বেলাল সরকার যোগদানের পর পর সরঞ্জাম দপ্তরে চুরির হিড়িক!


নিজস্ব প্রতিবেদক ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:১৩ : পূর্বাহ্ণ

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পাহাড়তলী প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের (সিসিএস) এর গুদামে প্রবেশে দরজার তালা অক্ষত, প্যাকেটও ঠিক আছে, কিন্তু প্যাকেটের ভেতর নেই মালামাল। ক্যাবল, স্প্রিংসহ রেলের প্রায় অর্ধকোটি টাকার মূল্যবান মালামাল হঠাৎ উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনায় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। তবে কখন এই মালামাল চুরি হয়েছে তা জানে না কেউ।

সোমবার (২০ জানুয়ারি) বিকালে গুদাম থেকে সরঞ্জাম বের করতে গিয়ে ধরা পড়ে বিষয়টি। এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে। গুদাম থেকে মূল্যবান সরঞ্জাম উধাও হওয়ার বিষয়টি মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) সকালে নিশ্চিত করেছে জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক দপ্তরের নিয়ন্ত্রক (পরিদর্শন) গোলাম মোর্শেদ।

তিনি বলেন, গুদাম থেকে সরঞ্জাম চুরির বিষয়টি পরিকল্পিত। মিলেছে চুরির আলামতও। প্রাথমিকভাবে তিন জনকে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে। এরপরও ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট প্রদান করবেন। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে এসিওএস মো. আলমগীরকে।

সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক দপ্তরের তথ্যমতে, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পাহাড়তলী প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক দপ্তরের গুদামে রেলের জন্য ক্রয়করা এ, বি, সি ওয়ার্ডের সব ধরণের সরঞ্জাম রাখা হয়। এর মধ্যে স্প্রিং, নাট, ক্যাবল থেকে শুরু করে বিদেশি দামি মালামালও রয়েছে।

কিন্তু সোমবার বিকেলে ‘বি’ ওয়ার্ডের দায়িত্বরত কর্মচারীরা গুদাম থেকে সরঞ্জাম বের করতে গিয়ে দেখেন, অনেকগুলো প্যাকেটের ভেতর থেকে সরঞ্জাম উধাও হয়ে গেছে। পরে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানান তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, গুদামে প্রবেশে দরজার তালা অক্ষত, প্যাকেটও সব ঠিকঠাক, কিন্তু প্যাকেটের ভেতরে নেই অনেক সরঞ্জাম। ক্যাবল, নাট স্প্রিংসহ রেলের প্রায় কোটি টাকার সরঞ্জাম চুরি হয়ে গেছে। যা নির্ধারণ করতে সময় লাগবে। এ জন্য রেজিষ্টার মেনটেইনের কাজ চলছে।

তিনি আরও বলেন, সরঞ্জাম চুরির আলামত আছে। গুদামের ছাদের উপরের টিন খোলা। তাছাড়া এর আগে গুদামে স্থাপন করা তিনটি সিসিটিভি ক্যামেরার একটির সংযোগ বিচ্ছিন্ন। দুটির মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেয়া হয়েছে। এ কাজের সময় তিনজনকে দেখা গেছে। যদিও তখন চুরির বিষয়টি আঁচ করতে পারেনি কেউ।

তথ্যসূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর দলীয় প্রভাবে বদলির হিড়িক পড়ে। এরপর সরঞ্জাম দপ্তরে কেনাকাটা কমে যাওয়ায় কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছে। যার কারণে যোগসাজশে সরঞ্জাম চুরির মহোৎসবে মেতেছে তারা। এসব চুরির ঘটনা অনেকটা সাজানো এ যেন ‘সর্ষের মধ্যেই ভূত’।

এ বিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (সিসিএস) মো. বেলাল হোসেন সরকারের কেনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এর আগে ২০২৪ সালে মালামাল সরবরাহ না করে ১ কোটি ৩৭ লাখ ৮৭ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সাবেক সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রকসহ ১০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-১ বাদী হয়ে দুটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি করেন দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আহসানুল কবীর পলাশ। মামলার নং- (চট্টগ্রাম: ৩৩১০০ তাং- ১৭/০৯/২০২৪)।

আর এদিকে— ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন স্টেশনের মালপত্র কেনাকাটায় প্রায় ২০০ কোটি টাকারও বেশি হাতিয়ে নেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের তৎকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (সিওএস) বেলাল হোসেন সরকার। তখন তদন্তে তার দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ায় তাকে বরখাস্ত করে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকেই তিনি ঊধাও ছিলেন। পরে ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে বাংলাদেশ রেলওয়ের সচিব সেলিম রেজার স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে প্রকৌশলী মো. বেলাল হোসেন সরকারকে বহিষ্কার করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

তখনকার প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, প্রকৌশলী মো. বেলাল হোসেন সরকার সিওএস-কন্ট্রোলার অব স্টোরস অফিস (পূর্ব) বাংলাদেশ রেলওয়ের সিওএস (পশ্চিম) হিসেবে রাজশাহীতে থাকাকালে রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের মালামাল ক্রয়ে আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (অডিট ও আইসিটি) ড. ভুবন চন্দ্র বিশ্বাসের তদন্ত টিম সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র, ক্রয় করা পণ্য এবং বাজার থেকে সরেজমিন সংগৃহীত পণ্যের নমুনার বাজারদর যাচাই এবং পারিপার্শ্বিক বিষয়াদি বিবেচনাপূর্বক তদন্ত করে বেলাল হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য-প্রমাণ পায়।

দায়িত্বশীল কর্মকর্তার এমন ঘটনা সরকারি (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮-এর ৩(খ) ও ৩(ঘ) বিধি মোতাবেক অসদাচরণ ও দুর্নীতির পর্যায়ভুক্ত এবং গুরুদ-যোগ্য অপরাধ। তাই একই আইনের ১২(১) বিধি মোতাবেক তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তার কোনো শান্তি হয়নি, বরং উল্টো পদোন্নতি নিয়ে হয়েছেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা সিসিএস।

এসএস/ফোরকান

আরো সংবাদ