বাংলাদেশে ইয়াবা নিয়ে সরকার যখন মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেছেন। যেখানে ইয়াবা সম্রাটদের একের পর এক আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ক্রসফায়ার দিচ্ছে তখন চট্টগ্রামের পটিয়া আসনের সাংসদ সামশুল হক চৌধুরীর (এপিএস) নামদারী নুর রশিদ চৌধুরী এজাজ (এম এজাজ চৌধুরী) পটিয়ার ইয়াবা সম্রাট বীরদর্পে চালিয়ে যাচ্ছে ইয়াবা কার্যক্রম।
সে দীর্ঘদিন যাবৎ এমপির নাম ভাঙিয়ে ইয়াবা পাচার সহ উপজেলা পরিষদে টেন্ডার নিয়ে প্রায় সময় মারামারিতে লিপ্ত থাকত বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়। সম্প্রতি এমন একটি ঘটনা ঘটে এমপির ভাগিনা লোকমানের সাথে। এই বিষয় এমপির দৃষ্টি গোচর হলে এজাজ এমপির এপিএস নয় বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান। সে পটিয়া উপজেলা হরিন খাইন (ইউপির) ঠান্ডা মিয়া চৌধুরীর বাড়ীর বাসিন্দা।
বর্তমানে তার নামে চট্টগ্রাম শহরের টেরি বাজারে ফেমাস কাপড়ের বিশাল শো রুম সহ অভিজাত এলাকা খুলশী ও হালিশহরে রয়েছে বিশাল এপার্টমেন্ট। ইয়াবা সম্রাট এজাজ এখন এমপিকে ব্যবহার করে রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। পটিয়ার সচেতন প্রতিটি মানুষ তাকে ইয়াবা সম্রাট হিসেবে জানলেও সে থাকে অধরা।
পটিয়ায় এজাজের ব্যক্তিগত সেলসম্যান জিয়া উদ্দিন বাবলুর মাধ্যমে ইয়াবা বিকিকিনি করেন বলে ও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বিগত ১৮/৫/২০১২ সালে তৎকালিন র্যাবের ডিএডি জাহাঙ্গীর আলম সঙ্গীয় ফোর্সসহ এজাজের পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে (২,৭০,০০০) দুই লক্ষ সত্তর হাজার ইয়াবা ট্যাবলেট সহ রশিদ আহমেদ (কুলু), আতাউল করিম, সাব্বির আহমেদ, মো: ইসমাইল, ও ৫নং আসামী এজাজের পিতা আবদুল মালেক (প্রকাশ) মালেক চেয়ারম্যান সহ আসাদগঞ্জের নিজস্ব আড়ৎ থেকে ইয়াবা ট্যাবলেট আটক করে। যার মূল্য ছিল ১২ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা।
এই বিষয়ে তৎকালীন সময়ে র্যাব বাদী হয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে আটক ইয়াবা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেন। কোতোয়ালী থানায় মামলা নং ৪৬ তাং ১৮/৫/১২ । এই ইয়াবা গুলো এজাজ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে টেকনাফ থেকে পাইকারী দরে শুকনো বরইয়ের বস্তায় করে তাদের আড়ৎ-এ নিয়ে আসতো।
সূত্র আরো জানায়, এজাজ এভাবেই ইয়াবার বড় বড় চালান আড়ৎ মালের সাথে দেশের ভিবিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে দিতো। ধরা খাওয়ার পর এজাজ ভিবিন্ন কৌশলে নিজের নাম বাদদিয়ে কোনো রকমে দায় এড়িয়ে এবং মামলা থেকে বাচার জন্য নিজের বাপের নাম জড়িয়ে দেয় বলে ও জানা যায়।
আর এই দিকে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের স্বর্গরাজ্য এখন পটিয়া। ইয়াবা ব্যবসায়ীদের চট্টগ্রাম জেলায় চারটি পাঁচটি জোন থাকলেও পটিয়া হচ্ছে তাদের জন্য অন্যতম প্রধান জোন। দীর্ঘদিন ধরে মন্ত্রী-এমপিসহ প্রশাসনের উচ্চপর্যায় থেকে পটিয়া ইয়াবা জোন হিসেবে চিহ্নিত করে আসলেও স্থানীয় প্রশাসন ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের কার্যক্রম নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। র্যাবের সাম্প্রতিক চট্টগ্রাম শহরের বরিশাল কলোনিতে অভিযানে বন্ধুকযুদ্ধে নিহত হওয়া দুই ইয়াবা সম্রাট ও এম এজাজ চৌধুরীর ঘনিষ্ট বলেও জানা যায়।
