নকল নবিশের আলিশান বাড়ি, গড়েছেন অঢেল সম্পদ!


মোহাম্মদ ফোরকান  ১৪ নভেম্বর, ২০২৩ ২:৪৪ : পূর্বাহ্ণ

একজন নকল নবিশের সরকারি চাকরি না হলেও দায়িত্ব সরকারি। যে দায়িত্বের উপর নির্ভর করে সম্পদের ভাগ্য। অর্থাৎ নকল নবিশদের হেলা-ফেলা কিংবা অনৈতিকতায় মূল্যবান সম্পত্তির মালিকানা সংকটে পড়তে পারে। তাই নকল নবিশের দায়িত্ব অনেকটা আমানত স্বরূপ।

তবে—আমানতের খেয়ানত করা মানে বেঈমানি করা। যার বা যাদের কলমের খোঁচায় মূল্যবান আমানত রক্ষা হয়, তাদের অনৈতিকতা কিংবা ডান-বাম চিন্তা-চেতনায় সাধারণ মানুষের যেমন বারোটা বাজতে পারে, তেমনি সরকারও বেকায়দায় পড়তে পারে। ফলে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে নকল নবিশদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী হলেন একজন নকল নবিশ।

তিনি হলেন, নকুল চক্রবর্ত্তী। কাজ করছেন ফতেয়াবাদ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে। অন্য নকল নবিশদের মতো তারও একসাথে বসার কথা। কিন্তু তিনি বসে আছেন আলাদা এক চেয়ারে। সামনে দলিলের স্তূপ। যদিও প্রায় সময় এই চেয়ারে বসে কাজ করেন, তবে গণমাধ্যম কর্মীদের আনাগোনা দেখলে নিমিষেই সটকে পড়েন।

সরেজমিনে দেখা যায়, দপ্তর ঘিরে মানুষের ভিড়। বিপরীতে অফিসের কর্তার ভূমিকায় এসটি এক্ট নকল নবিশ নকুল চক্রবর্ত্তী। নিজের মতো করে দলিল যাচাই বাছাই করে সই-স্বাক্ষর এমনকি সিল-ছাপ্পরও মারছেন তিনি। বিনিময়ে নিচ্ছেন টাকা। অর্থাৎ নকুল চক্রবর্ত্তী সাব-রেজিস্ট্রি অফিসকে শুধু নিজের মত করেই গড়ে তোলেননি, দুর্নীতির আখড়াও বানিয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পেশায় একজন দলিল লেখক যিনি ফয়েতাবাদ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের ভেতরের গোমরই শুধু ফাঁস করেননি, বলেছেন সিন্ডিকেটের কথাও। তার কথা অনুযায়ী নকুল চক্রবর্ত্তীই ফতেয়াবাদ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের এখন হর্তাকর্তা।

আরও দেখা যায়, ফতেয়াবাদ সংলগ্ন চৌধুরী হাট এলাকা। মেঠোপথ দিয়ে কিছুদূর যেতেই আলিশান বাড়িটি যে কারো নজর কাড়বে। গ্রামবাসী জানিয়েছেন, ৫ তলা বিশিষ্ট ভবনটি নকুল চক্রবর্ত্তীর। দৃষ্টিনন্দন বাড়িটির পরতে পরতে আভিজাত্যের ছোঁয়া। গ্রামের ভেতর গড়ে তোলা ৫তলা বাড়িটিতে টাইলসও লাগানো হয়েছে। বাকী ৩ তলার কাজও করছেন তিনি।

একজন নকল নবিশের উপার্জনের টাকায় এমন বাড়ি করা সম্ভব কিনা? সেই প্রশ্ন আমাদের মত গ্রামবাসিরও। তবে কাগজ-কলমে নকুল চক্রবর্ত্তী বিপুল অর্থ বিত্তের মালিক না হলেও প্রভাব প্রতিপত্তি থেমে নেই। যেটি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গেলেই টের পাওয়া যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নকল নবিশের কাজ ফেলে দলিল যাচাই-বাছাইয়ের কাজও করেন নকুল চক্রবর্ত্তী। এতে সহযোগি হিসেবে কাজ করেন মোহরার আজগর আলী। পদ-পদবী কিংবা পেশা না থাকলেও অলিখিতভাবে নকল নবিশ নকুলের সেকেন্ডম্যান তিনি। তিনিও সাব রেজিস্ট্রি অফিসে কাজ করে বিপুল বিত্ত বৈভববের মালিক হয়েছেন।

অনুসন্ধান বলছে, ফতেয়াবাদ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসকে ঘিরে আজগর-নকুল একটি শক্ত বলয় গড়ে তুলেছেন। তাদের কাছে অফিসের কর্তা ব্যক্তিরাও জিম্মি। দলিল লেখকরাও তাদের হাতের ইশারা ছাড়া এক পা নড়তে পারেন না। ফলে যা ইচ্ছা তাই করেন আজগর আলী ও নকুল চক্রবর্ত্তী।

অভিযোগ আছে, এসটি এক্ট নকল নবিশ নকুল চক্রবর্ত্তী একটি টাইপ নকলের জন্য ২০০০-৩০০০ টাকা আদায় করেন। অথচ একটি দলিলের টাইপ কপি নকল গ্রহণ করার সময় এতো টাকা লাগে না। একটি দলিলে হাত কপির নকলের জন্য যেখানে ১৫০০ টাকা প্রয়োজন সেখানে ২৫০০- ৩৫০০ টাকা স্থানভেদে ৪-৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করেন তিনি।

তিনি তার স্থায়ী ঠিকানা গোপন রেখে ফতেয়াবাদের চৌধুরী হাটে ভোটার হয়ে কিনেছেন জায়গা-জমি। সেই জায়গায় করেছেন ৫ তলা ভবন। যার বাজার মূল্য ২ কোটি টাকা প্রায়। যার দলিল নাম্বার ১৬৯৬ সন ২০১৪ ও ৩৬০৭ সন ২০১৯ উভয় দলিলে কোথাও স্থায়ী ঠিকানা উল্লেখ নেই এই নকুল চক্রবর্ত্তীর।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নকুল চক্রবর্ত্তীর মূল বাড়ী উপজেলা মীরসরাই জোরালগঞ্জ এলাকার ৭ নং কাটাছড়া ইউনিয়নে। তার বাবার নাম মৃত রাশ মোহন নাথ। মাতা-উষা রাণী চক্রবর্তী। তিনি সেখানেও কি পরিমাণ জায়গা-জমি কিনেছেন যাচাই করলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে।

এবিষয়ে মুঠোফোনে নকুল চক্রবর্ত্তীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথমে ব্যস্ত আছেন বলে লাইন কেটে দেন। এরপরদিন ৫ তলা ভবনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সকালের-সময়কে ভবনটি নিজের বলে স্বীকার করেন।

আর এদিকে চট্টগ্রাম জেলা রেজিস্ট্রার মিশন চাকমার সঙ্গে এবিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি সকালের-সময়কে বলেন, নকুল চক্রবর্ত্তীর যদি কোনো আলিশান বাড়ি থেকে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রিয় পাঠক—নকুল চক্রবর্তী ও আজগর আলীর আরও ফিরিস্তি ধারাবাহিক প্রতিবেদনে দেখুন….ধন্যবাদ।

সকালের-সময়/এমএফ

আরো সংবাদ