বসন্ত আর আলাদা কী? কেউ বলবে আদিখ্যেতা, কারও কাছে মনের পথ্য। তবে এটাও সত্য—বসন্ত মানে ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখ। বাংলা পঞ্জিকার প্রতি আমাদের অবহেলা দেখে দেখে পরের তারিখগুলো মেজাজ হারিয়ে গরম হতে থাকবে। তারপর ওরা গিয়ে ঠেকবে বৈশাখে। এরপর আবার আমাদের মনে পড়বে ১৪ এপ্রিল মানে।

এখন যে যাই বলুক, আজকের দিনটায় ক্ষণে ক্ষণে সুরে-বেসুরে দুলাইন ‘আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে’ কিংবা ‘আহা আজি এ বসন্তে’ গাইতেই পারেন। যদি মুখ ফসকে বেরিয়ে আসে ‘ভালোবাসি ভালোবাসি’, ভুল হবে না। আজ ভালোবাসার দিনও। ক্যালেন্ডার এদিক-ওদিক করায় লাভই হলো। এক বাজেটে কিনে ফেলুন দুই ঢিল। এরপর যার যার নির্ধারিত কুঞ্জকাননে প্রিয় পাখির পেছনে বিঁধিয়ে দিন কিউপিডের কাছ থেকে ধার করে নেওয়া তীরখানা।

এ সময় কানে আসবে নানা কথা। টাইমলাইনজুড়ে বসতে পারে বেসুরো কিছু পোস্ট। বছরের পর বছর ওরা ওই এক কথাই বলে আসছে, ভালোবাসার আবার দিন লাগে নাকি! মোনালিসা হাসি হেসে তাদের বলুন, তা ভাই, গতকাল কাকে কতটা ভালোবেসেছিলেন? দর কষাকষির এই কলেরা-যুগে বাকি তিনশ চৌষট্টি দিন ভালোবাসার সময় পান? মুখে সরাসরি বলতে না পারলে সোজা ‘আনফলো’ করে দিন সেসব অ-ভালোবাসার মানুষগুলোকে।

আবার ওরা যদি মুখ বাঁকিয়ে বলে, ভালোবাসার দিবসের নাম ‘লাভ ডে’ না হয়ে ভ্যালেন্টাইন ডে হলো কেন? তখন তাদের মনে করিয়ে দিতে পারেন সেই চিরচেনা ইতিহাসের যে কোনো একটি সংস্করণ। দুটো সংস্করণই ২৫০ সালের দিককার কথা। রোম সম্রাট ক্লডিয়াস যেখানে খলনায়ক। সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামের এক ধর্মযাজককে (মতান্তরে বিদ্রোহী যুবক) খ্রিষ্টান হওয়ার কারণে মেরে ফেলেন তিনি।

মৃত্যুর আগে তিনি একটা চিঠি রেখে যান তার এক নারী রোগীর (মতান্তরে তিনি তার প্রেমে পড়েছিলেন) জন্য। চিঠিতে শুধু লেখা ছিল—‘ফ্রম ইওর ভ্যালেন্টাইন’। আরেক সংস্করণে বলা হয়েছে, ‘বিয়ে করা যাবে না’ মর্মে সম্রাট ক্লডিয়াসের দেওয়া ঘোষণার প্রতিবাদ করতে গিয়েই ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রাণ হারান যুবক ভ্যালেন্টাইন। ঘটনা যা-ই হোক, ৪৯৬ সালে পোপ জেলাসিয়ুস দিনটাকে ভ্যালেন্টাইন দিবস ঘোষণা করেন। সে ঘোষণায় এখনো চাঙ্গা বিশ্ববাজার। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই দিনটি উপলক্ষে প্রায় ৩০ হাজার কোটি ডলারের বাণিজ্য হয়।

পরিশেষে আবার বসন্তে ফেরা যাক। বৈশাখের মতো বসন্তকে ডাকতে হয় না। আপনাতেই ধরা দেয়। ইদানীং অবশ্য উৎসবের ডামাডোলে পড়ে বসন্তকে পড়িমড়ি ছুটেও আসতে হয়। তাই আজই যে কোকিলের ডাক শুনবেন, এমন নিশ্চয়তা কেউ দেবে না। বসন্ত উৎসবের কোলাহল ও ক্রমাগত হর্নের শব্দে পাখির কূজন শুনতে না পেলে হতাশ হবেন না।

মেট্রোরেল কিংবা পদ্মা সেতুতে চড়ে ঢাকার বাইরে খুঁজে নিন বিভূতিভূষণের সেই লবটুলিয়ার মতো পথ হারানো জঙ্গলওয়ালা এক চিলতে গ্রাম। শিমুল-পলাশ আর নাম না জানা হাজারো জংলি ফুল দেখে ঘষা খাবে অন্তরের চকমকি পাথরখানা—আহা! আজি এই বসন্তে!

বসন্ত বরণ

আজ বসন্ত উৎসব-১৪২৯ আয়োজন করেছে শিল্পকলা একাডেমি। তাদের পাশাপাশি অন্যান্য নন্দনমঞ্চে শুরু হওয়া এ অনুষ্ঠানে দেশের বরেণ্য শিল্পীরাও অংশ নেবেন। তাদের সংগীত, কবিতা পাঠ, আবৃত্তি, নৃত্যের পাশাপাশি বসন্তের পোশাক প্রদর্শনী ও কোরিওগ্রাফির নান্দনিক আয়োজন থাকছে।

এসএস

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