

চট্টগ্রামের পটিয়া পৌরসভার গিরি চৌধুরী বাজারস্থ শ্রীমাই খালের বালু লুটের আবারও মহোৎসব চলছে। প্রশাসন বেশ কয়েকবার সেখানে অভিযান চালালেও বন্ধ হচ্ছে না বালু দস্যুদের তৎপরতা। অবৈধভাবে ড্রেজার বসিয়ে বালু লুটের কারণে সদ্য খনন ও নির্মাণকরা বেড়ি বাঁধ পড়েছে হুমকীর মুখে। এছাড়া ফসলি জমি, বাড়ি-ঘর ও রেলসেতু রয়েছে ঝুঁকিতে।
অভিযোগ উঠেছে, কচুয়াই ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের নেতা জসিম উদ্দিনের ভাই ছাত্রদল নেতা মোহাম্মদ আরজুর নেতৃত্বে চলছে এ বালু লুটের ঘটনা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বাহুলী গিরি চৌধুরী বাজারের পাশে শ্রীমতির খাল থেকে ড্রেজার মিশন বসিয়ে অবৈধ ভাবে বালু তুলছে একদল যুবক। যার ফলে কৃষি জমি নষ্ট হচ্ছে। রেল সড়কের উপর দিয়ে অবৈধভাবে গাড়ি চলাচলের পথ তৈরি করে খাল থেকে ট্রাক করে বালি নিয়ে যাচ্ছে। রেল কর্তৃপক্ষ রেল লাইনের উপর যাতে কোন যানবাহন উঠতে না পারে সেজন্য খুঁটি দিয়েছিলেন গীরি চৌধুরী বাজার এলাকায়। সেগুলো উপড়ে ফেলেছে বালি সন্ত্রাসীরা।
স্থানীয়রা জানায়, বিএনপি নেতা আরজু, যুবলীগ নেতা বোরহান, যুবদল নেতা রিমন, মহিউদ্দিন বাচ্চু, মোহাম্মদ সুমন বালু লুটের সিন্ডিকেট করে দীর্ঘ দিন ধরে খালের বালু নিয়ে যাচ্ছে। এলাকার লোকজন উপজেলা নির্বাহী অফিসার, থানা পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করেছেন। এর আগে ওই জায়গায় বালিবাহী ট্রাকের সাথে ট্রেনের দুইবার সংঘর্ষ হয়েছে বলে জানান তারা।
স্থানীয়রা আরও বলেন, যারা বালু উত্তোলণ করছে তাদের নামে কোন ইজারা নেই। বালু লুটের এই সিন্ডিকেটটি এত শক্তিশালী যে তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে সাহস করেনা। কেউ প্রতিবাদ করলে হামলা-মামলা ও হয়রানির শিকার হতে হয়।
সম্প্রতি—পটিয়া আসনের এমপি ও জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী ইউএনও এবং ওসিকে বালু লুটেরাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিলেও তারা বালু সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পেরে উঠতে পারছেনা। ফলে অবৈধভাবে বালু তোলায় বেড়িবাঁধ, ফসলীজমি, রেল সেতু ও বাড়ি ঘর বিলীন হওয়ার পথে।
জানা গেছে, চলতি অর্থ বছরে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শ্রীমাই খালের বালু মহাল ইজারা দেয়া হয়নি। গত এপ্রিল মাসে এসব বালু লুটেরা এস্কেবেটর দিয়ে বালু ও মাটি কেটে পাচারের সময় উত্তেজনা দেখা দেয়। এরপর এসিল্যান্ড মাটি ও বালুকাটা স্থায়ীভাবে বন্ধের আদেশ দেন।
গ্রামের বাসিন্দারা জানান, ওই গ্রাম রক্ষায় গত কয়েক বছর আগে প্রথম দফায় শ্রীমাই খালের আরএস সিট মোতাবেক পটিয়া আসনের এমপি সামশুল হক চৌধুরী মুল খাল খনন করেন। এরপর গত কয়েক মাস আগে ওই খালের গভীরতা বাড়িয়ে ও বেড়িবাঁধ তৈরি করেন।
এরফলে গত প্রাকৃতিক দুর্যোগে পটিয়া পৌর এলাকাসহ বড় একটি অংশ ক্ষয়ক্ষতির কবল থেকে রক্ষা পায়। কিন্তু যুবলীগ-ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ ও জসিম চেয়ারম্যানের ভাই ছাত্রদল নেতা আরজুর নেতৃত্বে গঠিত মাটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ইচ্ছেমত স্থান থেকে বালু কেটে বিক্রি করে দিচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার সোহেল রানা জানান, তারা সরেজমিন সার্ভে করেন এবং অবৈধ ভাবে বালু তোলার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন।
এ বিষয়ে পটিয়া উপজেলার নির্বাহী অফিসার আতিকুল মামুন জানান, ওই স্থানে বেশ কয়েকবার অভিযান চালানো হয়েছে। এবং কেউ আইন অমান্য করে বালু উত্তোলন করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সকালের-সময়/ফোরকান