বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর থেকে সব রকমের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে পাকিস্তান। এক বিবৃতিতে বাংলাদেশে অবস্থিত পাকিস্তানের হাইকমিশন থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে সেই বিবৃতির সূত্রে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের পক্ষ থেকেও বাংলাদেশের কাছে একই ধরনের পদক্ষেপ প্রত্যাশা করা হয়েছে।
দুই দশকেরও বেশি সময়ের ঔপনিবেশিক কায়দার শাসনে জর্জরিত তৎকালীন পূর্ব বাংলা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে এক রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করছে পাকিস্তানের গণহত্যা, ধর্ষণ ও বহুমাত্রিক নির্যাতনের ঘটনা। জম্মলগ্ন থেকেই দুই দেশের সম্পর্ক শীতল।
২০০৯ সালে বাংলাদেশ একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করলে এ নিয়ে পাকিস্তানের নেতিবাচক মনোভাবের কারণে বিরোধ আরও তীব্র হয়। তিক্ত সম্পর্কের প্রেক্ষাপটেই গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান আহম্মেদ সিদ্দিকির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এর পরই এমন সিদ্ধান্তের কথা জানায় পাকিস্তান। তাদের বিবৃতিতে দাবি করা হয়, দুই দেশই দ্বিপক্ষীয় যোগাযোগে সহযোগিতা বাড়ানোর ব্যাপারে সম্মত হয়েছে।
তুর্কি সংবাদ সংস্থা আনাদুলু এজেন্সিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান আহম্মেদ সিদ্দিকি জানান, বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও এমন ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে ইসলামাবাদ। তিনি বলেন, পাকিস্তানি নাগরিকদের ওপর বাংলাদেশের নিষেধাজ্ঞাগুলো এখনও বলবৎ রয়েছে। তবে আমি প্রতিমন্ত্রীকে জানিয়ে দিয়েছি আমাদের পক্ষ থেকে সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়েছে।
বৈঠকে ১৯৭১ সালের যুদ্ধে পাকিস্তানের চালানো বর্বর গণহত্যার জন্য দেশটিকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। এসময় পাকিস্তানি দূত ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে হওয়া ত্রিপক্ষীয় চুক্তির একটি অনুলিপি তুলে দেন। বলেন, চুক্তিটি বিদ্যমান ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদারের ভিত্তি হিসেবে কাজ করতে পারে।
১৯৭৪ সালে নয়াদিল্লিতে সই হওয়া ওই চুক্তিতে বলা ছিল, বাংলাদেশের আমন্ত্রণে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ঢাকা সফর করবেন। সমঝোতার সুবিধার্থে বাংলাদেশের জনগণকে পাকিস্তানিদের অতীতের ভুলগুলো ক্ষমা এবং ভুলে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। চুক্তিতে যুদ্ধবন্দিদের পাকিস্তানে ফেরত পাঠানো হতে পারে বলেও উল্লেখ ছিল।
এসএস