দুদকের নজর 

এবার গ্রামের ‘অরণ্য নীড়’ ছেড়ে গোপনে শহরের বিলাসী ফ্ল্যাটে থাকেন মিল্টন!


সকালের-সময় রিপোর্ট  ২৯ আগস্ট, ২০২১ ১:৫৮ : পূর্বাহ্ণ

সরকারি চাকরিতে যোগদান করার পর বদলে গেছে পটিয়া উপজেলার মধ্যম হাঁইদগাঁও গ্রামের মিল্টন দস্তিদার ও তার পরিবারের অবস্থা। ১০ বছরে তিনি যত সম্পদের মালিক হয়েছেন, এক কথায় তা গল্পকেও হার মানায়।

আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ, রূপকথার আলাদিনের চেরাগের কল্প কাহিনীকেও যেন হার মানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এই কর্মকর্তা। মাত্র ১০ বছরে নানা অনিয়মের মাধ্যমে অর্জন করেছে কোটি কোটি টাকা। তবে সেই তদন্ত আটকে দিতে সেখানেও জোর তদবীর চালাচ্ছেন বলে দুদকের একটি গোপন সুত্রে জানা গেছে।

সম্প্রতি কয়েকটি গণমাধ্যমে এই বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় বিষয়টি ধামাচাপা দিতে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের পেছনেও দেদারছে টাকা ঢালছেন এই কর্মকর্তা। মিল্টন দস্তিদারের এলাকার একাধিক লোকের মারফতে জানা গেছে— একজন গোয়েন্দা (ডিবি) কর্মকর্তা ও স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তির মাধ্যমে এসব ধামাচাপার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক কর্মকর্তা জানান, পিআইও মিল্টন দস্তিদার দুর্নীতির মাধ্যমে অনেক কালো টাকা আয় করেছেন বলে শুনেছি বিষয়টি তদন্ত চলছে, দোষী প্রমানিত হলে খুব শীঘ্রই তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর একপ্রকার কোমড় বেঁধেই তার আয়ের উৎস খুঁজতে মাঠ চষছেন দুদকের অনুসন্ধানী টিম।

সম্প্রতি তার পৈত্রিক বাড়ির পাশেই তার নিজের বিলাসবহুল তিন তলা ভবন ‘অরণ্য নীড়’ থেকে গোপনে দামী আসবাবপত্র সহ স্ব-পরিবারে পালিয়ে এখন বসবাস করছেন চট্টগ্রাম শহরের দেব পাহাড় এলাকায় সিপিডিএল এর প্রকল্প ‘পারিজাত’এর দেড় কোটি টাকা দামের ফ্ল্যাট ফাইভ – সি তে।

সুত্র জানায়, চট্টগ্রাম নগরের দেব পাহাড় এলাকায় প্রায় দেড় বছর আগে সিপিডিএল থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকা মূল্যের ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট কিনেছিলেন তিনি এবং সেখানে প্রায় ৪০ লাখ টাকা খরচ করে সাজ-সজ্জাও করানো হয়। ফ্ল্যাট নম্বর ফাইভ-সি, পঞ্চম তলা।

পটিয়ার নিজ গ্রামে পৈতৃক বাড়ি ছাড়াও ‘অরণ্য নীড়’ নামে একটি দৃষ্টিনন্দন তিনতলা বিলাসবহুল বাড়িতো আছেই, তাছাড়া নিজ এলাকা ও পৌরসভার বাইপাস এলাকাসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় বিভিন্ন নামে-বেনামে অসংখ্য জায়গা-জমি কিনেছেন বলে বিশ্বস্তসূত্রেও জানা গেছে। সম্প্রতি নিজ বাড়ির পাশেই আবারও কিনেছেন কোটি টাকা দামের পৃথক দুটি ১৮ শতকের জায়গা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইউনিয়ন ব্যাংক সরকার হাট শাখা, ন্যাশনাল ব্যাংক জুবলী রোড শাখা এবং দেশের অন্যতম শীর্ষ কোম্পানি এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন কয়েকটি ব্যাংকে প্রায় ১২ থেকে ১৫ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র নিজ নামে, স্ত্রী ও বাবার নামে আছে।

এছাড়াও বিভিন্ন ব্যাংকে তার নিজ পরিবার ও শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের নামেও কয়েক কোটি টাকার ডিপিএস, এফডিআর রয়েছে এই কর্মকর্তার। গ্রাম ও নগরে তার স্ত্রী, বাবা ও ভাইদের নামে বেশ কিছু দোকান ও জায়গাতে বিনিয়োগের তথ্যও পাওয়া গেছে।

অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসা তথ্য উপাত্তে জানা যায়, ভারতে অর্থ পাচারের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে । সামান্য বেতনের চাকরি করে এত অল্প সময়ের মধ্যে তার এই রাতারাতি ধনপতি হওয়ার রহস্য নিয়েও কৌতূহলী এলাকাবাসী।

সূত্র জানায়, ফেনী ও ফরিদ গঞ্জে ব্যাপক জনস্রুতি আছে মিল্টন অবৈধ টাকা লেনদেন এর জন্য মিষ্টির প্যাকেট ব্যাবহার করতেন এবং প্রায়ই তিনি যেকোথাও টাকা বহন করার সময় এই পন্থা অবলম্বন করতেন।

অভিযোগ রয়েছে, চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানায় ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক নারীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে অবৈধ সম্পর্কের অভিযোগ উঠেছিলো মিল্টন দস্তিদারের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় চট্টগ্রামে রূম্পা নামের এক ব্যাংক কর্মকর্তার মধ্যস্থতায় থানায় মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান মিল্টন। ভুক্তভোগী ওই নারীকে এককালীন প্রায় ২৫ লাখ টাকা দিয়ে ‘সমাধান’ হয়েছিল সেই অভিযোগের। প্রচার রয়েছে, রূম্পার এক সন্তান রয়েছে। তবে পিতৃত্ব পরিচয় নিয়েও রয়েছে নানা রহস্য।

সম্প্রতি এইসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর তার উপর বিশেষ নজর পড়েছে দুদকের। ইতিমধ্যে দুর্ণীতির বেশ কিছু আলামতও হাতে আসায় কয়েকটি ব্যাংক অ্যকাউন্ট এর লেনদেনও স্থগিত রাখা হয়েছে মিল্টনের।

এ বিষয়ে জানার জন্য মিল্টন দস্তিদারের মুঠোফোনে কল দেয়া হলে মোবাইল সংযোগ বিজি পাওয়া যায়।

সকালের-সময়/এমএফ

Print Friendly, PDF & Email

আরো সংবাদ