বিষয় :

পানির নিচে ডুবে আছে রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতু


রাঙামাটি প্রতিনিধি ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১০:১৬ : পূর্বাহ্ণ

প্রায় ১ মাস ধরে কাপ্তাই হ্রদের পানিতে ডুবে আছে রাঙামাটির বহুল পরিচিত ঝুলন্ত সেতুটি। সেতুর রেলিং পর্যন্ত প্রায় পুরোটাই ডুবে গেছে পানির নিচে। পর্যটকরা যাতে ঢুকতে না পারেন সেজন্য বাঁশ দিয়ে সেতুতে প্রবেশের পথটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিপজ্জনক চিহ্ন হিসেবে টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে লাল পতাকা। তবুও কিছু কিছু পর্যটক সেতু সংলগ্ন এলাকায় প্রবেশ করছেন। সেতুর মুখ থেকে ট্যুরিস্ট বোটে করে সেতুর অংশটুকু পার হয়ে সেতুর অপর প্রান্তে যাচ্ছেন।

চট্টগ্রাম থেকে ঘুরতে আসা মামুন বলেন, ঝুলন্ত সেতু দেখতে এসেছি। এখন দেখি সেতু পানিতে ঝুলছে। তাছাড়া রাতে রাঙ্গামাটিতে ঘোরাঘুরির ব্যবস্থা না থাকায় হতাশ হয়ে বাসায় ফিরতে হচ্ছে। সন্ধ্যার পর নিয়মিত অনুষ্ঠান থাকলে ভালো হয়।

দীর্ঘদিন সেতু ডুবে থাকার কারণে ব্যবসায়িক ক্ষতির মুখে পড়েছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। পর্যটক না থাকায় ট্যুরিস্ট বোট চালক থেকে শুরু করে সেতু এলাকায় বসা ভ্রাম্যমাণ পাহাড়ি পণ্যের দোকানদার সবার মুখেই হাতাশার ছাপ পড়েছে।

রাঙামাটি ট্যুরিস্ট বোট মালিক সমিতির সহ-সভাপতি ও রাঙামাটি পর্যটন ঘাটের ইজারাদার মো. রমজান আলী বলেন, আজ ২৫ দিন হলো ব্রিজ পানির নিচে। প্রথমদিকে যেই পরিমাণ পানি ছিল আমরা আশা করেছিলাম কিছুদিনের মধ্যে পানি কমে যাবে। কিন্তু টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে পানি আরও বেড়ে এখন ব্রিজ একেবারে ডুবে গেছে। প্রথমদিকে কিছু পর্যটক আসলেও এখন আর পর্যটক আসে না। এই যে টানা তিন দিনের বন্ধে পর্যটকে ভরপর থাকার কথা ছিল রাঙামাটি, কিন্তু সেই পরিমাণ পর্যটক নেই শহরে। আমরা খুবই হতাশায় দিন পার করছি।

কেন বারবার ডুবে যায় এই সেতু এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, রাঙামাটি শহরের একদম শেষ প্রান্তে অবস্থিত দুটো পাহাড়কে সংযুক্ত করে ১৯৮৫ সালে নির্মিত হয় এই ‘ক্যাবল স্টে ব্রিজটি’। প্রায় ৩০০ ফুট দৈর্ঘ্যরে এই সেতুটি দাঁড়িয়ে আছে মোটা ক্যাবল এবং দুই প্রান্তের চারটি পিলারের ওপর।

সেতুটির নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানই এই সেতুটির নকশা ও নির্মাণ করেছে বলে পর্যটন কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে। কিন্তু সেই সময় হ্রদের পানির উচ্চতা সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকায় নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানটিই সেতুটি স্থাপনের উচ্চতা নির্ধারণে সমস্যা করে। ফলে নির্মাণ কাজ শেষে উদ্বোধনের দুই বছর পরই ১৯৮৭ সালে সেতুটি পানির নিচে ডুবে যায় বর্ষা মৌসুমে।

সেই থেকে প্রায় নিয়ম করেই যে বছর ভারী বৃষ্টিপাত হয় সেই বছরই পানির নিচে ডুবে যায় সেতুটি। পাশাপাশি কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পানি সংরক্ষণ করে রাখার জন্য যখন বাঁধের স্লুইসগেটগুলো বন্ধ করে রাখা হয় তখনো অতিরিক্ত পানির কারণে ডুবে যায় সেতুটি।

রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী বিরল বড়ুয়া বলেন, এই সেতুটি এখন সংস্কার করতে গেলে যেই ব্যয় হবে তা দিয়ে আরেকটি নতুন সেতু তৈরি করা সম্ভব। কারণ সেতুটি উপরে উঠাতে গেলে ক্যাবল ও পিলারগুলো লোড নেবে না। এই সেতু বাদে আমরা আরও একটি নতুন সেতু তৈরির কথা ভাবছি। এ ব্যাপারে একটি কারিগরি কমিটিও গঠিত হয়েছে। আশা করছি আমরা খুব শিগগিরই কিছু একটা করব।

রাঙামাটি পর্যটন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা বলেন, আমরা মোটামুটি আশানুরূপ পর্যটক পেয়েছি এই তিন দিনের বন্ধে। আমাদের হোটেল-মোটেল মিলিয়ে প্রায় ৯০ শতাংশ রুম বুকিং হয়ে গেছে। যদিও ব্রিজ পানিতে ডুবে আছে, তবুও পর্যটকদের উপস্থিতি মোটামুটি আছে। ৩ সেপ্টেম্বর থেকে আমরা বিজ্রে প্রবেশের যে টিকিট সেটি বিক্রি বন্ধ রেখেছি। তবুও কোনো পর্যটক যদি দূর থেকে ব্রিজ দেখতে প্রবেশ করেন, আমরা বাধা দিচ্ছি না।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ টুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের বলেন, রাঙ্গামাটি হচ্ছে পর্যটন সম্ভাবনাময় একটি জায়গা। পর্যটক বৃদ্ধির জন্য সংশ্লিষ্ট স্থানীয়দের কাজ করতে হবে।

সকালের-সময়/এমএফ

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