চবি’র ক্যাম্পাসজুড়ে সুদের ব্যবসা ‘ওপেন সিক্রেট’


নিউজ ডেস্ক  ২৬ মে, ২০২৪ ২:২২ : অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) নিরাপত্তা দপ্তর থেকে ধর্মীয় বই উদ্ধারের ঘটনার পর নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে দপ্তরের ঊর্ধ্বতন সহকারী মো. ফেরদৌসের সুদের ব্যবসা। আর এই ব্যবসায় লগ্নি রয়েছে খোদ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা দপ্তরের প্রধান ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার গোলাম কিবরিয়া।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঊর্ধ্বতন সহকারী মো. ফেরদৌসের কাছ থেকে সুদের হারে ঋণ নিয়ে থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীরা। ২০ হাজারের ওপরে ঋণ নিতে গেলে অনুমোদন লাগে ডেপুটি রেজিস্ট্রার গোলাম কিবরিয়ার। ঋণ গ্রহণের সময় নির্দিষ্ট অঙ্কের চেক নিয়ে থাকেন ঊর্ধ্বতন সহকারী মো. ফেরদৌস। সুদের এই ব্যবসা গোটা ক্যাম্পাসজুড়ে ‘ওপেন সিক্রেট’। মাঝেমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা দপ্তরে সুদ আদায় নিয়ে দ্বন্দ্ব হলে ডেপুটি রেজিস্ট্রার গোলাম কিবরিয়ার নেতৃত্বে বসতো বৈঠক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক একাধিক কর্মচারী অভিযোগ করে জানান, ১০ হাজার টাকা এক সপ্তাহের জন্য নিলে বিনিময়ে সুদ দিতে হয় এক হাজার। ১ লাখ টাকায় সপ্তাহ শেষে সুদ দিতে হয় ১০ হাজার টাকা। ঊর্ধ্বতন সহকারী মো. ফেরদৌসের কাছ থেকে এই সুদের হারে ঋণ নিয়ে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীরা। ২০ হাজারের উপরে ঋণ নিতে গেলে অনুমোদন লাগে ডেপু রেজিস্ট্রার গোলাম কিবরিয়ার।

তারা আরও জানান, ঋণ গ্রহণের সময় নির্দিষ্ট অংকের চেক নিয়ে থাকেন ঊর্ধ্বতন সহকারী মো. ফেরদৌস। সুদ আদায়ে নিরাপত্তা প্রধান হিসেবে অসহায় কর্মচারীদের উপর ভয়ভীতি দেখিয়ে চাপ তৈরি করার অভিযোগও রয়েছে ডেপুটি রেজিস্ট্রার গোলাম কিবরিয়ার বিরুদ্ধে।

গত ১৯ মে ঊর্ধ্বতন সহকারী মো. ফেরদৌসের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ জিহাদি বই উদ্ধারের সময় তার কাছে অসংখ্য চেক পাওয়া যায়। যদিও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এই চেকগুলো মো. ফেরদৌসকে ফেরত দেয়। তারা শুধু জিহাদি বইগুলো প্রক্টরকে নিয়ে যেতে বলে। এই চেকের সূত্র ধরেই খোঁজ নিতে গেলে সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করে জানান নিরাপত্তা দপ্তরে ডেপুটি রেজিস্ট্রার গোলাম কিবরিয়া ও ঊর্ধ্বতন সহকারী মো. ফেরদৌসের সুদের ব্যবসার আদ্যোপান্ত।

এদিকে গত রোববার নিরাপত্তা দপ্তর থেকে উগ্রবাদী বই উদ্ধারের ঘটনায় তদন্ত কমিটি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নূর আহমদ। তিনি বলেন, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ আমরা পেয়েছি। এ নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. ওয়াহিদুল আলম বলেন, কয়েক শিক্ষার্থীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তা দপ্তরের এক ঊর্ধ্বতন সহকারীর টেবিল থেকে উগ্রবাদী বই উদ্ধার করা হয়েছে। তারা নিরাপত্তা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আমার কাছে অভিযোগ করেছে। আমি তাদের রেজিস্ট্রার বরাবর অভিযোগ দিতে বলেছি। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ হওয়ায় এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষই সিদ্ধান্ত নেবে।

ঊর্ধ্বতন সহকারী মো. ফেরদৌস ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার গোলাম কিবরিয়ার ক্যাম্পাসে সুদের ব্যবসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ রকম কোনো অভিযোগ থেকে থাকলে তদন্ত কমিটি সে বিষয়েও তদন্ত করবে।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নিরাপত্তা দপ্তরের উর্ধ্বতন সহকারী মো. ফেরদৌস বলেন, আমার বুক সেলফের মধ্যে যে বইগুলো পাওয়া গেছে, সেগুলো জিহাদি বই নয়। এগুলো হচ্ছে ধর্মীয় বই। নামাজ শিক্ষা আর কি। আমি সুদের কারবার করলে এতোদিন এখানে থাকতে পারতাম? আমাদের এখানকার গার্ডগুলো অশিক্ষিত। ওরা আমার কাছে এসে চেকবই জমা রাখে। বেতন উত্তোলনের সময় চেকবই নিয়ে যায়। ওরা নিজেরা নিজেদের বেতন তোলে। এখন আমি সব বই দিয়ে দিয়েছি তাদেরকে। আমার বিরুদ্ধে সবাই উঠেপড়ে লেগেছে। ওরা কুৎসা রটাচ্ছে।

অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে নিরাপত্তা দপ্তরের প্রধান ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার গোলাম কিবরিয়ার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ করেনি।

এসএস/এমএফ

আরো সংবাদ