সুপারশপের পর কাঁচাবাজারে শুক্রবার (১ নভেম্বর) থেকে নিষিদ্ধ হচ্ছে পলিথিন ব্যাগ। এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন সব স্তরের মানুষ। তবে তাদের পরামর্শ, শুরুতেই বাজারে নয়, পলিথিন উৎপাদন ও বাজারজাতকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। পাশাপাশি পাটসহ পরিবেশবান্ধব ব্যাগ ব্যবহারে বাড়াতে হবে সচেতনতা।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন।
নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার বন্ধে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে আছেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও আইন অনুবিভাগ)। সদস্য হিসেবে থাকছেন যুগ্ম সচিব (পরিবেশ-১ অধিশাখা), উপসচিব (পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ-১ ও ২) এবং জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব (পরিবেশ-৩)।
এ কমিটি ১ নভেম্বর থেকে দেশব্যাপী পরিচালিত পলিথিন বন্ধের অভিযান দেখভাল করবে। মাঠ পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা ও প্রয়োজনে মাঠ কার্যক্রম পরিদর্শন করবে। এ ছাড়া পরিবেশ অধিদপ্তরও একটি আলাদা কমিটি গঠন করবে। অধিদপ্তরের কমিটি প্রতিদিন বিকেল ৫টার পর পরিচালিত অভিযানের তথ্য মন্ত্রণালয়ের কমিটিকে পাঠাবে।
মনিটরিং কমিটি আজ সকাল ১০টায় রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেট এবং এর আশপাশের বিভিন্ন সুপারশপ ও বাজারের অভিযান পরিচালনা করবে। ২০০২ সালে সরকার আইন করে সাধারণ পলিথিনের উৎপাদন, বিপণন ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে (২০০১-২০০৬) পরিবেশমন্ত্রী শাজাহান সিরাজ বাজারগুলোকে পলিথিনমুক্ত করেছিলেন।
দীর্ঘদিনের লড়াইয়ের পর তিনি যখন পলিথিন থেকে মুক্তির ঠিক কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন, তখন তার সরকারের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরও বাজারে তেমন পলিথিন দেখা যায়নি। আওয়ামী লীগ সরকারের শুরুর দিকেও পলিথিন ব্যবসায়ীরা বাজারে ঢুকতে পারেনি।
পরে ধীরে ধীরে বিগত সরকারের শিথিল নীতির কারণে পলিথিনে সয়লাব হয়ে ওঠে বাজার। গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান পলিথিন নিষিদ্ধের আইনের কঠোরভাবে প্রয়োগের ঘোষণা দেন। এর অংশ হিসেবে গত ১ অক্টোবর থেকে সুপারশপে এ ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। আজ থেকে কাঁচাবাজারেও ব্যাগটির ব্যবহার করা যাবে না।
সচেতনতা এবং ক্রমাগত মনিটরিংয়ের মাধ্যমে পলিথিন নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কঠোর ব্যবস্থা নিতে এক পাও পিছপা হবেন না বলে জানান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
তিনি বলেন, যে পলিথিন ব্যাগ ২০০২ সাল থেকে নিষিদ্ধ, সেই ব্যাগের বিষয়ে ২০২৪ সালে এসে আমাদের ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে। পলিথিন নিষেধাজ্ঞা কার্যক্রম বাস্তবায়নের পাশাপাশি আমরা পাটজাত দ্রব্যকে প্রণোদিত করার উদ্যোগ নিয়েছি। এটি পরিবেশ মন্ত্রণালয় এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগ। আমরা যখন বাংলাদেশি হিসেবে বিকল্পের কথা ভাবি, অন্তত আমার মতো বয়সের লোকেরা জানে, সারা জীবনই বিকল্প ছিল।
আমার আগের প্রজন্ম, এমনকি আমার প্রজন্ম পর্যন্ত সেই বিকল্পই ব্যবহার করেছি। পলিথিন আসার পর আমরা সেই বিকল্পের কথা ভুলে গেছি। কারণ, আমরা মনে করি পলিথিন সস্তা। আসলে এটা সস্তা নয়, সহজলভ্য। সুপারশপ গত এক মাস পলিথিনমুক্ত ছিল, কোনো গ্রাহকের সমস্যা হয়নি। ফলে কাঁচাবাজারেও সমস্যা হবে না।
এসএস/এমএফ