চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে নারী চিকিৎসককে দুই বছর ধরে উত্ত্যক্ত (ইভটিজিং) করার অভিযোগ উঠেছে। এই বিষয়ে ওই ভুক্তভোগী নারী বিচার চেয়ে ৫ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক (স্বাস্থ্য) বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন। এতে সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে নানা অশালীন আচরণের বিবরণ দেয়া হয়েছে।
উক্ত অভিযোগে নারী চিকিৎসক উল্লেখ করেছেন, গত দুই বছর ধরে সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী আমার সাথে নানা ধরনের অশালীন আচরণ করে আসছেন। যেমন, পেশাগত কাজ ছাড়া কারণে-অকারণে ফোন, মোবাইল ফোনে ব্যক্তিগত বার্তা, পেশাগত কাজে সরাসরি দেখা করলে বা সভা সেমিনারে দেখা হলে বিভিন্ন ইঙ্গিতপূর্ণ/কুরুচিপূর্ণ আচরণ ও অনেক সময় আমার হ্যান্ডব্যাগে হাত দেওয়া ইত্যাদি।
এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আমার ছবি বা ছবির অংশবিশেষ নিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট করাসহ আমার ব্যক্তিগত আইডি থেকে ছবি চুরি করে নিজের ওয়ালে পোস্ট করে আসছেন সিভিল সার্জন। যার ফলে আমি পারিবারিকভাবে, পেশাগত এবং সামাজিকভাবে বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন ও হেয়প্রতিপন্ন হচ্ছি। উনার এমন বিকৃত কর্মকাণ্ডের ফলে আমার পক্ষে সরকারী নানা কার্যক্রম সমন্বয় করে সুচারুরূপে সম্পন্ন করতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছি।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ বর্তমান পরিচালক (বিএমডিসি) ও লাইন ডাইরেক্টর, টিবি-ল্যাপ্রোসি এন্ড এএসপি অধ্যাপক ডা. শামিউল ইসলাম, বর্তমান মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ এবং চট্টগ্রাম বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. আবুল কাশেমকে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে বলেও উল্লেখ করেছেন ভুক্তভোগী নারী চিকিৎসক।
অভিযোগের সঙ্গে মোবাইল ম্যাসেজ ও ফেসবুকের বেশকিছু স্ক্রিনশট সংযুক্ত করেছেন এ নারী চিকিৎসক। এই ধরনের একটি ফেসবুক স্ক্রিনশটে দেখা যায়, আজিজুর রহমান সিদ্দিকী নামের ফেসবুক আইডিতে লেখা হয়েছে, ‘কুতকুতি, তুমিও একা, আমিও একা। আর কতোকাল একা থাকবে? আমার মনের দরজা তোমার জন্য আমরণ খোলা থাকবে ইনশাআল্লাহ।
গত ৬ সেপ্টেম্বর সিভিল সার্জনের একটি এসএমএস’র জবাব দিয়ে নারী চিকিৎসক লিখেছেন, ‘আপনি যদি আর কোন রকম বাজে ম্যাসেজ আমাদের দিয়েছেন, পরবর্তীতে তা আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দেখাবো ও জানাবো। আপনার সাথে কাজ করতে আমার অত্যন্ত বিরক্ত লাগে।
নারী চিকিৎসককে সিভিল সার্জন ম্যাসেজ দিয়েছেন, ‘ঠিক আছে। ফেইসবুকে আর কোনোরকম ফাইজলামি করবো না। মন ভালো রাখতে কমেন্ট না লিখে গান শুনতে পারবো তো? প্লিজ, এতো টাইট দিলে বাঁচবো না যে!
নারী চিকিৎসকের কাছে পাঠানো একটি এসএমএসে ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী লিখেছেন, ‘দু:খিত, আবারও ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন মনে কষ্ট পেলে। আমি চেষ্টা করছি আপনাকে বিরক্ত না করতে, কিন্তু পারছি না। তবে ভবিষ্যতে নিজের কষ্ট নিজের ভেতরে একা একা সামলাবো, আপনাকে আর জ্বালাবো না।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী নারী চিকিৎসক বলেন, চাকরি জীবনে আমার আশপাশে কত পুরুষ সহকর্মী কাজ করেছেন, কখনো টের পাইনি আমি পুরুষ সহকর্মীর সাথে কাজ করছি। আমাদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ছিল এবং আছে। কিন্তু সিভিল সার্জন সাহেব দুই বছর ধরে আমার জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছেন।
তার অশালীন আচরণ থেকে মুক্তি পেতে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর অভিযোগ করেছি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন, চট্টগ্রামের সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে একজন নারী চিকিৎসকের একটি লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, এ ধরনের অভিযোগ জমা পড়ার বিষয়ে আমার জানা নেই। ভুক্তভোগী ওই নারী চিকিৎসকের সঙ্গে কথাবার্তা হয় কিনা জানতে চাইলে তিনি প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে বলেন, আমার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এ ধরনের অভিযোগ করা হচ্ছে।
এর আগে সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী ‘মধু হই হই আরে বিষ খাওয়াইলা’-এই গানটি গেয়ে নেট জগতে রীতিমতো ভাইরাল। সংশ্লিষ্টদের কথা বলে জানা যায়, সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকীর নাচ-গানের বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের নজরে আসে।
এর পরই মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের ওই কর্মকর্তা চট্টগ্রামের এ সিভিল সার্জনকে মৌখিকভাবে সতর্ক করার পাশাপাশি জানান ভবিষ্যতে আর নাচ-গান করা যাবে না।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী ব্যক্তিজীবনে বিয়ে করেননি। কুমিল্লায় থাকাবস্থায় গড়ে তুলেছেন ‘চিরকুমার’ সমিতি। বিয়ে, প্রেম-ভালোবাসা সম্পর্কে বলেন, মানুষ আছে বলেই পৃথিবী এত সুন্দর।
যদি পৃথিবী স্বর্গ হতো এবং সেই স্বর্গে মানুষ না থাকত তবে সেটি এমন সুন্দর হতো না। আমি মেয়েদের নারী হিসেবে না দেখে মানুষ হিসেবে দেখার চেষ্টা করি। তাই মেয়েদের প্রতি আমার কোনো আকর্ষণ-বিকর্ষণ নেই।
মনের মতো কাউকে পাইনি বলে বিয়ে করিনি, সামাজিক কারণে বিয়ে করতে চাইনি। আমরা ১১ ভাই-বোনের মধ্যে চার ভাই, এক বোনই ডাক্তার। এক ভাই ইঞ্জিনিয়ার। এক বোন শিক্ষক। বাকি চার বোন সমাজকর্মী ও গৃহিণী।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, আপনাকে এবারের মতো মাফ করা হয়েছে, সামনে (নাচ-গান) করলে আমরা আর পারবো না আপনাকে রক্ষা করতে।