মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুকিতে সাধারণ মানুষ..

রিয়াজ উদ্দিন বাজারের মিষ্টি-জিলাপিতে বিষ!


মোহাম্মদ ফোরকান ১২ ডিসেম্বর, ২০১৯ ৪:০৩ : পূর্বাহ্ণ

শীতকাল এসে গেছে প্রায়, আর সেই সাথে শুরু হয়েছে বিয়ের মৌসুম। এ সময়ে বিভিন্ন দাওয়াতের জন্য মিষ্টি কেনা হয় অহরহ। যেকোনো শুভকাজে চাই মিষ্টি। উৎসব-আনন্দে কি আর মিষ্টি ছাড়া চলে? তবে এই মিষ্টিতে আছে বিষ। ভাবছেন ডায়াবেটিসের সমস্যা তা না থাকলে মিষ্টিতে আবার বিষ কিসের? আসলে বিষ লুকিয়ে রয়েছে বাহারি মিষ্টি ও জিলাপিতে মেশানো রঙে। কিন্তু এই মিষ্টি কী আসলেই স্বাস্থ্যকর?

চট্টগ্রাম নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজার তিনপুলের মাথায় ছয়টি মিষ্টির দোকান আছে। মেসার্স ঘোস সুইটস, প্যারাডাইস সুইটস, কল্যানী সুইটমিট হাউস, জব্বার সুইটস, মক্কা সুইটস এন্ড ফুডস, এবং খাজা সুইটস। তাদের মিষ্টি, জিলাপি এতই নোংরা ও পঁচা যে এগুলো দেখে কারো বোঝার উপায় নেই এগুলো কখন তৈরি করা হয়েছে। এবং তারা বিভিন্ন বাহারি রঙ ব্যবহার করে মিষ্টি- জিলাপি বানিয়ে প্রতারণা করে আসছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, দোকানে দোকানে রয়েছে দীর্ঘদিনের পুরোনো পঁচা ও বাসি মিষ্টি। আবার সে মিষ্টির ওপর ভাসছে ছত্রাক আর মরা পোকামাকড়। পুরোনো মিষ্টি দেখলেই মনে হবে পোড়া মবিলে ভেজানো হয়েছে। অত্যন্ত নোংরা পরিবেশে এ ছয়টি দোকানে মিষ্টি তৈরি হচ্ছে। দই, রসমালাই দেখা গেছে সেগুলো কবে তৈরি হয়েছে কিংবা মেয়াদ কত দিন তা উল্লেখ নেই। লাড্ডু তৈরির কিছু উপকরণ দেখলাম সেখানেও ময়লা-আবর্জনা। কাষ্টমার সেজেঁ এ ছয়টি দোকান ঘুরে এই চিত্র দেখা যায়।

নোংরা পরিবেশে মিষ্টি তৈরি করছেন মেসার্স ঘোস সুইটস এর কারিগররা। ছবি সকালের-সময়

তিনপুলের মাথার এক মিষ্টি কারিগর নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মিষ্টি তৈরিতে আমরা সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করি দুধ। আর এতে ভেজাল ত থাকেই। মিষ্টিতে দুধ ছাড়াও ব্যবহার করা হয় মাওয়া, সিলভার ফয়েল, ঘি, তেলসহ বিভিন্ন ফ্লেভার ও কালার। সব মিষ্টি ও জিলাপিতে ভেজাল আছে। দুধে পানির পাশাপাশি দেওয়া হয় চক, ইউরিয়া, সাবান এমনকি রঙ সাদা করার রাসায়নিক। মাওয়ায় রয়েছে কাগজ ও স্টার্চ। সিলভার ফয়েলের বদলে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল ব্যবহার করি আমরা। অন্যদিকে ঘিয়ে মেশানো হয় বনস্পতি, এমনকি চর্বি ও।

২০১৬ সালে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রুহুল আমিনের অভিযান

