

এইচএসসি পাসের শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখিয়ে চট্টগ্রামে জেমিসন রেড ক্রিসেন্ট মাতৃসদন হাসপাতালে রিসেপশনিস্ট কাম ক্লার্ক পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন আসরাফ উদ-দ্দৌলা জাফর। তবে এইচএসসি পাসের সনদ আর জমা দিতে পারেননি। পরে নিজামপুর মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাসের প্রত্যয়নপত্র জমা দেন। রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির তদন্তে উঠে আসে সেই প্রত্যয়নপত্রে জাল করা হয়েছে প্রধান শিক্ষকের সই।
তার এসএসসির প্রত্যয়নপত্র ও এনআইডি কার্ডে নামেও রয়েছে ভিন্নতা। অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগ পেয়ে এভাবেই ১৪ বছর চাকরি করেছেন জাফর। পরে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি ও সমুদয় অর্থ ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেয় প্রতিষ্ঠানটি। শুধু জাফর নয়, এভাবে জাল সনদ ও বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে চাকরি পাওয়া ২১ জনকে শনাক্ত করেছে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির দুটি তদন্ত কমিটি। তাদের মধ্যে সাতজনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
তবে—গত বছরের ২৮ নভেম্বর চট্টগ্রাম জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির নির্বাহী কমিটির সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও এখনও কাউকে চাকরিচ্যুত করা হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক আসলাম খান এটি আটকে দিয়েছেন। এ ছাড়া বাকি ১৪ জনকে লঘুদণ্ড দিয়েই দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
এদিকে চাকরিচ্যুত আইটি কর্মকর্তা রাজীব কুমার দেবকে যখন নিয়োগ দেওয়া হয়, তখন প্রতিষ্ঠানটিতে ওই পদই ছিল না। চাকরিতে নিয়োগের চাহিদাপত্র, নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি, এমনকি পরীক্ষা কিংবা সাক্ষাৎকার ছাড়াই তিনি নিয়োগ পান। এইচএসসি পাস করেই ১৩ বছর আইটি কর্মকর্তা পদে চাকরি করা রাজীব বিবিএ পাসের একটি সনদ জমা দিয়েছিলেন। তবে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ জমা দিয়েছেন, সেই প্রতিষ্ঠানই অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ে বন্ধ করে দিয়েছে ইউজিসি।
এ ছাড়া অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগের পর নিয়মিতকরণ ছাড়াই চাকরি স্থায়ীকরণ করা হয় সুপারভাইজার মাসুদ মাহমুদের। তার বিরুদ্ধে হাসপাতালের থ্যালাসেমিয়া বিভাগে আর্থিক অনিয়মে জড়িত থাকার প্রমাণও রয়েছে। অন্যদের মধ্যে শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ সঠিক না হওয়ায় ইলেকট্রিশিয়ান অপু বড়ুয়া, অদক্ষ ও অনিয়মিত বিবেচনায় ইলেকট্রিশিয়ান আবদুল মতিন, পিয়ন জয়নাব বেগম ও মো. সাকিবকে চাকরি থেকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়।
চাকরিচ্যুতির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করার বিষয়ে জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক আসলাম খান বলেন, দুটি তদন্ত কমিটির সুপারিশের সঙ্গে আমি একমত। তবে আগের কোনো কমিটি এদের বিষয়ে কিছুই বলেনি বা করেনি। কোনো অডিট আপত্তিও নেই। তাই চাকরিচ্যুতির বিষয়টি এখনও বাস্তবায়ন করিনি। জাল সনদে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বাধা কোথায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, চাকরিচ্যুত করলে তারা আদালতে যেতে পারেন, সেটি নিয়ে ভাবছি। তাই চাকরিচ্যুতির চিঠি দেওয়া আটকে রেখেছি।
লঘুদণ্ডতে দায়মুক্ত ১৪ জন
প্রতিষ্ঠানটির আরও ১৪ জনের নিয়োগে অনিয়ম পেলেও চাকরিচ্যুত করা হয়নি। লঘুদণ্ডর পাশাপাশি প্রত্যেকের কাছ থেকে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকারনামা নিয়েই দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে অফিস আদেশ না থাকার পরও পদোন্নতি ও গ্রেড বৃদ্ধি করা পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অবনমন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে অবৈধভাবে গ্রেড বৃদ্ধি করে নেওয়া অতিরিক্ত অর্থ ফেরত দিতে বলা হয়েছে।
ওই পাঁচজন হলেন– সিনিয়র প্যাথলজি টেকনিশিয়ান মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, হাসপাতালের সহকারী হিসাবরক্ষক বেলাল হোসেন, ল্যাব সহকারী অহিদুল আলম, অফিস সহকারী বেলাল হোসেন ও স্যানিটারি মিস্ত্রি মুবিনুল হক।
দায়মুক্তি পাওয়া অন্যরা হলেন– লিফট অপারেটর রাকিবুল আলম, দারোয়ান মামুনুর রশিদ, চালক সিরাজ উদ্দিন, আলমগীর হোসেন, মফিজুর রহমান রানা, পিয়ন আবদুস ছবুর, সুপারভাইজার আরশাদ মোনেম খান, স্টোর সুপারভাইজার ইউছুফ আলী ও সহকারী হিসাবরক্ষক ইয়াছমিন আক্তার।
এদের মধ্যে আরশাদ মোনেম খানকে ৪৫ বছর বয়সে সুপারভাইজার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। চলতি বছরের ৩১ মে অবসরে যাবেন বলে কড়া কোনো পদক্ষেপ নেয়নি তদন্ত কমিটি। একইভাবে ৪০ বছরে ইউছুফ আলীকে স্টোর সুপারভাইজার ও ইয়াছমিন আক্তারকে সহকারী হিসাবরক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
ইয়াছমিন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হওয়ায় এবং ইউছুফের কর্মদক্ষতা বিবেচনায় অঙ্গীকারনামাও দেওয়া লাগেনি। এদিকে সিনিয়র প্যাথলজি টেকনিশিয়ান মোহাম্মদ আলাউদ্দিনের জমা দেওয়া সার্টিফিকেট জাল কিনা, সে-সংক্রান্ত জটিলতার অধিকতর তদন্তের জন্য আরেকটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।
সূত্র—এসকে/এমএফ