সূত্রে জানায়,পটিয়ায় ইয়াবার বিশাল নিয়ন্ত্রন এজাজের হাতে থাকায় অনেক ইয়াবা ব্যবসায়ী এজাজের কাছ থেকে পাইকারি ও খুচরা ইয়াবা ক্রয় করে । পটিয়ায় এ ধরনের প্রায় অর্ধশতাধিক পাইকারি ব্যবসায়ী রয়েছে। তাদের মতে পটিয়ার আবদুল জলিলের ছেলে রাজু , ইলিয়াছ প্রকাশ আজিজ অন্যতম। এছাড়া জহির মল্লুক, কালু, কানা কামালসহ কয়েকজনের নাম পটিয়া থানায় তালিকাভুক্ত আছে। পটিয়ায় গত এক বছরে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেও জানান এলাকাবাসী।
যার ফলে বর্তমানে পটিয়ার অলিতে গলিতে ও পাড়া-মহল্লায় হাত বাড়ালে পাওয়া যায় মরণব্যধী ইয়াবা আর ইয়াবা। মাঝে মধ্যে পটিয়া থানা পুলিশ খুচরা ব্যবসায়ীদের ধরে আইনগত ব্যবস্থা নিলেও পাইকারি ব্যবসায়ীরা রয়েছেন অধরা। পুলিশ কিছু কিছু ইয়াবা ব্যবসায়ীদের ধরে আইনের আওতায় আনলেও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর পটিয়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের কার্যক্রম যেন দীরগতির। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বর্তমান পরিচালক জামাল উদ্দিন আহমদের বাড়ি ও পটিয়ায়।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর পটিয়া উপজেলা পরিষদে মাদকবিরোধী সমাবেশের বক্তব্য রাখতে গিয়ে মহাপরিচালক পটিয়ায় ইয়াবা ব্যবসা বৃদ্ধি পাওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ীদের দমনে আমরা বদ্ধপরিকর। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনকে কড়া নির্দেশ ও দেন তিনি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে পটিয়ায় এক জনসভায় বক্তব্য দেয়া কালে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের পটিয়ায় ইয়াবা তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি প্রশাসনের দৃষ্টি আরোপ করেন।
চলতি বছর দুই দফা আইনশৃঙ্খলার সভায় পটিয়ার এমপি সামশুল হক চৌধুরী ইয়াবা ব্যবসায়ীদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে তাগিদ দেন। এত নির্দেশনা থাকার পরও ইয়াবা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আশানুরূপ ব্যবস্থা নিতে পারেনি। পটিয়ায় শতাধিক ইয়াবা ব্যবসায়ী হঠাৎ যেন আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছে।
যার একেবারে কিছুই ছিল না, সে এখন বাড়ি-গাড়ির মালিক সহ ইতিমধ্য ইয়াবা সম্রাট হিসেবে কৃতিত্ব অর্জন করেছে এম এজাজ চৌধুরী। তার সাথে টেকনাফ তথা পুরো বাংলাদেশের ইয়াবা সম্রাটদের সাথে গভীর সখ্যতা রয়েছেন বলে জানান বিভিন্ন মহল। এই মাদক সম্রাটের ব্যাপারে উর্ধতন কতৃপক্ষের তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি ও জানান পটিয়াবাসী।
এবিষয়ে নুর রশিদ চৌধুরী এজাজ প্রকাশ (এম এজাজ চৌধুরী) সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি উল্টো প্রতিবেদককে হুমকি দিয়ে বলেন, আমার বিরুদ্ধে নিউজ করা হলে আপনার বিরুদ্ধে মামলা করব। এছাড়া তিনি অশালীন ভাষায় গালিগালাজ ও করেন।
এসএস/এমএফ