একটানা ৩১ বছর চেয়ার আঁকড়ে আছেন রফিকুল!


নিজস্ব প্রতিবেদক ৬ জুন, ২০২৪ ১:৩৮ : অপরাহ্ণ

একেএম রফিকুল ইসলামের চাকরিকালিন সময় আছে আর মাত্র দুই বছর। এরপর অবসরে যাওয়ার কথা ভাবছেন তিনি। ১৯৯৩ সালে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নার্সিং ও মিডওয়াইফারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (সাবেক চট্টগ্রাম বিভাগীয় নার্সিং কনটিনিউইং এডুকেশন সেন্টার) এর কো-অর্ডিনেটর হিসেবে যোগদান করেছেন তিনি। এরপর ৩১ বছরের বেশি সময় কাটিয়ে দিয়েছেন এক চেয়ারে।

সংশ্লিষ্টরা জানান—বর্তমান সরকার যেখানে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন, সেখানে কতিপয় সরকারি কর্মকর্তা একটানা ৩১ বছর এক চেয়ারে কি ভাবে আছে বোধগম্য নয়। যদিও সরকারি চাকরি ও শৃঙ্খলা বিধি অনুযায়ি প্রতি দুই বছর অন্তর প্রথম শ্রেণির গেজেটেড বা নন গেজেটেড কর্মকর্তাদের বদলী করার কথা। আর দ্বিতীয়–তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের ক্ষেত্রে প্রতি দুই থেকে তিন বছর অন্তর এক দপ্তর থেকে অন্য দপ্তরে বদলী করার নিয়ম রয়েছে। তবে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নার্সিং ও মিডওয়াইফারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট এর কো-অর্ডিনেটর রফিকুল ইসলামের ক্ষেত্রে সরকারের এই বিধি প্রয়োগ হয়েছে কিনা জানি না?

এদিকে ‘চট্টগ্রাম নার্সিংয়ে রফিকুল নিজে ক্রেতা, নিজেই ঠিকাদার’ শিরোনামে জাতীয় একটি দৈনিক পত্রিকায়ও তার এই বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

যেখানে বলা হয়েছে—একেএম রফিকুল ইসলাম একদিকে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নার্সিং ও মিডওয়াইফারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট কো-অর্ডিনেটর। অন্যদিকে তিনি এই প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন কেনাকাটা সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডের ঠিকাদার। প্রতিষ্ঠানটির জন্য কেমিক্যালসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ উপকরণ সরবরাহ করছেন তিনি নিজেই। আর এ জন্য নিজের প্রয়াত স্ত্রী-কন্যাসহ স্বজনদের নামে-বেনামে অন্তত নয়টি প্রতিষ্ঠানের নামে নয়টি ট্রেড লাইসেন্স করেছেন তিনি।

সংশ্লিষ্টরা জানায়—বিভিন্ন দরপত্রে কোটেশনে অংশগ্রহণ দেখিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেন তিনি। আবার নিজেই কাগজে-কলমে কাজ সম্পন্ন দেখিয়ে ছাড় দেন কাজের বিল। এভাবে দীর্ঘ ৩১ বছর একক রাজত্ব করা এই কর্মকর্তার পরিবারের সদস্য ও নিজের নামে-বেনামে ফ্ল্যাট ও প্লটসহ সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। গড়েছেন জমি, এফডিআর, ডিপিএসসহ বিপুল অংকের ব্যাংক ব্যালেন্স। ক্রয় করেছেন একাধিক দামি নোহা ও কার।

চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নার্সিং ও মিডওয়াইফারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, একেএম রফিকুল ইসলাম মেসার্স পিএন এন্টারপ্রাইজ, আরএন এন্টারপ্রাইজ, শাফি এন্টারপ্রাইজ, রুনা এন্টারপ্রাইজ, লিনা এন্টারপ্রাইজ, লাবিন এন্টারপ্রাইজ, বিছমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজ, আবু তাহের এন্টারপ্রাইজ, আমানত এন্টারপ্রাইজ, হোসেন এন্ড ব্রার্দাস এবং রহিম এন্ড ব্রার্দাস নামে ঠিকাদারী করতেন।

এরমধ্যে ‘আরএন’ এন্টাপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্তাধিকারী হলেন তার প্রয়াত স্ত্রী। তবে এই নয় প্রতিষ্ঠানের যেসব ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে ওইসব স্থানে প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো অফিস অথবা সাইনবোর্ড নেই বলে জানা গেছে সংশ্লিষ্ট সূত্রে।

সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠান প্রধান হওয়ার সুবাদে নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছেন একেএম রফিকুল ইসলাম। এসব ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে বিনা টেন্ডারে ভাগিয়েছেন এই দফতরের বিভিন্ন সরবরাহ ও কেনাকাটার কাজ। দরপত্রের কাজে অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন সরকারের কোটি কোটি টাকা।

জানা গেছে, ১৯৯৩ সালে চাকরিতে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নার্সিং ও মিডওয়াইফারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের অর্থাৎ তৎকালিন চট্টগ্রাম বিভাগীয় নার্সিং কনটিনিউইং এডুকেশন সেন্টারের কো-অর্ডিনেটর হিসেবে যোগদান করেন একেএম রফিকুল ইসলাম। সেই থেকে এ প্রতিষ্ঠানের সমস্ত কর্মকাণ্ডে এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন তিনি।

রফিকুল ইসলামের এসব বিষয়ে সরাসরি অফিস কিংবা ফোনে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিক নেতাদের দিয়ে ফোন করিয়ে ভয়ভীতি দেখান বলে জানান অনেক গণমাধ্যম কর্মী। আবার অনেক গণমাধ্যম কর্মীর নামে কথিত চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলার এজাহার প্রস্তুত করান আইনজীবি দিয়ে। পরে তা সংশ্লিষ্ট সাংবাদিককে পাঠিয়ে হুমকি দেন নিউজ করলে এমন মামলা দেওয়া হবে হুঙ্কার দেন।

তথ্য সূত্রে আরও জানা যায়—চট্টগ্রাম বিভাগীয় নার্সিং কনটিনিউইং এডুকেশন সেন্টারের কো-অর্ডিনেটর একেএম রফিকুল ইসলাম ২০০৪ সালের আগ পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানটির একটি প্রকল্পের অধিনে ছিলেন। ২০০৪/৫ সালে এই প্রতিষ্ঠানটি প্রকল্প হতে সরকারি প্রতিষ্ঠানে রূপ নেয়। এই পর্যন্ত অস্থায়ীভিত্তিতে প্রকল্পের অধিনেই আমরা চাকরি করেছি। ২০১২/১৩ সালে চাকরি স্থায়ী হয়েছে। এখন নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের নির্দেশনা মতেই এই প্রতিষ্ঠানটি চলছে।

চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নার্সিং ও মিডওয়াইফারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে এক চেয়ারে একটানা কয় দশক যাবৎ আছেন, এবং এই প্রতিষ্ঠানের কেনাকাটা কারা করেন এই বিষয় জানতে রফিকুল ইসলামের মুঠোফোনে ও এসএমএস দিয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি কল রিসিভ করেনি এবং এসএমএস এর উত্তর দেয়নি।

একেএম রফিকুল ইসলামের ব্যাপারে জানতে ঢাকা নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মো. নাসির উদ্দিনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেনি।

এসএস/এমএফ

আরো সংবাদ