এ বিষয়গুলো জেনে ২০১৬ সালে অভিযান চালিয়ে জব্বার সুইটসকে ৫০ হাজার টাকা, মক্কা সুইটসকে ১ লাখ এবং খাজা সুইটসকে ১ লাখ করে মোট আড়াই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছিলো। অর্থদণ্ড ছাড়া তখন দোকানের মালিকদের কোনো শাস্তি না দিয়ে শোধরানোর জন্য ১৫ দিনের সময় দিয়েছিলেন অভিযান পরিচালনাকারী জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রুহুল আমিন। এর পর আর কোন অভিযান না চলায় তারা এখন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

তিনপুলের মাথার ছয়টি মিষ্টি কারখানার সাইনবোর্ড। ছবি: সকালের-সময়

সরেজমিনে দেখা যায়, নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মিষ্টি তৈরি ও বাসি মিষ্টি বিক্রির করে মানুষকে বিষ খাওয়াচ্ছে এই ছয় প্রতিষ্ঠান। তাদের দোকানে দেখা যায়, কয়েক মাসের পুরোনো রসে মিষ্টি ডুবানো রয়েছে। এ ছাড়া দেখা যায়, মিষ্টির উপর বাসি, ছত্রাক ও পোকামাকড় পড়ে আছে। এদের কারখানাগুলো খুবই নোংরা অপরিচ্ছন্ন। উৎপাদনের তারিখ ও মেয়াদোত্তীর্ণের কোন তারিখ নেই এখানে।

খাজা সুইটস এর নোংরা কারখানা। ছবি: সকালের-সময়

তিনপুলের ছয়টি মিষ্টির দোকানে বেশিরভাগ মিষ্টি ও জিলাপি খাবারে রঙ মিশানো বিষ। তাদের মিষ্টিতে মেশানো সস্তা, ক্ষতিকারক রঙ শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করবে এতে সন্দেহ নেই। এ থেকে শরীরে বিভিন্ন রোগ বাধা বাধবে। তাদের মিষ্টিতে ব্যবহৃত রঙ স্বাস্থ্যের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকর। লিভার, কিডনি এমনকি স্নায়ুতন্ত্রেরও ক্ষতি করবে তাদের মিষ্টি-জিলাপি। তারা মিষ্টিতে কাপড়ের রং ও প্রয়োগ করে বলে জানা যায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিভাগের স্বাস্থ্য পরিচালক ডাঃ হাসান শাহরিয়ার কবির সকালের-সময়কে বলেন, প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুরা যদি তিনপুলের এই রঙ মিশানো মিষ্টি ও জিলাপি খায় এর ক্ষতিকর প্রভাব প্রায় ১০ গুণ বেশি হবে। তাদের মিষ্টি ও জিলাপিতে মেশানো রঙের পরিমাণ এতই বয়াবহ যা বলা বাহুল্য। তারা মিষ্টিকে আকর্ষণীয় করে তুলতে এর সঙ্গে কমলা, লাল, সবুজ ও হলুদ রং মেশায় বলে জানতে পেরেছি। এই বিষয়ে আমরা দ্রত পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোঃ ইলিয়াছ হোসেন সকালের-সময়কে বলেন, খুব অল্প পরিমাণে ভেজাল মিষ্টি খাওয়াটাও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতি। ভেজাল মিষ্টির কারণে বাড়তে পারে কোলেস্টেরল, এর কারণে হতে পারে উচ্চ রক্তচাপ ও স্ট্রোক। অ্যালুমিনিয়াম খাওয়ার কারণে হতে পারে মস্তিষ্ক ও হাড়ের রোগ। শিশুদের ক্ষেত্রে তা কিডনির রোগও হতে পারে। ভেজাল মিষ্টি থেকে দেখা দিতে পারে অ্যালার্জি। আমি বরাবরের মতো এইবার ও অভিযান চালিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেব।

আরো সংবাদ