

বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সাবেক ট্রেনিং একাডেমীর কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান আতা। ১০ বছর আগে ঢাকা বিভাগের আখাউড়া-সিলেট সেকশনের টিআইটি ও টিআইসির দায়িত্ব পালনকালে কুলাউড়া রেল স্টেশনে নামে-বেনামে সরকারি সম্পত্তি দখল করে জালিয়াতির মাধ্যমে ইজারার ভুঁয়া কাগজ বানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুরুতে সেখানে পাঁচটি দোকান নির্মাণ করে ভাড়া দেয়। পরবর্তীতে এসব দোকান প্রদর্শন ও প্রচার করে তিনি ওই জায়গার রেলের বৈধ ইজারাদার প্রচার করে সেখানে একটি মার্কেট নির্মাণ করে আটটি দোকান করা হয়। পরে এককালীন মোটা অংকের টাকা লেনদেনের মাধ্যমে ৫ ব্যবসায়ীর নিকট পাঁচটি দোকান বরাদ্দ দেন আতা। প্রতিটি দোকানের মাসিক ভাড়া নির্ধারণ করা হয় তিন হাজার টাকা।
পরে—এসব দোকান ব্যবসায়ীদের নামে নাম সংশোধন করে দেওয়ার কথা বলে হাতিয়ে নেন আরও দেড় লাখ টাকা। এর পর ব্যবসায়ীদের নামে নাম সংশোধন না করে কালক্ষেপণ করে সময় পার করার এক পর্যায়ে খবর পেয়ে রেলওয়ে সেখানে উচ্ছদ অভিযান পরিচালনা করে। গুড়িয়ে দেয় মার্কেটটি। ফলে উর্পাজনের একমাত্র আয়ের উৎস দোকানগুলো ভেঙ্গে দেয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়ে ব্যবসায়ীরা।
এর পর—২০২১ সালের ১২ জানুয়ারি বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সাবেক ট্রেনিং একাডেমীর অফিসার আতাউর রহমান আতার বিরুদ্ধে ঠিকানা সংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত বাংলাদেশ রেলওয়ে সচিব বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ক্ষতিগ্রস্থ পাঁচ ব্যবসায়ী। বর্তমানে ঢাকা রেল ভবনে কর্মরত আছেন বলে দাবি করেন আতাউর রহমান আতা।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায় —২০১২ সালে আখাউড়া-সিলেট সেকশনের টিআইটি ও টিআইসির দায়িত্ব পালনকালে কুলাউড়া রেল স্টেশনে একটি রেলের বৈধ ইজারাদার প্রচার করে শুরুতে পাঁচটি দোকান নির্মাণ করে বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সাবেক ট্রেনিং একাডেমীর কর্মকর্তা আতাউর রহমান আতা। পরবর্তীতে এসব কাগজ স্থানীয় লোকজনের কাছে দেখিয়ে বৈধ ইজারাদার দাবি করে সেখানে একটি মার্কেট নির্মাণ করেন তিনি।
২০১৭ সালে কুলাউড়া পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড পাশার বাসিন্দা বেলাল সহ মোট ৫ ব্যবসায়ীকে মোট পাঁচটি দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রতি মাসে তিন হাজার ভাড়া নির্ধারণ করে অগ্রিম সালামি হিসেবে তাদের কাছ থেকে এককালীন নেয় ১৫ লাখ টাকা। পরবর্তীতে দোকানগুলো ব্যবসায়িদের নামে নাম সংশোধন করে দেওয়ার কথা বলে দীর্ঘদিন ধরে ঘুরাঘুরি করার একপর্যায়ে খবর পেয়ে ২০২০ সালের ৮ নভেম্বর বৈধ ওই মার্কেটটি ভেঙ্গে দেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ—পাঁচ দোকানির সরলতার সুযোগ নিয়ে বৈধ ইজারাদার দাবি করে দোকান বরাদ্দ দিয়ে সালামি বাবদ ১৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় আতা। নাম সংশোধনের নামে নেয় আরও দেড় লাখ টাকা। প্রতি মাসে নিত পাঁচটি দোকান থেকে মোট ১৫ হাজার টাকা। রেলওয়ে একজন বড় কর্মকর্তা পরিচয় তুলে ধরে ব্যবসায়ীদের বোকা বানিয়ে তাদের কাছ থেকে কৌশলে ২২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন এই আতাউর রহমান আতা।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আতাউর রহমান আতা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি এখন সেখানে নাই। আমি চট্টগ্রাম রেলওয়ে ট্রেনিং একাডেমিতে কর্মরত আছি। আপনি আমার সম্পর্কে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীরের সাথে কথা বলুন। সে বিস্তারিত আপনাকে বলবে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ট্রেনিং একাডেমী আমার আওতায় নেই। রেক্টর বা ডিজিকে ফোন করার পরামর্শ দেন তিনি।
এ বিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ট্রেনিং একাডেমীর রেক্টর রুহুল কাদের আজাদদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ করেনি।
এসএস